ETV Bharat / state

350 বছরের বুড়িমার পুজোয় শুধু ঐতিহ্য নয়, রয়েছে সম্প্রীতির ছোঁয়াও

প্রায় 350 বছর আগে কৃষ্ণনগর থেকে নৌকা বিহারে বেরিয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র । পছন্দ হয় দত্তপুকুরের শিবালয় এলাকা । তারপর সেখানেই একটি দালান বাড়ি তৈরি করে । সেখানেই আচার রীতি মেনে শুরু হয় বুড়িমার পুজো । পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্রের নাতি শিবচন্দ্রের হাত ধরে এই পুজো চলতে থাকে ।

বুড়িমার পুজো
author img

By

Published : Sep 29, 2019, 11:31 AM IST

দত্তপুকুর, 29 সেপ্টেম্বর : কৃষ্ণনগর থেকে নৌকা বিহারে এসে বর্তমান দত্তপুকুরে শুরু করেছিলেন বুড়িমার দুর্গাপুজো । কেটে গেছে 350 বছর । কিন্তু অটুট বুড়িমার পুজোর ঐতিহ্য । নিয়ম মেনে আজও বুড়িমার পুজো শুরু হওয়ার পরই এলাকার অন্যান্য পুজো শুরু হয় । শুধু তাই নয়, বিসর্জনের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম মানা হয় । এছাড়াও রয়েছে নানারকম বিশেষত্ব ।

প্রায় 350 বছর আগে কৃষ্ণনগর থেকে নৌকা বিহারে বেরিয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র । পছন্দ হয় দত্তপুকুরের শিবালয় এলাকা । তারপর সেখানেই একটি দালান বাড়ি তৈরি করেন । সেখানেই আচার রীতি মেনে শুরু হয় বুড়িমার পুজো । পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্রের নাতি শিবচন্দ্রের হাত ধরে এই পুজো চলতে থাকে । এই বুড়িমার মূর্তির গড়ন আর পাঁচটা দুর্গা প্রতিমার মতো নয় । এখানে দুর্গা নৃসিংহ রূপে পুজিত হন । প্রতিমার দুটি হাত সামনে থাকে । আর বাকি আটটি হাত লুকোনো থাকে চুলের মধ্যে । মায়ের বাহন এখানে সিংহ নয়, ঘোড়া । তবে তার কেশর আছে ।

পুজোর রীতিতেও রয়েছে বিশেষত্ব । এখানে দেবীর বোধন কৃষ্ণপক্ষে হয় । তারপর নবমী পর্যন্ত চলে চণ্ডীপাঠ । বুড়িমার পুজো শুরু হলেই এলাকার অন্যান্য জায়গায় দুর্গাপুজো শুরু হয় । আবার প্রতিমা নিরঞ্জনের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম পালন করা হয় । অর্থাৎ, বুড়িমার নিরঞ্জনের পরই এলাকার অন্যান্য প্রতিমার নিরঞ্জন হয় ।

বুড়িমার পুজোয় শুধু ঐতিহ্য নেই । লুকিয়ে রয়েছে সম্প্রীতিও । মানুষ মুখে শোনা যায়, পুজো চলাকালীন এলাকারই এক মুসলমান ব্যক্তি বুড়িমার দর্শন পেয়েছিলেন । তারপর অজ্ঞান হয়ে যান তিনি । তখন থেকে নিরঞ্জনের দিন এলাকার ওই মুসলমান পরিবারের বাড়ির সামনে বুড়িমাকে রাখা হয় । ওই মুসলমান পরিবারের সদস্যরা বুড়িমার দর্শন করে । তারপর নিরঞ্জন হয় বুড়িমার ।

রাজা শিবচন্দ্র রায়ের বর্তমান চার শরিকের হাতেই দত্তপুকুরের শিবালয়ের বুড়িমার পুজোর দায়ভার রয়েছে । এই চার শরিকের মধ্যে রয়েছেন রাজ বংশের ষষ্ঠ পুরুষ ভৃকুরাম রায়, তপন রায়, বাদল রায় ও বংশের দুই মেয়ে । রায় বংশের এই শরিকরাই বুড়িমার পুজোর জন্য বড় মাপের মন্দির তৈরি করেছেন । বলি দেওয়ার জন্য আলাদা জায়গাও করা হয়েছে । চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনেই রথযাত্রার দিনেই মায়ের কাঠামো পুজো হয় ।

দত্তপুকুর, 29 সেপ্টেম্বর : কৃষ্ণনগর থেকে নৌকা বিহারে এসে বর্তমান দত্তপুকুরে শুরু করেছিলেন বুড়িমার দুর্গাপুজো । কেটে গেছে 350 বছর । কিন্তু অটুট বুড়িমার পুজোর ঐতিহ্য । নিয়ম মেনে আজও বুড়িমার পুজো শুরু হওয়ার পরই এলাকার অন্যান্য পুজো শুরু হয় । শুধু তাই নয়, বিসর্জনের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম মানা হয় । এছাড়াও রয়েছে নানারকম বিশেষত্ব ।

প্রায় 350 বছর আগে কৃষ্ণনগর থেকে নৌকা বিহারে বেরিয়েছিলেন রাজা কৃষ্ণচন্দ্র । পছন্দ হয় দত্তপুকুরের শিবালয় এলাকা । তারপর সেখানেই একটি দালান বাড়ি তৈরি করেন । সেখানেই আচার রীতি মেনে শুরু হয় বুড়িমার পুজো । পরবর্তীকালে কৃষ্ণচন্দ্রের নাতি শিবচন্দ্রের হাত ধরে এই পুজো চলতে থাকে । এই বুড়িমার মূর্তির গড়ন আর পাঁচটা দুর্গা প্রতিমার মতো নয় । এখানে দুর্গা নৃসিংহ রূপে পুজিত হন । প্রতিমার দুটি হাত সামনে থাকে । আর বাকি আটটি হাত লুকোনো থাকে চুলের মধ্যে । মায়ের বাহন এখানে সিংহ নয়, ঘোড়া । তবে তার কেশর আছে ।

পুজোর রীতিতেও রয়েছে বিশেষত্ব । এখানে দেবীর বোধন কৃষ্ণপক্ষে হয় । তারপর নবমী পর্যন্ত চলে চণ্ডীপাঠ । বুড়িমার পুজো শুরু হলেই এলাকার অন্যান্য জায়গায় দুর্গাপুজো শুরু হয় । আবার প্রতিমা নিরঞ্জনের ক্ষেত্রেও এই একই নিয়ম পালন করা হয় । অর্থাৎ, বুড়িমার নিরঞ্জনের পরই এলাকার অন্যান্য প্রতিমার নিরঞ্জন হয় ।

বুড়িমার পুজোয় শুধু ঐতিহ্য নেই । লুকিয়ে রয়েছে সম্প্রীতিও । মানুষ মুখে শোনা যায়, পুজো চলাকালীন এলাকারই এক মুসলমান ব্যক্তি বুড়িমার দর্শন পেয়েছিলেন । তারপর অজ্ঞান হয়ে যান তিনি । তখন থেকে নিরঞ্জনের দিন এলাকার ওই মুসলমান পরিবারের বাড়ির সামনে বুড়িমাকে রাখা হয় । ওই মুসলমান পরিবারের সদস্যরা বুড়িমার দর্শন করে । তারপর নিরঞ্জন হয় বুড়িমার ।

রাজা শিবচন্দ্র রায়ের বর্তমান চার শরিকের হাতেই দত্তপুকুরের শিবালয়ের বুড়িমার পুজোর দায়ভার রয়েছে । এই চার শরিকের মধ্যে রয়েছেন রাজ বংশের ষষ্ঠ পুরুষ ভৃকুরাম রায়, তপন রায়, বাদল রায় ও বংশের দুই মেয়ে । রায় বংশের এই শরিকরাই বুড়িমার পুজোর জন্য বড় মাপের মন্দির তৈরি করেছেন । বলি দেওয়ার জন্য আলাদা জায়গাও করা হয়েছে । চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনেই রথযাত্রার দিনেই মায়ের কাঠামো পুজো হয় ।

Intro:৩৫০ বছরের প্রাচীন দত্তপুকুরের বুড়িমার পূজোয় আজ‌ও প্রাচীন ঐতিহ্য অটুট!রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলের প্রাচীন এই পূজোর আচার ও রীতি বহন করে চলেছে রাজার বংশধররা!এই পূজো শুরু কিংবা বিসর্জন না হলে দত্তপুকুর অঞ্চলের কোন‌ও পূজো যেমন শুরু হয়না,তেমন‌ই ভাসান হয়না মা দূর্গার!সেই প্রথা এখনও চলছে নিয়ম মেনে!Body:৩৫০ বছরের দত্তপুকুরের বুড়িমার পূজোয় আজ‌ও প্রাচীন ঐতিহ্য অটুট, রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছোঁয়াও!

রাজু বিশ্বাস,বারাসত:-৩৫০ বছরের প্রাচীন দত্তপুকুরের বুড়িমার পুজোয় আজ‌ও প্রাচীন ঐতিহ্য অটুট!রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের আমলের প্রাচীন এই পূজোর আচার ও রীতি এখন‌ও বহন করে চলেছেন তার বংশধররা!এই পূজো শুরু কিংবা বিসর্জন না হলে দত্তপুকুর অঞ্চলের কোন‌ও পূজো শুরু যেমন হয়না,তেমন বিসর্জন হয়না মা দূর্গার! সেই প্রথা এখনও চলছে নিয়ম মেনে!কথিত আছে,রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাতি শিবচন্দ্র রায় আজ থেকে প্রায় ৩৫০ আগে স্বপ্নাদেশ পেয়ে এই পূজো শুরু করেছিলেন!ওইদিন কৃষ্ণনগর থেকে নৌকা বিহারে বেরিয়েছিলেন রাজা শিবচন্দ্র!ঝড়, বৃষ্টি শুরু হ‌ওয়ায় রাজা নৌকা থেকে নেমে সুটি নদীর ধারে! তার‌ই জমিদারির সবুজ ঘেরা এক চিলতে গ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন! মাঝরাতে হঠাত‌ই মায়ের স্বপ্নাদেশ পান রাজা!মা স্বপ্নাদেশে তাকে আদেশ দেন,এখানেই যেন সযত্নে পূজো করা হয় তাঁর!সেই থেকে রাজা শিবচন্দ্রের নামে দত্তপুকুরের শিবালয় গ্রামে এই পূজো হয়ে আসছে!পূজোর বয়স ৩৫০ বছরের‌ও বেশি হ‌ওয়ায় এখানকার মা দূর্গাকে বুড়িমা বলে ডাকেন সকলে! প্রাচীন পূজো হ‌ওয়ায় আজ‌ও তাঁর ঐতিহ্য অটুট রয়েছে! রয়েছে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির ছোঁয়া‌ও! জানা যায়, গ্রামেরই এক মুসলমান ব‍্যাক্তি বুড়িমার দর্শন পেয়ে অজ্ঞান হয়ে যান!তারপর থেকে বিসর্জনের দিন ওই মুসলমান পরিবারের বাড়ির সামনে বুড়িমাকে দাঁড় করানো হয়! তাঁদের পরিবারের সদস্যরা দর্শন করার পর‌ই বুড়িমাকে নিয়ে যাওয়া হয় বিসর্জনের জন্য! দত্তপুকুরের শিবালয়ের রাস্তার ধারেই বুডিমার নিজস্ব দালাল বাড়ি!সেখানেই আচার, রীতি মেনে পূজো করে আসছেন রাজা শিবচন্দ্রের ষষ্ঠ বংশধররা!এলাকার মানুষের কাছে জাগ্রত দেবী হিসেবেই পরিচিত বুড়িমা!পূজোর সময় অনেকেই মনস্কামনা পূরনের জন্য এখানে ভিড় করেন!নিষ্ঠামনে দেবী দুর্গার পূজোও দেন! এখানে দেবী দূর্গা নৃসিংহ রুপে পূজিত হন! ঠাকুরের দুটি হাত সামনে থাকে!বাকি আটটি হাত লুকনো থাকে চুলের মধ্যে!এছাড়া,নিয়ম ও নিষ্ঠা মেনে কৃষ্ণপক্ষ থেকেই শুরু হয় দেবী দুর্গার বোধন! প্রতিদিন ভোগ, আরতি হয়!নবমী পর্যন্ত চলে চন্ডীপাঠ! অাখ,চাল কুমড়ো ও কলা বলি দেওয়ার রীতিও আছে এই পূজোয়।দুই হাতের পাশাপাশি দেবী দুর্গা এখানে সিংহের বদলে ঘোড়ার ওপর বিরাজ করেন!তবে কেশর রয়েছে ঘোড়ার।দিনে দিনে এই পুজো ঘিরে এলাকার মানুষের উপস্থিতি যেমন বেড়েছে তেমনই জেলার প্রাচীন দুর্গাপূজার মধ্যেও সুনাম কুড়িয়েছে!রাজা শিবচন্দ্র রায়ের বর্তমান চার শরিকের হাতেই দত্তপুকুরের শিবালয়ের বুড়িমার পুজোর রাশ রয়েছে।এক শরিকে রয়েছেন রাজ বংশের ষষ্ঠ পুরুষ ভৃকুরাম রায় এবং তপন রায়,বাদল রায়রা।অন্য শরিকে আছেন এই বংশেরই দুই মেয়ের পরিবার।রায় বংশের শরিকরাই বড় মাপের মন্দির তৈরী করেছেন।বলি দেওয়ার জন্য আলাদা জায়গাও করা হয়েছে।চিরাচরিত ঐতিহ্য মেনেই রথযাত্রার দিনেই মায়ের কাঠামো পুজো হয়। ষষ্ঠীর দিনে শিবালয়ের বুড়িমার পুজো শুরু না হলে দত্তপুকুরের আর কোন‌ও পুজো শুরু হয় না।বিসর্জনের সময়েও একই নিয়ম।যতক্ষন না বুড়িমার বিসর্জন করা হচ্ছে ততক্ষন অন্যান্য পূজোর ভাসান হয়না।গত সাড়ে তিনশ বছর একই নিয়ম চলে অাসছে!

রাজ পরিবারের প্রবীন মহিলা সদস্য রেনুকা রায় বলেন,"রাজা শিবচন্দ্র মায়ের স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর এই গ্রামেই তালপাতার ছাউনির নিচে প্রথম পূজোর সূচনা করেছিলেন!এরপর,খড়ের ছাউনি, সেখান থেকে ঢালাইয়ের দালানে পূজো হয়ে আসছে!এখন পুজোর দায়িত্বে রয়েছেন চার বংশধর!ওই গ্রামেই একটি পঞ্চমুখি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা শিবচন্দ্র!সেই শিব সারাবছর জলের তলায় থাকে! শুধুমাত্র নীল পূজোর সময় বের করা হয় তাকে"! তিনি আর‌ও বলেন,"নিয়ম মেনে আজও এখানে মাকে বরন করেন পুরোহিত।স্থানীয় বা বংশের কোন মহিলাই বরন করেন না।মহিলারা সিঁদুর খেলেন।কিন্তু তাঁরা বরন করেন না"!Conclusion:রাজ পরিবারের প্রবীন মহিলা সদস্য রেনুকা রায় বলেন,"রাজা কৃষ্ণচন্দ্রের নাতি শিবচন্দ্র মায়ের স্বপ্নাদেশ পাওয়ার পর এই গ্রামেই তালপাতার ছাউনির নিচে প্রথম পূজোর সূচনা করেছিলেন!এরপর,খড়ের ছাউনি সেখান থেকে ঢালাইয়ের দালানে পূজো হয়ে আসছে!রাজার চার বংশধর এখন এই পূজোর দায়িত্বে রয়েছেন! তাঁরাই নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পূজোর সমস্ত কিছু নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন"! তিনি আরও বলেন,"এই গ্রামেই একটি পঞ্চমুখি শিবলিঙ্গ প্রতিষ্ঠা করেছিলেন রাজা শিবচন্দ্র!সেই শিব সারাবছর জলের তলায় থাকে! কেবলমাত্র নীল পূজোর সময় জল থেকে তুলে আনা হয় তাঁকে! এখানকার পূজোর বৈশিষ্ট্য মাকে মহিলারা বরন করেন না,বরন করেন পূজোর পুরোহিত!মহিলারা সিঁদুর খেলায় অংশগ্রহণ করেন! পূজোর ভাসান এখানে দশমীতেই হয়! তাঁর কোনও পরিবর্তন এখনও অবধি হয়নি"!
ETV Bharat Logo

Copyright © 2024 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.