কলকাতা, 10 ফেব্রুয়ারি: এই মুহূর্তে রাজ্যের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় ব্যক্তিত্ব তিনি । সাধারণ মানুষ তাঁকে 'ভগবান' ভাবতে শুরু করেছে ৷ তিনি কলকাতা হাইকোর্টের বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় একের পর এক নির্দেশ, বিচারে তিনি রীতিমতো সাড়া ফেলে দিয়েছেন ৷ আদালত চত্বরে এসে বিচারপ্রার্থীরা তাঁর খোঁজ করেন ৷ তবে সারাবছর মামলা জর্জরিত বিচারপতি বইপ্রেমীও ৷ তারই প্রমাণ 46তম আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলার দশম দিনে ৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা নাগাদ মেলা প্রাঙ্গণে এলেন বিচারপতি ৷ এমনিই মেলায় ভিড় হচ্ছে ৷ তার উপর বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় আসায় তুমুল শোরগোল পড়ে গেল সাংবাদিক আর সাধারণ মানুষের মধ্যে ৷ পরিস্থিতি সামলাতে কার্যত হিমশিম খেয়ে গেল পুলিশ প্রশাসন ৷ তবে এসবকিছুর মধ্যেও তিনি বই কিনলেন, পেনের কালি কিনলেন ৷ বই পড়া, বাংলা বই পড়ার কথা বললেন ৷ আর দুর্নীতি ?
বইমেলায় একের পর এক স্টলে গেলেন বিচারপতি ৷ মাঝে ঢুকলেন সুলেখা কালির স্টলে ৷ সামনাসামনি তাঁকে দেখতে উপচে পড়ে মানুষের ভিড় ৷ কেউ তাঁকে প্রণাম করতে ব্যস্ত, কেউ বা একবারের জন্য সেলফি নিতে চায় ৷ তবে বিচারপতি এদিন অন্য মেজাজে ছিলেন না ৷ জনসাধারণের আবদার মেটানোর চেষ্টা করে গেলেন আগাগোড়া ৷ ছোট থেকে কলকাতা বইমেলায় আসেন, জানালেন বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায় ৷ এটা তাঁর কাছে একটা পার্বণের মতো ৷ সাংবাদিকদের তিনি বলেন, "কলকাতা বইমেলা আমার কাছে চতুর্দশ পার্বণ ৷ এত ভালো বাংলা বই লেখা হয়, প্রকাশ হয় ৷ আমি মনে করি, এখনকার ছাত্রছাত্রী যারা বাংলা বিমুখ, তাদের একটু বাংলা বইয়ের দিকে নজর দেওয়া দরকার ৷ আমি নিজেও প্রচুর বাংলা বই কিনি এবং পড়ি ৷"
নিজের ছোটবেলায় বইমেলার আসার কথাও এদিন বলেন মহামান্য বিচারপতি ৷ তাঁর কথায়, "ছোটবেলায় বন্ধুদের সঙ্গে বইমেলায় আসতাম ৷ এখন না-এলে মনে হয় একটা পার্বণ মিস করে গিয়েছি ৷ যেমন দুর্গাপুজোয় অন্য কোথাও থাকলে মনে হয় কলকাতায় থাকলাম না ৷" সাধারণ মানুষের কাছে বিচারপতি এখন ভগবান ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "ভারতের ভগবান দেশের সংবিধান এবং আইন ৷" দেশের বেকার সমস্যা নিয়ে বিচারপতি বলেন, "দেশের বেকার সমস্যা তো আজকের নয় ৷ বহুদিন ধরে চলে আসছে ৷"
আরও পড়ুন: আবোল তাবোলের সেঞ্চুরিতে 175 বছরে পা বেথুন স্কুলের, বইমেলায় উদযাপন গিল্ডের
বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গোপাধ্যায়ের জীবনও বহু উল্লেখযোগ্য মামলা রয়েছে ৷ সেই মামলাগুলির সঙ্গে জড়িয়ে থাকা অনেক বিষয় আছে, যা সাধারণ মানুষের জানার বাইরে ৷ আমজনতার কৌতূহল, কীভাবে ও কোন ভাবনার পথে তিনি বিচার করেন ৷ বিশেষত শিক্ষক দুর্নীতি মামলার পর এই প্রশ্নটি উঠেছে ৷ তাই "আপনি কি কোনও দিন বই লিখবেন" ? এর উত্তরে বিচারপতি বলেন, "আমার ইচ্ছে আছে ৷ আমি একটা স্মৃতিকথা লিখব ৷ সেখানে আমার জীবনের বিভিন্ন ঘটনার কথা লেখা থাকবে ৷" দুর্নীতি সম্পর্কিত কিছু কিছু কথাও থাকতে পারে, আশ্বাস দিলেন চাকরিপ্রার্থীদের 'ভগবান' ৷ তাঁর গলাতেও যেন আক্ষেপের সুর, "ভিক্টোরিয়ার কাছে যখন বইমেলা হত, তাঁর একটা আলাদা চার্ম ছিল ৷ কলকাতা তো ভুলে ভরা ৷ এখন বইমেলা যদি উত্তর 24 পরগনায় হয়, তাহলে আর কী বলব বলুন ৷" এদিন একটি-দু'টি নয়, তিন-তিনটি বই বোঝাই ব্যাগ নিয়ে গেলেন বিচারপতি । সময় পেলে আবার আসবেন বলে জানালেন ।
আরও পড়ুন: সুলেখার স্টলে স্মৃতিমেদুর বইপাগল বাঙালি !