বারাসত, 19 জুলাই: গণনা কেন্দ্রে সিপিএমের জেলাপরিষদ প্রার্থীকে মারধর ও কাউন্টিং সেন্টারের বাইরে প্রিসাইডিং অফিসারের সই করা ব্যালট পেপার উদ্ধার হওয়ার ঘটনায় মামলা দায়ের হয়েছিল কলকাতা হাইকোর্টে। সেই মামলার জেরে বারাসত সাব ডিভিশনের জেলা পরিষদের রিটার্নিং অফিসার এসডিও'কে তলব করেন হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহা। আর সেই ঘটনাতেই নৈতিক জয় দেখছেন আক্রান্ত সিপিএমের জেলাপরিষদ প্রার্থী হাবিব আলি। অন্যদিকে, আদালতের নির্দেশ মেনে বৃহস্পতিবার হাইকোর্টে হাজিরা দেবেন বলে জানিয়েছেন এসডিও সোমা সাউ।
সূত্রের খবর, আগামিকাল 20 জুলাই বারাসতের এসডিও সোমা সাউকে তলব করে হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার বেঞ্চ ৷ ওইদিন বেলা দু'টোর সময় হাজিরা দিতে বলা হয়েছে তাঁকে। সঙ্গে নিয়ে আসতে বলা হয়েছে গণনা কেন্দ্রের ভিতরে এবং বাইরের সিসিটিভি ফুটেজও। গোটা ঘটনায় আদালতের হস্তক্ষেপে এসডিও'কে ডেকে পাঠানোর বিষয়টিতে নৈতিক জয় বলেই মনে করছেন আক্রান্ত সিপিএমের জেলাপরিষদ প্রার্থী হাবিব আলি ৷
প্রসঙ্গত, বারাসত এক নম্বর ব্লকের ভোট গণনা কেন্দ্র ছিল ছোট জাগুলিয়া বিডিও অফিস সংলগ্ন আইটিআই কলেজ। অভিযোগ, গণনার দিন রাতে ওই কাউন্টিং সেন্টারের ভিতরেই সিপিএমের জেলাপরিষদ প্রার্থী হাবিব আলিকে বেধড়ক মারধর করা হয়। অভিযোগ ওঠে, হাবিবের বিপরীতে দাঁড়ানো তৃণমূল প্রার্থী আসাদ-উদ-জামানের বিরুদ্ধে। ভোট লুঠ এবং ছাপ্পা ভোট ঠেকাতে গিয়েই রক্তাক্ত হন সিপিএম প্রার্থী। প্রকাশ্যে ভোট কর্মীদের সামনে তাঁকে মারধর করা হলেও পুলিশের কেউই সেদিন হাবিবকে বাঁচাতে এগিয়ে আসেনি বলে অভিযোগ উঠেছে। মাথায় এবং চোখে গুরুতর আঘাত লাগায় তাঁকে রাতেই ভর্তি করা হয় বারাসত মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে। প্রায় চারদিন সেখানেই হাবিবের চিকিৎসা চলে। আপাতত সে সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরলেও ঘটনার কথা মনে পড়লেই আঁতকে উঠছেন তিনি। ভোট গণনার ঠিক পরই প্রিসাইডিং অফিসারের সই করা বেশকিছু ব্যালট পেপার উদ্ধার হয় ওই গণনা কেন্দ্রের সামনে থেকে। গোটা ঘটনাটি হাইকোর্টের বিচারপতি অমৃতা সিনহার এজলাসে তুলে ধরে মামলা দায়ের করা হয় সিপিএমের তরফে। গত 14 জুলাই সেই মামলার জেরে বিচারপতি অমৃতা সিনহা এসডিও-কে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন।
এই প্রসঙ্গে আক্রান্ত সিপিএম প্রার্থী হাবিব আলি বলেন, "ভোটের আগে থেকেই প্রাণনাশের আশঙ্কা করে নিরাপত্তা চেয়ে আবেদন করেছিলাম এসডিও-র কাছে। কিন্তু তিনি সেই আবেদনে সাড়া দেননি। ভোটের দিন 27 নম্বর আসনের প্রায় সব বুথেই লুঠতরাজ চালিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী আসাদ-উদ-জামানের লোকজন। আমার নির্বাচনী এজেন্টকে মারধর করে বুথ থেকে বের করে দেওয়ার পর ছাপ্পা ভোট করিয়েছে সে। গণনার দিনও নিজের পরাজয় ঠেকাতে ব্যালট পেপারে কারচুপি করেছে তৃণমূল প্রার্থী। তার প্রতিবাদ করায় গণনা কেন্দ্রেই খুনের চেষ্টা করা হয় হয় আমাকে। তাছাড়া আমার প্রতীক দেওয়া অনেক ব্যালট পেপারও উদ্ধার হয়েছে গণনা কেন্দ্রের সামনে থেকে। এগুলিই আমরা হাইকোর্টের মহামান্য বিচারপতির সামনে তুলে ধরেছি। বিচারব্যবস্থার ওপর আমাদের পূর্ণ আস্থা রয়েছে। আশা করছি নিশ্চয় সুবিচার পাব ৷"
আরও পড়ুন: 'ইয়েচুরিকে সঙ্গে নিয়ে আরও বেশি চুরি করবেন মমতা', বিরোধী জোটকে তীব্র কটাক্ষ শুভেন্দুর
যদিও যাবতীয় অভিযোগ অস্বীকার করে পালটা সিপিএম প্রার্থীর ঘাড়েই এর দায় ঠেলেছেন জেলাপরিষদের তৃণমূল প্রার্থী আসাদ-উদ-জামান। এদিকে, বিষয়টি নিয়ে বারাসতের মহকুমা শাসক সোমা সাউয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "ঘটনাটি ঠিক কী হয়েছে, না হয়েছে তা আমার জানা নেই। হাইকোর্টে গিয়ে আগে হাজিরা দিই, তারপর বুঝতে পারব বিষয়টি। এর আগে আগ বাড়িয়ে কিছু বলা সম্ভব নয় ৷"