খড়দা, 19 নভেম্বর: বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে একই পরিবারের চারজনের পচা গলা দেহ উদ্ধার করল পুলিশ। এর মধ্যে পরিবারের কর্তা ও কাপড় ব্যবসায়ী বৃন্দাবন কর্মকারের দেহ-ও রয়েছে। বাকি তিনজন হলেন বৃন্দাবনের স্ত্রী, ষোলো বছরের মেয়ে এবং আট বছরের ছেলে। মর্মান্তিক এই ঘটনায় রবিবার তীব্র চাঞ্চল্য ছড়িয়েছে খড়দার মধুসূদন মুখার্জী রোড এলাকায়। খবর পেয়ে পুলিশ এসে বন্ধ ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে ওই চারজনের দেহ উদ্ধার করে ৷
পুলিশ সূত্রে খবর, বৃন্দাবনের স্ত্রী দেবশ্রী বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছিলেন। স্ত্রীর পরকীয়ার কথা জানতে পেরে তাঁকে সেই সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসতে বলেন তিনি। কিন্তু, অবৈধ সম্পর্ক থেকে আর বেরিয়ে আসতে পারেননি বৃন্দাবনের স্ত্রী। তার জেরে আক্রোশে স্ত্রী, দুই সন্তানকে কুপিয়ে খুন করে পরে তিনি নিজেও গলায় দড়ি দিয়ে আত্মঘাতী হন বলে জানা গিয়েছে। গৃহকর্তা বৃন্দাবনের ঝুলন্ত মৃতদেহের পাশ থেকে একটি সুইসাইড নোট-ও পাওয়া গিয়েছে। যেখানে স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্কের কথা উল্লেখ রয়েছে।
তা থেকে পুলিশেরও প্রাথমিকভাবে অনুমান, তিনি স্ত্রী এবং তাঁর দুই সন্তানকে শ্বাসরোধ করে খুনের পর নিজেও আত্মঘাতী হয়েছেন। তবে, অন্য কোনও কারণ আছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই বিষয়টি আরও পরিষ্কার হবে বলে ধারণা ব্যারাকপুর কমিশনারেটের পুলিশ কর্তাদের। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, খড়দার ওই ফ্ল্যাটে বছর দেড়েক আগে স্ত্রী, দুই সন্তানকে নিয়ে ভাড়া আসেন ব্যবসায়ী বৃন্দাবন কর্মকার। খড়দার আদর্শ পল্লীতে ব্যবসায়ীর পৈতৃক বাড়ি ছিল আগে।
পরে সেটি বিক্রি করে দিয়ে পরিবার নিয়ে তিনি চলে আসেন খড়দার বলরাম হাসপাতালের কাছে ভাড়া নেওয়া ওই ফ্ল্যাটে। ব্যারাকপুরের চিড়িয়া মোড়ের কাছে তাঁর একটি কাপড়ের দোকান রয়েছে। মিশুকে এবং পাড়ার লোকজনের সঙ্গে সদ্ব্যবহার রয়েছে কর্মকার পরিবারের। তা সত্ত্বেও মর্মান্তিক এই ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে সকলকে। গত দু'দিন ধরে বৃন্দাবন ও তাঁর পরিবারের লোকজনকে ওই ফ্ল্যাট থেকে বেরতে দেখা যায়নি। শেষ দেখা গিয়েছিল বৃহস্পতিবার।
সেদিন স্থানীয় একটি রুটির দোকানে রুটি আনতে গিয়েছিলেন বৃন্দাবন। তারপর থেকে আর দেখা মেলেনি কর্মকার পরিবারকে। এরই মধ্যে রবিবার সকালে বন্ধ ফ্ল্যাট থেকে দুর্গন্ধ পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলরকে বিষয়টি জানান এলাকাবাসীরা। তাঁর থেকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছয় খড়দা থানার পুলিশ। আসেন ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) আশিস মৌর্য। এরপর ফ্ল্যাটের দরজা ভেঙে কর্মকার দম্পতি এবং তাঁদের দুই সন্তানের দেহ উদ্ধার করে পাঠানো হয় ময়নাতদন্তের জন্য।
পুলিশ সূত্রের খবর, বৃন্দাবনের স্ত্রী দেবশ্রী, তাঁর মেয়ে দেবলীনা এবং আট বছরের ছেলের নিথর দেহ পড়ে ছিল ঘরের মেঝেতে। পাশের একটি ঘরে ঝুলছিলেন বৃন্দাবন। সেখান থেকেই মিলেছে সুইসাইড নোটটি। তবে, সেটি বৃন্দাবনের হাতের লেখা কি না, তা স্পষ্ট নয় পুলিশের কাছে। সেই হাতের লেখা পরীক্ষা করে দেখা হবে। এদিকে, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে আসেন খড়দা পৌরসভার 19 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর মৌসুমী পাল।
তিনি বলেন, "ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। ঘটনাটি শোনার পর থেকে মর্মাহত"। অন্যদিকে, এই বিষয়ে ব্যারাকপুর পুলিশ কমিশনারেটের ডিসি (সেন্ট্রাল) আশিস মৌর্য বলেন, "ফ্ল্যাটের দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। ফলে, বাইরে থেকে ভিতরে প্রবেশ করার সম্ভবনা খুবই কম। খুন না অন্যকিছু তা ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই পরিষ্কার হবে। সুইসাইড নোট মিলেছে ঘর থেকে। সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে । প্রয়োজনে নিহতের পরিবারের সঙ্গেও কথা বলে বিষয়টি নিয়ে। তদন্তের স্বার্থে এখনই সবকিছু বলা সম্ভব নয়। সমস্ত দিকই আমরা খতিয়ে দেখছি।"
আরও পড়ুন: