শাসন, 3 অগস্ট: পঞ্চায়েত ভোট মিটেছে ৷ এখনও ঘরে ফিরতে পারেননি উত্তর 24 পরগনার শাসন অঞ্চলের অন্ততপক্ষে 18 জন সিপিএম কর্মী ৷ তাঁদের অভিযোগ, তৃণমূলের সন্ত্রাস, লাগাতার হুমকির জেরে ঘর ছাড়তে হয়েছে তাঁদের ৷ বর্তমানে ঘরছাড়া সিপিএম কর্মীদের ঠাঁই বারাসতে দলের জেলা পার্টি অফিস ৷ টানা দু'মাস ধরে সেখানেই থাকছেন বাম কর্মীরা ।
অভিযোগ, জেলাশাসক থেকে শুরু করে প্রশাসনের সব স্তরে জানিয়েও কোনও সুরাহা মেলেনি ৷ তাই ঘরছাড়া সিপিএম কর্মীদের ফেরাতে আদালতের দ্বারস্থ হওয়ার চিন্তাভাবনা করছে জেলা নেতৃত্ব ৷ যদিও ঘটনার সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে পাল্টা লাল ঝাণ্ডা শিবিরকেই কটাক্ষ করেছে শাসক শিবির ৷ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি জেলা প্রশাসনের কোনও আধিকারিক ৷
সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘরছাড়া সিপিএম কর্মীরা প্রত্যেকেই শাসনের কীর্তিপুর 1 নম্বর পঞ্চায়েতের কৃষ্ণমাটি গ্রামের বাসিন্দা ৷ তাঁরা সভার প্রচারে সিপিএমের ফ্ল্যাগ, ফেস্টুন টাঙানোর কাজ করছিলেন ৷ অভিযোগ, হঠাৎ তৃণমূলের দুষ্কৃতীরা তাঁদের উপর হামলা চালায় ৷
আরও পড়ুন: ফের তৃণমূলের সঙ্গে সংঘর্ষে উত্তপ্ত শাসন, আহত 15 বামকর্মী
এই ঘটনায় আবদুল্লা মোল্লা-সহ সিপিএমের 10 কর্মী গুরুতর জখম হন ৷ বাঁশের আঘাতে আবদুল্লার মাথা এঁফোড় ওঁফোড় হয়ে যায় ৷ বেশকিছু দিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন তিনি ৷ সুস্থ হলেও শাসকদলের হুমকি এবং সন্ত্রাসের জেরে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি সিপিএমের এই কর্মী ৷ হাসপাতাল থেকে সোজা চলে যান সিপিএমের জেলা পার্টি অফিসে ৷ তাঁরই মতো আক্রান্ত আরও অনেকে ৷ তাঁদের ঠিকানা বারাসতে দলের এই পার্টি অফিস ৷
এই বিষয়ে সিপিএমের জেলা সম্পাদক মণ্ডলীর সদস্য তথা দলের বারাসত 2 নম্বর ব্লকের দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতা আহমেদ আলী খান বলেন, "শাসন অঞ্চলে তৃণমূলের সন্ত্রাস এমন জায়গায় পৌঁছেছে যে ঘরছাড়া দলীয় প্রার্থীরা পর্যন্ত ভোটের দিন সেখানে ঢুকতে পারেনি। যার ফলে দেদার ভোট লুঠ হয়েছে।এখনও সেখানে হুমকির রাজনীতি চলছে। ঘরছাড়া সিপিএম কর্মীদের ঘরে ফেরানোর দাবিতে আমরা বারবার পুলিশ প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়েছি ৷ কিন্তু প্রশাসন কোনও দায়িত্বই নিতে চাইছে না ৷ শুধু টালবাহানা করে যাচ্ছে ৷ এভাবে কোনও সরকার চলতে পারে না । যেখানে মানুষ তাঁর নিজের বাড়িতেই থাকতে পারবে না ৷ প্রয়োজনে তাঁদের ঘরে ফেরাতে হাইকোর্টে মামলা করব আমরা ৷"
আবদুল্লা মোল্লা নামে ঘরছাড়া এক সিপিএম কর্মী বলেন, "আমার স্ত্রী এবং ছেলে সিপিএমের প্রতীকে পঞ্চায়েতে প্রার্থী হয়েছিলেন ৷ কিন্তু, তৃণমূলের সন্ত্রাসের জেরে আজ তাঁদেরও অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়েছে ৷ বাড়ি ফেরার চেষ্টা করলেই তৃণমূল হুমকি দিচ্ছে ৷ হয়তো খুন করে দেবে ৷" তিনি আরও জানান, চার থেকে পাঁচ লক্ষ টাকা জরিমানা দিলে তবেই বাড়ি ফেরা যাবে ৷ এমনও শর্ত নাকি তাঁদের দেওয়া হচ্ছে ৷
আরও পড়ুন: নিরপেক্ষ ভোটের জন্য রাজ্যে রাষ্ট্রপতি শাসন চাইলেন সুকান্ত
সিপিএমের অভিযোগের সত্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলেছেন তৃণমূল নেতা অরুণ ভৌমিক ৷ তাঁর কথায়, "সিপিএম দলের কোনও অস্তিত্ব নেই এই রাজ্যে ৷ তাই, কিছু হলেই তৃণমূলের ঘাড়ে দোষ চাপায়।" তিনি জানান, এরপরও সিপিএম নেতাদের কিছু মনে হলে তাঁরা হাইকোর্টের দ্বারস্থ হতেই পারেন ৷ এখন তো সব ব্যাপারেই বিরোধীরা হাইকোর্টে গিয়ে কড়া নাড়ছে ৷ সেখানেই দেখুন ৷ প্রসঙ্গত, বারাসত 2 নম্বর ব্লকের শাসন অঞ্চল বারবারই উঠে এসেছে সংবাদ শিরোনামে ৷ বিরোধী দলের কর্মীদের উপর হামলা, ঘরছাড়া, জরিমানা ৷