বাদুড়িয়া, 22 মে : গ্রামে ঘুরে ঘুরে নিয়মিত করোনা আক্রান্তদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিচ্ছেন তিনি ৷ দিচ্ছেন পাশে থাকার আশ্বাস ৷ অভিভাবকের মতো করোনাবিধি মেনে চলার পরামর্শ দিতেও ভুলছেন না ৷ অতিমারির আবহে এভাবেই যেন গ্রামের সাধারণ মানুষের একজন হয়ে উঠেছেন বাদুড়িয়ার বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাস ৷ পাশে পেয়েছেন ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিক মৃণালকান্তি ভট্টাচার্যকেও ৷ তাঁকে সঙ্গে নিয়েই সংক্রমিত পরিবারগুলির দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছেন বিডিও ৷ যা সাড়া ফেলেছে বাগজোলা গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকায় ৷ বিডিও-র ভূমিকায় খুশি গ্রামের বাসিন্দারা ৷
করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ে বেসামাল গোটা দেশ ৷ পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতিও যথেষ্ট উদ্বেগজনক ৷ রাজ্যে করোনায় দৈনিক সংক্রমণ প্রায় 19 হাজার ৷ মৃত্যুর তালিকাও ক্রমশ লম্বা হচ্ছে ৷ সংক্রমণ এবং মৃত্যুর নিরিখে এই মুহূর্তে রাজ্য়ের মধ্যে শীর্ষে রয়েছে কলকাতা লাগোয়া উত্তর 24 পরগনা জেলা ৷ বৃহস্পতিবার এই জেলায় নতুন করে 4 হাজার 118 জন করোনা আক্রান্তের হদিশ মিলেছে ৷ মৃত্যু হয়েছে 37 জনের ৷
স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, সংক্রমণ এখন শহর ছাড়িয়ে থাবা বসিয়েছে গ্রামাঞ্চলেও ৷ বসিরহাট স্বাস্থ্য জেলায় দৈনিক প্রায় 100 জন সংক্রমিত হচ্ছেন করোনায় ৷ যা নিঃসন্দেহে চিন্তার বিষয় ৷ জেলার করোনা পরিস্থিতি যখন উদ্বেগজনক, তখন এক শ্রেণির মানুষও যেন ক্রমশই অমানবিক হয়ে উঠছে ৷ কখনও সংক্রমিত রোগীর পরিবারের সঙ্গে দুর্ব্যবহার বা অসহযোগিতার অভিযোগ, আবার কখনও করোনা আক্রান্ত রোগীর পরিবারকে একঘরে করে রাখার অভিযোগ সামনে আসছে ৷ তবে, এর উল্টোটাও রয়েছে ৷ বিপদের সময় করোনা আক্রান্ত রোগীদের এবং তাঁদের পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছে বিভিন্ন ক্লাব ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ৷ এ সবের মধ্যেই নজর কেড়েছেন বাদুড়িয়ার বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাস ৷ প্রশাসনিক দায়িত্ব সামলানোর পাশাপাশি রোজ নিয়ম করে করোনা আক্রান্ত রোগীদের বাড়ির দুয়ারে পৌঁছে যাচ্ছেন তিনি ৷ খোঁজখবর নিচ্ছেন সংক্রমিত রোগীর স্বাস্থ্যের ৷ দিচ্ছেন অভিভাবকের মতো পাশে থাকার আশ্বাস।
বাদুড়িয়ার বাগজোলা, রুদ্রপুর, খাসপুর, রামচন্দ্রপুর, চণ্ডীপুর প্রভৃতি গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা আক্রান্ত হয়েছেন করোনায় ৷ মৃদু উপসর্গ থাকায় বাড়িতেই আইসোলেশনে রয়েছেন তাঁরা ৷ শুক্রবার ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে সঙ্গে নিয়ে বাগজোলা গ্রামে পৌঁছে যান বিডিও ৷ সেখানে আক্রান্তদের পরিবারের সদস্য-সহ এবং গ্রামের সকলকেই অযথা করোনা নিয়ে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি ৷ এই বিপদে প্রশাসন যে পাশে রয়েছে, তার বার্তাও দেওয়া হয় বিডিও-র তরফে ৷ তাঁর এই ভূমিকায় খুশি গ্রামের বাসিন্দারা।
রিজিয়া বিবি নামে গ্রামেরই এক বৃদ্ধা বলেন, ‘‘করোনা হলেই মানুষ মারা যাবে, আগে এমন একটা ধারণা ছিল আমাদের মনে ৷ কিন্তু বিডিও ম্যাডাম এসে গ্রামের বাসিন্দাদের আশ্বস্ত করলেন ৷ বললেন, করোনা নিয়ে ভয়ের কোনও কারণ নেই ৷ ওঁর কথায় সাহস পেলাম আমরা ৷ তিনি এই বিপদের দিনে গরিব মানুষের দুয়ারে খাবার পৌঁছে দেওয়ারও প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন ৷ তিনি আমাদের কাছে মানুষ রূপে ভগবান।’’
একই সুর শোনা গিয়েছে গ্রামের আরও এক বাসিন্দা আজহারউদ্দিনের গলাতেও ৷ তিনি বলেন, ‘‘করোনা নিয়ে প্রথমে গ্রামের বাসিন্দাদের মধ্যে আতঙ্ক কাজ করছিল ৷ সবার ধারণা ছিল, এই রোগের কোনও চিকিৎসা নেই ৷ কিন্তু, বিডিও ম্যাডাম গ্রামে এসে আশ্বস্ত করলেন আমাদের ৷ বললেন, ভয়ের কোনও কারণ নেই ৷ প্রতিশ্রুতি দিলেন কেউ আক্রান্ত হলে তাঁর চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত করা হবে ৷ তাঁর আশ্বাসে স্বস্তি পেয়েছি আমরা ৷’’
আরও পড়ুন : করোনা আক্রান্তদের জন্য মালদায় চালু হল জেলার প্রথম ক্লাব সেফ হোম
তবে, যাঁকে ভগবানের সঙ্গে তুলনা করছেন গ্রামের বাসিন্দারা, সেই বিডিও সুপর্ণা বিশ্বাস নিজে কিন্তু এই নিয়ে মাতামাতি করতে নারাজ ৷ তিনি বলছেন, ‘‘প্রশাসনিক আধিকারিক ছাড়াও সবার প্রথমে আমি একজন মানুষ ৷ এই বিপদের সময় মানুষ হিসাবে মানুষের পাশে থাকাটাই আমাদের কর্তব্য ৷ গ্রামের বেশ কয়েকটি পরিবারের সদস্যরা করোনায় আক্রান্ত হওয়ায় তাঁদের স্বাস্থ্যের খোঁজখবর নিলাম আমরা ৷ বললাম, আতঙ্কিত হবেন না ৷ প্রশাসন সব সময় আপনাদের পাশে রয়েছে ৷ ওঁরা আমাদের কথায় আশ্বস্ত হয়েছেন দেখলাম ৷’’