দেগঙ্গা (উত্তর 24 পরগনা), 4 মার্চ : নদীয়ার পর এবার উত্তর 24 পরগনা । মনোমালিন্যের জেরে স্কুলের মধ্যেই ঘুষি মেরে শিক্ষকের নাক ফাটানোর অভিযোগ উঠল প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে (Deganga SSK Head Master Allegedly Attacks Math Teacher) । ঘটনার জেরে ব্যাপক শোরগোল পড়েছে উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গায় ।
রক্তাক্ত অবস্থায় কার্তিকচন্দ্র পাল নামে ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে নিয়ে যাওয়া হয় স্থানীয় বিশ্বনাথপুর হাসপাতালে । পরে অসুস্থ বোধ করায় সেখান থেকে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে বারাসত জেলা হাসপাতালে । আপাতত সেখানেই চিকিৎসাধীন তিনি । শিক্ষকের ওপর হামলা এবং মারধরের অভিযোগে স্কুলের প্রধান শিক্ষক জয়দেব ঘোষকে গ্রেফতার করেছে দেগঙ্গা থানার পুলিশ (Police Arrested Accused Head Master) । ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে ।
স্কুল ও স্থানীয় জানা গিয়েছে, আক্রান্ত শিক্ষক দেগঙ্গার 2 নম্বর পঞ্চায়েতের বাজিতপুর উত্তরপাড়া এসএসকে স্কুলে অঙ্কের শিক্ষকতা করেন । অভিযুক্ত ওই স্কুলেরই প্রধান শিক্ষক । প্রাইমারি থেকে চতুর্থ শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা হয়ে থাকে সেখানে । বেশ কিছুদিন ধরেই ওই দুই শিক্ষকের মধ্যে নানা কারণে মনোমালিন্য চলছিল ৷ সেই মনোমালিন্য বাড়ে অঙ্কের শিক্ষক প্রধান শিক্ষকের কাছে দুপুরের ছুটি চাওয়ায় ।
অভিযোগ, অর্ধদিবসের সেই ছুটি প্রধান শিক্ষক মঞ্জুর না করায় বৃহস্পতিবার স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন শিক্ষক কার্তিকচন্দ্র পাল । শুক্রবার সকালে স্কুলে আসার পরই এই নিয়ে তুমুল বচসা শুরু হয় দুই শিক্ষকের মধ্যে । বচসা চলাকালীনই পড়ুয়াদের সামনে প্রধান শিক্ষক ঘুষি মারেন অঙ্কের শিক্ষকের নাকে । রক্তাক্ত অবস্থায় মেঝেতেই লুটিয়ে পড়েন তিনি । রক্তে ভেসে যায় স্কুলের বারান্দা ।
এই দৃশ্য দেখে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন স্কুল পড়ুয়ারা । খবর পেয়ে তড়িঘড়ি স্কুলে ছুটে আসেন এলাকার লোকজন এবং অভিভাবকরা । এরপর আহত ওই শিক্ষককে উদ্ধার করে দ্রুত চিকিৎসার জন্য নিয়ে যাওয়া হয় দেগঙ্গার বিশ্বনাথপুর হাসপাতালে । সেখানে প্রাথমিক চিকিৎসার পর তিনি অসুস্থ বোধ করায় তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে (Injured Math Teacher Admitted in Hospital) । ঘটনার জেরে শোরগোল পড়ে যায় এলাকায় । ছড়িয়েছে চাঞ্চল্যও ।
এদিকে প্রধান শিক্ষকের ভূমিকায় সরব হয়েছেন এলাকার লোকজন । প্রশ্ন তুলেছেন তাঁর নানা কর্মকাণ্ড নিয়েও । বজলুর রহমান নামে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, "উনি নানা অছিলায় পড়ুয়াদের ক্লাস করানোর পরিবর্তে স্কুল থেকে বেরিয়ে যান । বয়স্ক ওই শিক্ষককে চাপ দেওয়া হয় স্কুলে থাকতে । যাতে প্রধান শিক্ষক স্কুল থেকে বেরিয়ে সুদের কারবার করতে পারেন । অঙ্কের শিক্ষক একজন ভদ্র এবং নিরীহ মানুষ । ওঁর নাক এভাবে ঘুষি মেরে ফাটিয়ে দেওয়া উচিত হয়নি । এটা খুবই নিন্দনীয় । অভিযুক্ত শিক্ষকের কঠোর শাস্তির দাবি করছি আমরা ৷"
আক্রান্ত শিক্ষক কার্তিকচন্দ্র পাল বলেন, "পুজোর পর থেকেই আমার পায়ে ইউরিক অ্যাসিড বাড়তে শুরু করেছে । সেই কারণে চিকিৎসকের কাছে যাব বলে বৃহস্পতিবার টিফিনের পর ছুটি চেয়েছিলাম প্রধান শিক্ষকের কাছে । উনি ফোনে ছুটি দিতে পারবেন না বলায় আমি ওইদিন অনুপস্থিত থাকি স্কুলে । শুক্রবার স্কুলে আসার পরই এই নিয়ে আমার উপর হম্বিতম্বি শুরু করেন প্রধান শিক্ষক । কিছু বুঝে ওঠার আগেই নাকে ঘুষি চালিয়ে দেন তিনি ৷"
তাঁর কথায়, "শুধু এটা নয় । উনি আমার কাছ থেকে প্রায় 50 হাজার টাকা ধার নিয়েছিলেন । গত দু'বছর ধরে সেই ধারের টাকা শোধ করছিলেন না তিনি । ধারের টাকা চাওয়াতে রাগ হয় ওঁর । আমাকে মারার পিছনে এই বিষয়টিও রয়েছে বলে মনে হচ্ছে ৷"
যদিও মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করে পাল্টা প্রধান শিক্ষক জয়দেব ঘোষ দাবি করেছেন, "উনি স্কুলে অনিয়মিত আসতেন । বৃহস্পতিবারও অনুপস্থিত ছিলেন স্কুলে । কারণ জিজ্ঞাসা করতেই উনি আঙুল উঁচিয়ে কথা বলতে শুরু করেন আমার সঙ্গে । প্রতিবাদ করার সময় ধাক্কাধাক্কাতেই উনি পড়ে গিয়ে আহত হন ৷"
প্রসঙ্গত, এর আগে নদীয়ার একটি সরকারি স্কুলে প্রকাশ্যে মারামারিতে জড়িয়ে পড়েন দুই শিক্ষক । যা ঘিরে অস্বস্তিতে পড়তে হয় শিক্ষা দফতরকে । রিপোর্টও তলব করা হয়েছিল নদীয়ার জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা সংসদের কাছ থেকে । সেই ঘটনার পর এবার হুবহু একই দৃশ্য দেখা গেল উত্তর 24 পরগনার দেগঙ্গার ওই এসএসকে-তে । এক্ষেত্রেও শিক্ষা দফতর রিপোর্ট তলব করে কি না, সেটাই এখন দেখার বিষয় ।
আরও পড়ুন : Pritikana Jana : আইনি দিদিমণির স্কুলে পড়ার পাশাপাশি মূল্যবোধের পাঠ আদিবাসী পড়ুয়াদের