মধ্যমগ্রাম, 2 ডিসেম্বর: ফুটবল বিশ্বকাপের (FIFA World Cup Qatar 2022) জ্বরে কাবু সারা পৃথিবী ৷ তাতে গা ভাসিয়েছে ভারতও ৷ প্রিয় দলের সমর্থনে গলা ফাটানো, রাত জেগে খেলা দেখা, এগুলো তো রয়েছেই ৷ রয়েছে হুল্লোড়, আবেগ, কান্না ৷ কখনও কখনও সেসবের আড়ালেই চাপা পড়ে যান বহু গুণী মানুষ ৷ যাঁরা হয়তো ফুটবল খেলেই বিখ্যাত হতে পারতেন ৷ কিন্তু, সেটা আর হয়ে ওঠেনি ৷ তেমনই একজন অরিন্দম ঘোষাল (Arindam Ghoshal) ৷ বছর ত্রিশের এই যুবককে একসময় খেলতে দেখা গিয়েছিল ব্রাজিলে আয়োজিত (গৃহহীনদের) ফুটবল বিশ্বকাপে ৷ সেই সময় ভারতীয় দলের হয়ে গোলরক্ষকের (Goalkeeper) ভূমিকা পালন করেছিলেন অরিন্দম ৷ সোনালী সেই সমস্ত ইতিহাস আজ অতীত ৷ ভাগ্যের নির্মম পরিহাসে অরিন্দম এখন অটোচালক ! তা বলে অবশ্য ফুটবল প্র্যাকটিস বন্ধ করেননি তিনি ৷ সেটা চালিয়ে যান নিজের মতো করেই ৷
2010 সালে গৃহহীন ফুটবল বিশ্বকাপের (Homeless Football World Cup 2010) আসর বসেছিল ফুটবলের স্বপ্নের দেশ ব্রাজিলে ! রিও দি জেনেইরোতে আয়োজিত সেই প্রতিযোগিতায় ভারতের গোলরক্ষক ছিলেন আমাদের বাংলার ছেলে অরিন্দম ৷ কিন্তু, তারপরই ঘটে যায় বিপত্তি ৷ অরিন্দমের জীবনে নেমে আসে চরম বিপর্যয় ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি জানান, "বিশ্বকাপ খেলে আসার পর প্রথম দু'বছর সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল ৷ সুনীল ছেত্রী, লিয়েন্ডার পেজের মতো খেলোয়াড়দের সঙ্গে একই মঞ্চে সংবর্ধিত হয়েছিলাম ! অতিথি করে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল বিভিন্ন অনুষ্ঠানে ৷ কিন্তু, 2012 সালে রাজস্থানে ফুটবল টুর্নামেন্ট খেলতে গিয়ে পায়ের মালাইচাকি ভেঙে তিন টুকরো হয়ে যায় ৷ চিকিৎসকরা বলেছিলেন, আর কোনও দিন বল নিয়ে মাঠে নামতে পারব না ৷ কিন্তু, আট মাস পর ফের মাঠে নামি ৷ তাতে হিতে বিপরীত হয় ৷ আমার টাকার দরকার ছিল ৷ সংসার চলছিল না ৷ ফুটবল খেলেই রোজগার হত ৷ কিন্তু, রোজগার করতে গিয়ে পায়ের আরও ক্ষতি হয় ৷ ফলে খেলা ছাড়তে হয় ৷"
আরও পড়ুন: লিফ আর্টে প্রিয় ফুটবলারদের সম্মান জ্ঞাপন আসানসোলের শিক্ষকের
প্রসঙ্গত, অরিন্দমের বাড়ি উত্তর 24 পরগনার মধ্যমগ্রামের বসুনগরে ৷ তবে, বাড়ি বলতে ঘোষালদের নিজেদের কিছু নেই ৷ এক কামরার ভাড়াবাড়িতেই মা-ছেলের সংসার ৷ সঙ্গে রয়েছে এক চিলতে রান্নাঘর ৷ ঘরের এক কোণে শোকেসের মাথায় এখনও থরে থরে সাজানো রয়েছে ট্রফি ৷ অরিন্দম জানালেন, দুর্দিনে তাঁদের পাশে দাঁড়িয়েছিলেন রাজ্যের বর্তমান খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ ৷ তিনিই অরিন্দমের জন্য একটি অটোর ব্যবস্থা করে দেন ৷ বাবার মৃত্যু আর পেশাদার ফুটবল ছাড়ার পর সেই অটো চালিয়েই সংসার চালান অরিন্দম ৷
ছেলের এই পরিণতি দেখে কষ্ট পান মা টুলু ঘোষাল ৷ কিন্তু, তিনি অসহায় ৷ তাই তাঁর কিছুই করার নেই ৷ যদিও সব শুনে এই পরিবারটির পাশে দাঁড়ানোর আশ্বাস দিয়েছেন মধ্যমগ্রাম পৌরসভার চেয়ারম্যান নিমাই ঘোষ ৷