বারাসত, 23 সেপ্টেম্বর : দত্তপুকুরে ব্যক্তি খুনে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে আজ বারাসত আদালতে বিক্ষোভ দেখায় এলাকার বাসিন্দারা । প্ল্যাকার্ড হাতে চলে স্লোগানও । তুমুল বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে ওঠে আদালত চত্বর । সেই বিক্ষোভে হাজির ছিলেন খুন হওয়া দেবানন্দ মণ্ডলের পরিবারের সদস্যরাও । ছিলেন স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য শুভেন্দু নস্কর । তাঁর নেতৃত্বেই এই বিক্ষোভ মিছিল হয় ৷ আন্দোলনকারীদের দাবি নৃশংস এই খুনের ঘটনায় মৃতের স্ত্রী বৃহস্পতি মণ্ডল, তার প্রেমিক গৌতম দে ও ছেলে সৌমেনের ফাঁসি হোক ।
১৫ সেপ্টেম্বর দত্তপুকুরের বেরো নারায়ণপুর এলাকা থেকে দেবানন্দ মণ্ডল (৪২) নামে ওই ব্যক্তির রক্তাক্ত দেহ উদ্ধার হয় । মৃতের গলায় গভীর ক্ষতের চিহ্ন ছিল । তা দেখে পুলিশের অনুমান, ধারালো কিছু দিয়ে ওই ব্যক্তিকে খুন করা হয়েছে । পুলিশ তদন্ত করতে গিয়ে জানতে পারে খুনের ঘটনায় বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক রয়েছে । নিহতের স্ত্রী বৃহস্পতি মণ্ডলের সঙ্গে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্ক ছিল দেবানন্দের বন্ধু গৌতম দে-র । সেই সম্পর্কের কথা জানতে পারেন দেবানন্দ । এই নিয়ে স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে প্রায়ই ঝামেলা লেগে থাকত । এরপরই স্বামীকে সরাতে প্রেমিকের সঙ্গে মিলে খুনের ছক কষে স্ত্রী বৃহস্পতি । তাতে সামিল হয় ছেলে সৌমেনও । ১৫ সেপ্টেম্বর বাড়ি থেকে দেবানন্দ-কে ডেকে নিয়ে যায় বন্ধু গৌতম । তারপর থেকে আর কোনও খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না তাঁর ।
পরের দিন সকালে বারাসত শহর সংলগ্ন দত্তপুকুরের বেরো নারায়ণপুর এলাকার একটি নালা থেকে ওই ব্যক্তির দেহ উদ্ধার করে পুলিশ । দেহটি কাদার মধ্যে পড়ে ছিল । গলায় ছিল গভীর ক্ষত চিহ্ন । 12 ঘণ্টার মধ্যেই খুনের কিনারা করে দত্তপুকুর থানার পুলিশ । প্রথমে নিহতের স্ত্রীর প্রেমিক গৌতমকে আটক করে শুরু হয় জিজ্ঞাসাবাদ । এরপর আটক করা হয় মৃতের স্ত্রী বৃহস্পতি ও ছেলে সৌমেনকে । তিনজনকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতেই খুনের কথা কবুল করে অভিযুক্তরা । গ্রেপ্তার করা হয় ওই তিনজনকে ।
খুনের বিষয়টি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে বিভিন্ন মহলে । অনেকে এই খুনের ঘটনার সঙ্গে মনুয়া কাণ্ডের ছায়াও দেখতে পায় । এদিকে, সাতদিনের পুলিশি হেপাজত কাটিয়ে আজ দুপুরে ফের খুনের ঘটনায় ধৃত তিনজনকে পেশ করা হয় বারাসত আদালতে । তার আগে অভিযুক্তদের ফাঁসির দাবিতে প্ল্যাকার্ড হাতে বিক্ষোভ ও স্লোগানে মুখরিত হয়ে উঠে আদালত চত্বর। এই বিষয়ে স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য ও এলাকার বাসিন্দা শুভেন্দু নস্কর বলেন, "নিরীহ দেবানন্দ মণ্ডলকে যেভাবে পরিকল্পনা করে খুন করা হয়েছে তাতে বৃহস্পতি মণ্ডল ও তার প্রেমিক গৌতম দে ও ছেলে সৌমেনের ফাঁসিই হওয়া উচিত। সমাজে যাতে এই ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সেই বার্তা দিতেই আজ আমরা আদালত চত্বরে স্লোগান ও বিক্ষোভে সামিল হয়েছি ।"
এদিকে, আন্দোলনে হাজির হয়ে নিহতের দাদা প্রেমানন্দ মণ্ডলও ভাইয়ের খুনিদের ফাঁসির দাবিতে সরব হন।তিনি বলেন, "ওদের কঠোর শাস্তি চাই। দীর্ঘদিন ধরেই ভাইকে খুনের ষড়যন্ত্র করছিল ওরা। পরিকল্পনা করেই খুন করা হয়েছে দেবানন্দকে। তাই খুনি ওই তিনজনের ফাঁসি চাই। "