বসিরহাট, 8 অক্টোবর : প্রতিবছর নিষ্ঠার সঙ্গে উমার বোধন হয় ৷ অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুর (Biswanath Basu) গ্রামের বাড়ি বসিরহাটের আরবেড়িয়ায় এই বছরও তার অন্যথা হচ্ছে না ৷ এই পুজোর জন্য মুখিয়ে থাকেন গ্রামবাসী । অভিনেতার পারিবারিক এই পুজোয় অংশ না নিলে মন খারাপ হয় তাঁদের । বিশ্বনাথও নিয়ম করে প্রতিবছর সামিল হন বাড়ির পুজোতে ৷ ব্যস্ততার মধ্যেও পুজোর ক'টা দিন পরিবার এবং গ্রামবাসীর সঙ্গে আনন্দ ভাগ করে নিতে ভোলেন না তিনি । আজও বসু পরিবারের প্রতিমা নিরঞ্জন হয় সবার আগে । তারপরই গ্রামের বাকি বনেদি বাড়ির পুজোর প্রতিমা বিসর্জন হয় একে একে । এই রীতি চলে আসছে 370 বছরেরও বেশি সময় ধরে । গ্রামবাসীরাও এই নিয়ম মেনে চলছেন অক্ষরে অক্ষরে ।
প্রায় চারশো বছর আগে রাজনারায়ণ বসুর হাত ধরে গ্রামের পৈতৃক বাড়িতে এই পুজোর সূচনা হয়েছিল । তখন গরুর গাড়িতে করে বড় জালা ভর্তি করে গঙ্গার জল নিয়ে আসা হত । সেই গঙ্গার জল দিয়েই বোধন করা হত উমাকে । এখন অবশ্য গরুর গাড়িতে করে নয়, গঙ্গার জল নিয়ে আসা হয় ভ্যানে করে । বংশ পরাম্পরা মেনে আজও সেই রীতি বহন করে চলেছেন অভিনেতার পরিবার । আগে পুজোর সময় অগণিত পাঁঠা বলি দেওয়া হত । এখন পাঁঠার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে ভেড়া বলিও । তবে সংখ্যায় তা তুলনামূলক কম ।
প্রতিপদের তৃতীয়া থেকেই ঘট বসে যায় ঠাকুরদালানে । পাঁচদিন ধরে চলে সেই ঘট পুজো । ষষ্ঠীর দিন ঠাকুর দালানে প্রবেশ করানো হয় উমাকে । সেদিনই ঠাকুরদালানের সামনে বেলতলায় বোধন শুরু হয় উমার । এই বসুর পরিবারের পুজোর বৈশিষ্ট্য হল, এক চালার প্রতিমায় সাবেকি আনার ছোঁয়া । ইতিমধ্যেই সেজে উঠেছে বসুদের পৈতৃক বাড়ির ঠাকুরদালান । পড়েছে চুনকাম ও রংয়ের প্রলেপও । ঠাকুরদালানের ঠিক সামনে প্যান্ডেলের কাজও চলছে জোরকদমে । উমাকে বরণ করে নিতে প্রস্তুতির কোনও খামতি রাখা হচ্ছে না ।
এই বাড়ির প্রতিমা নিরঞ্জন হয় সেই প্রাচীন প্রথা মেনেই ৷ দশমীর দিন বেয়ারার কাঁধে চেপে উমা নিরঞ্জনের জন্য রওনা হয় ইছামতির দিকে । নিরঞ্জনে সবার প্রথমে থাকে বসু বাড়ির প্রতিমা । তার পিছনে থাকে গ্রামের বাকি বনেদি বাড়ির প্রতিমা । এরপর নিয়ম মেনে বসু বাড়ির প্রতিমা ইছামতিতে নিরঞ্জন করা হয় সবার আগে ।
বিশ্বনাথের মা ছায়া বসু বলেন, "আগের মতো পাঁঠা বলি না হলেও পুজোর ঐতিহ্য বজায় রয়েছে । রীতিনীতি মেনে পুজোর সব কিছু আয়োজিত হয় এখানে । করোনা আবহে গতবছর আত্মীয়-স্বজনরা গ্রামের পারিবারিক এই পুজোয় সেভাবে সামিল হতে না পারলেও এবছর তাঁরা অংশ নিতে পারবেন বলে আশা করছি ৷"
বাড়ির পুরোহিত অরূপ ভট্টাচার্য বলেন, "এই বাড়ির পুজোর যথেষ্ট সুনাম রয়েছে ৷ দু'বছর আগে এই পুজো পুরষ্কারও জিতেছিল । বসু পরিবারের পুজোয় গ্রামবাসীরা সকলেই অংশ নেন ৷ এই পুজো না থাকলে গ্রামের অন্যান্য পুজো অস্তিত্ব হারাবে । সকলেই এই পুজোর দিকে তাকিয়ে থাকেন । পুজোর ক'টা দিন একে অপরের সঙ্গে গ্রামবাসী আনন্দ ভাগ করে নেন ৷ অভিনেতা বিশ্বনাথ বসুও সামিল হন পুজোর সেই আনন্দ উপভোগ করতে ৷"
আরও পড়ুন : Durga Puja : প্যানডেমিক পরিস্থিতিতে দেবীদুর্গার নিরাপদ ছত্রছায়া চোরবাগান সর্বজনীন মণ্ডপে