দেগঙ্গা, 9 অগাস্ট : দিন দিন বাড়ছে কোরোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ৷ সেই সঙ্গে বাড়ছে কোরোনায় আক্রান্ত ও তাঁদের পরিবারের উপর হেনস্থার ঘটনা ৷ প্রশাসনের তরফে একাধিকবার নিষেধ করা সত্ত্বেও কেউ কথা কানে তুলছে না ৷ আবারও এরকমই এক ঘটনা সামনে এল। কিন্তু এবারের চিত্রটা একটু আলাদা ৷ বন্ধুর বাবার শেষকৃত্যে গেছিলেন 4 যুবক ৷ পরে গ্রামে ফিরতেই হেনস্থার শিকার হতে হয় তাঁদের ৷ একটানা 11 দিন ধরে জঙ্গলে দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা ৷
ঘটনাস্থান উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর এলাকা ৷ সেখানকার সুশীল ঘোষ নামে বছর 75-এর এক বৃদ্ধ জ্বরে আক্রান্ত হন ৷ তাঁকে বারাসতের একটি হাসপাতালে ভরতি করা হয়েছিল ৷ তাঁর লালারসের নমুনা পরীক্ষা করা হলে রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে ৷ পরে সেখান থেকে তাঁকে RG কর হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয় ৷ দ্বিতীয়বার কোরোনা পরীক্ষা করা হলে তাঁর রিপোর্ট নেগেটিভ আসে ৷ কিন্তু, হাসপাতালেই ওই বৃদ্ধের মৃত্যু হয় ৷
হাসপাতাল থেকে সুশীলবাবুর দেহ তাঁর পরিবারের হাতে তুলে দেওয়া হয় ৷ মরদেহ নিয়ে আসা হয় গ্রামে ৷ এরপরই বাধে বিপত্তি ৷ শ্মশানে মরদেহ নিয়ে যাওয়া হলেও দাহ করার জন্য কাউকে পাওয়া যায়নি। প্রায় 12 ঘণ্টা মৃতদেহ পড়ে থাকার পর এগিয়ে আসেন স্থানীয় যুবক বিশ্বনাথ দত্ত, কৌশিক দাশগুপ্ত-সহ চারজন । তাঁরাই সৎকার করেন ৷ কিন্তু অভিযোগ, কাজ শেষে বাড়ি ফেরার পর এলাকার লোকজন আর তাঁদের গ্রামে ঢুকতে দেয়নি ৷ তাঁদের লাঠি নিয়ে তাড়া করে গ্রামছাড়া করা হয়েছে । এপ্রসঙ্গে স্থানীয়দের বক্তব্য, ওই চার যুবক কোরোনা রোগীর দেহ দাহ করেছেন । তাই, তাঁদের গ্রামে ঢুকতে দেওয়া হবে না ।
গ্রামের একাংশ ফতোয়া জারি করে, ওই চার যুবককে থাকতে হবে গ্রাম থেকে দূরে জঙ্গলে । সেইমতো বর্তমানে জঙ্গলে একটি জলা জায়গায় ত্রিপলের অস্থায়ী ঘরে থাকছেন তাঁরা । সেখানে নেই বিদ্যুৎ, পানীয় জল । রয়েছে মশার উপদ্রব । কার্যত অসহায়ভাবে টানা 11 দিন জঙ্গলে রয়েছেন ওই চার যুবক । তাঁদের পরিবারের সদস্যরা কোনওরকমে খাবার পৌঁছে দিচ্ছেন ।
অন্যদিকে, প্রশাসনের তরফেও গ্রাম থেকে বিতাড়িত ওই চার যুবককে ঘরে ফেরানোর কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ।