দেগঙ্গা, 30 জলাই : এলাকার একমাত্র নিকাশি নালা বন্ধ। তার জেরে বৃষ্টির জল-যন্ত্রণায় দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা ঘোষপাড়ায় প্রায় ৩০টি পরিবার। বৃষ্টির জলা জমে বাড়ছে সাপ, পোকামাকড়ের। জলবন্দি অবস্থায় কার্যত অসহায়ের মতো দিনযাপন করছেন প্রায় তিনশো বাসিন্দা।
অভিযোগ, এলাকারই দুই বাসিন্দা ব্যক্তিগত আক্রোশ মেটাতে গিয়ে বালির বস্তা ফেলে নিকাশি নালা বন্ধ করে দিয়েছেন। যার জেরেই এই সমস্যা তৈরি হয়েছে বলে দাবি ভুক্তভোগী বাসিন্দাদের। যদিও তা মানতে চাননি অভিযুক্ত ওই দুই বাসিন্দা। বরং স্থানীয় মন্দিরের উন্নয়নের কারণেই সেখানে বালির বস্তা এবং মাটি ফেলা হয়েছে বলে আজব যুক্তি দিয়েছেন তাঁরা।
সমস্যার সমাধানে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন জলবন্দি মানুষগুলি ৷
দেগঙ্গার বেড়াচাঁপা ঘোষপাড়াতেই রয়েছে একটি মন্দির। মন্দিরের ঠিক পিছনের দিকেই বাস করেন প্রায় তিনশো বাসিন্দা। এতদিন মন্দিরের সামনের নিকাশি নালা দিয়ে বৃষ্টির জল নিষ্কাশন হত।
আরও পড়ুন : নাগাড়ে বৃষ্টিতে জলমগ্ন আসানসোল
কিন্তু,সমস্যা বাঁধে সেই নিকাশি নালায় বালির বস্তা ফেলে বন্ধ করে দেওয়ায়। অভিযোগ, সম্প্রতি মন্দির উন্নয়নের নামে এলাকার দুই ব্যক্তি পরিকল্পনা করে এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। এবিষয়ে তাঁরা কারোর সঙ্গে কোনও আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেননি বলে অভিযোগ উঠেছে। নিকাশি নালা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাতে বৃষ্টির জল নিষ্কাশন হতে না পারায় দুর্ভোগ বেড়েছে এলাকার বাসিন্দাদের।
বৃষ্টির জমা জলের মধ্যে দিয়েই এখন যাতায়াত করতে হচ্ছে বাসিন্দাদের। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন বাচ্চা ও বয়স্করা। পড়ুয়ারা প্রাইভেট টিউশনে যেতে পারছে না। চিকিৎসা সংক্রান্ত কাজেও যেতে পারছেন না বাসিন্দারা। বৃষ্টির জমা জলে বিভিন্ন পোকামাকড় এবং সাপের আতঙ্ক দেখা দিচ্ছে। সমস্যা মেটাতে ওই দুই ব্যক্তিকে বারবার বলা হলেও কোনও সুরাহা হয়নি বলেও অভিযোগ উঠেছে।
এই বিষয়ে ভুক্তভোগী তপনকুমার ঘোষ বলেন, "মন্দির উন্নয়নের অজুহাত দিয়ে সুনীল ঘোষ এবং মহাদেব ঘোষ নামে এলাকার দুই বাসিন্দা বালির বস্তা ফেলে নিকাশি নালা বন্ধ করে দিয়েছেন। এর জেরে এলাকায় বৃষ্টির জল থইথই করছে। যাতায়াতে চরম সমস্যা হচ্ছে। শিশুরা প্রাইভেট টিউশনে যেতে পারছে না। অসহায় অবস্থায় বর্তমানে দিন কাটছে আমাদের ৷"
আরও পড়ুন : দিনভর বর্ষণে রাজ্যের জলছবি
একই সুর শোনা গিয়েছে সোমা ঘোষ নামে অপর এক ভুক্তভোগী মহিলার গলাতেও। তিনি বলেন,"বৃষ্টির জমা জলে পোকামাকড় থেকে সাপের আতঙ্ক বাড়ছে। আমরা চাই জলের নিকাশি নালা খুলে দেওয়া হোক। যাতে সমস্যার সমাধান হয় ৷"
যদিও নিকাশি নালা বন্ধ করার অভিযোগ অস্বীকার করে অভিযুক্ত সুনীল ঘোষ বলেন, "এখানে ব্যক্তিগত কোনও আক্রোশ নেই। যে জায়গায় বালির বস্তা ফেলে উচুঁ করা হয়েছে,সেটি অন্য কারোর জায়গা নয়। মন্দিরের নিজস্ব জমি। মন্দিরের পাশের গর্তে আগে বিভিন্ন ধরনের আবর্জনা ও নোংরা জিনিস ফেলা হত। তা বন্ধ করতেই শুধু গর্ত বন্ধ করা হয়েছে। বিষয়টি সকলেই জানেন। পাশ দিয়ে জল নিষ্কাশনের অনেক জায়গা রয়েছে। তাই, এ অভিযোগ একেবারেই মিথ্যা ৷ "
মন্দির কমিটির একাংশকে অন্ধকারে রেখে কয়েকজন লোক বাসিন্দাদের বিপদে ফেলতেই এই ঘৃণ্য কাজ করেছে বলে অভিযোগ করেছেন মন্দির কমিটির সহ-সভাপতি ভরত ঘোষ। তিনি বলেন, "মন্দির কমিটির সকলে এর সঙ্গে জড়িত নন। অনেকেই জানেন না যে নিকাশি নালার উপর মাটি ও বালির বস্তা ফেলা হবে।’’
আরও পড়ুন : Landslide in Kalimpong: কালিম্পংয়ে একাধিক ধস, চাপা পড়ে রেল প্রকল্পের শ্রমিকের মৃত্যু
বৃষ্টির জল-যন্ত্রণা থেকে মুক্তি পেতে প্রশাসনের দ্বারস্থ হওয়ার ভাবনা শুরু করেছেন ভুক্তভোগী বাসিন্দারা। সমস্যার সমাধানে এখন তাঁরা প্রশাসনের হস্তক্ষেপ চাইছেন।