দেগঙ্গা, 18 এপ্রিল : ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে প্রাণ হারানো পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিকের পরিচয় মিলল । ম্যাঙ্গালুরুতে ম্যানহোল পরিষ্কার করতে গিয়ে বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যু হয় তাঁদের (Migrant Workers Died in Karnataka) । অসুস্থ হয়েছেন আরও চারজন । তাঁদের চিকিৎসা চলছে স্থানীয় হাসপাতালে । মৃতদের পরিববারকে দু'লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে ৷
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃতদের নাম মহম্মদ ওমর ফারুক, মহম্মদ সামিউল ইসলাম, নিজামুদ্দিন সাহাজি, সারাফাত আলি ও মিরাজুল ইসলাম । এরা সকলেই উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গার বাসিন্দা । ঘটনা জানার পর থেকেই গ্রামে নেমে এসেছে শোকের ছায়া । পরিবারের পাশে দাঁড়াতে সোমবার নিহত শ্রমিকদের বাড়িতে যান স্থানীয় জেলাপরিষদের সদস্য তথা তৃণমূল নেতা একেএম ফারহাদ । পরিবারকে সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি প্রশাসনিক সাহায্যের আশ্বাসও দেন তিনি । সূত্রের খবর, ভিনরাজ্য থেকে মৃতদেহ দেগঙ্গায় ফিরিয়ে আনতে ইতিমধ্যে জোর তৎপরতা শুরু হয়েছে প্রশাসনের তরফে ৷ এদিকে মৃতদের পরিববারকে দু'লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা জানানো হয়েছে রাজ্য় সরকারের পক্ষ থেকে ৷
আরও পড়ুন : Kolkata Metro services disrupted: শোভাবাজার পেরোতেই সুড়ঙ্গে থমকাল মেট্রো, আতঙ্কে যাত্রীরা
জানা গিয়েছে, প্রায় আটমাস আগে রোজগারের আশায় কর্নাটকের ম্যাঙ্গালুরুতে কাজে গিয়েছিলেন দেগঙ্গা থেকে বেশ কয়েকজন পরিযায়ী শ্রমিক। তাঁরা একটি কোম্পানির হয়ে মাছের প্যাকেজিংয়ের কাজ করতেন সেখানে । সবকিছু ঠিকঠাকভাবেই চলছিল। কিন্তু হঠাৎই ছন্দপতন ঘটে শ্রমিকদের জীবনে । অভিযোগ, কোম্পানির জোরাজুরিতে কর্মস্থলের পাশেই একটি ম্যানহোল পরিষ্কার করতে নেমেছিলেন কয়েকজন শ্রমিক । কিন্তু, সেখানেই বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে প্রাণ হারান ওই পাঁচ শ্রমিক । আহত হন আরও চারজন । আহতদের কোনওরকমে ম্যানহোলের ভিতর থেকে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় হাসপাতালে । সেখানেই বর্তমানে চিকিৎসাধীন তাঁরা । তবে, তাঁদের শারীরিক অবস্থা যথেষ্ট সঙ্কটজনক বলেই খবর হাসপাতাল সূত্রে। রবিবার রাতে মর্মান্তিক এই খবর দেগঙ্গায় পৌঁছাতেই কান্নায় ভেঙে পড়েন নিহতদের পরিজন । এতবড় ঘটনা কিভাবে ঘটল, তা কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছেন না পরিবারের লোকেরা । পিছনে কারও গাফিলতি থাকতে পারে বলে সন্দেহ তাঁদের। সেই কারণে ঘটনাটির তদন্তের দাবিও জানিয়েছেন নিহতের পরিবার ।
এই বিষয়ে মৃত ওমর ফারুকের বাবা সিএফ আলি বলেন, "ফোন করে ছেলের মৃত্যুর কথা জানানো হয় ম্যাঙ্গালুরু থেকে। বলা হয় বিষাক্ত গ্যাসে দমবন্ধ হয়ে মারা গিয়েছে সে। স্ত্রী ছাড়াও ফারুকের একটি সন্তান রয়েছে। প্রশাসন সহযোগিতা করলে হয়ত পরিবারটা বেঁচে যেতে পারে। সেদিকেই তাকিয়ে রয়েছি আমরা"।
আরও পড়ুন : কাজ না পেয়ে ফের ভিন রাজ্যে নদিয়ার শ্রমিকরা
নিহতের ফারুকের প্রতিবেশী মহম্মদ মশিউর রহমান বলেন, "যেটুকু জানতে পেরেছি ম্যানহোলটি অত্যন্ত গভীর ছিল । জীবনের ঝুঁকি থাকা সত্ত্বেও শুধুমাত্র কোম্পানির মুখের দিকে তাকিয়ে ওরা সকলে ম্যানহোলে নেমেছিল বর্জ্য় পদার্থ পরিষ্কার করতে। এরপরই ঘটে মর্মান্তিক এই ঘটনা । দেহ আনতে ইতিমধ্যে দেগঙ্গা থেকে ম্যাঙ্গালুরুতে রওনা দিয়েছেন অনেকে । আমরা নিহতের পরিবারের পাশে রয়েছি ৷"
এদিকে নিহতদের পরিবারের সঙ্গে দেখা করার পর স্থানীয় জেলাপরিষদের সদস্য ও তৃণমূল নেতা একেএম ফারহাদ বলেন, "ঘটনাটি অত্যন্ত বেদনাদায়ক। প্রশাসন এবং সরকার নিহতদের পরিবারের পাশে সবসময় রয়েছে। দেহ পশ্চিমবঙ্গে ফেরাতে যা যা সাহায্যের প্রয়োজন, তা আমরা সবটাই করব ৷"
প্রসঙ্গত, ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে মাটি ধসে এর আগে উত্তর 24 পরগনার অশোকনগরে তিন পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছিল । সেই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতে আবারও পাঁচ পরিযায়ী শ্রমিকের মৃত্যু হল ভিনরাজ্যে কাজে গিয়ে।