ব্যারাকপুর, 27 সেপ্টেম্বর: রক্ষকই ভক্ষক ! সুবিচারের আশায় পুলিশ কর্তার কাছে গিয়েছিলেন এক মহিলা । কিন্তু সুবিচার পাওয়া তো দূরহস্ত বদলে সেই পুলিশ কর্তারই লালসার শিকার হতে হল ওই মহিলাকে । তাঁকে টাকা ফেরত পাইয়ে দেওয়ার নামে যৌন নিগ্রহ করা হয় বলে অভিযোগ ৷ আর এই চাঞ্চল্যকর অভিযোগ উঠেছে বাসুদেবপুর থানার সাব ইন্সপেক্টরের বিরুদ্ধে । ঘটনাটি প্রকাশ্যে আসতেই শোরগোল পড়ে গিয়েছে ব্যারাকপুর কমিশনারেট এলাকায় । ইতিমধ্যে অভিযুক্ত ওই পুলিশ কর্তার বিরুদ্ধে বাসুদেবপুর থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন নির্যাতিতা মহিলা । সেই অভিযোগের ভিত্তিতে ঘটনার তদন্তে নেমেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেট ।
জানা গিয়েছে, বাসুদেবপুর থানার লক্ষ্মীনারায়ণ এলাকার বাসিন্দা ওই মহিলার সঙ্গে ব্যবসায়িক চুক্তি হয় গোপাল ঘোষ নামে এক ব্যক্তির । 2022 সালের অক্টোবর মাসে মহিলার কাছ থেকে অনলাইনের মাধ্যমে 10 লক্ষ টাকা ওই ব্যক্তি নেন বলে অভিযোগ । বছর কেটে গেলেও তিনি সেই টাকা পরিশোধ করছিলেন না ওই মহিলাকে । উলটে মহিলার ফোন নম্বর সে ব্লক করে দেয় বলে অভিযোগ উঠেছে । এমতাবস্থায় কিছু বুঝে উঠতে না পেরে ওই মহিলা বাসুদেবপুর থানায় যান অভিযোগ জানাতে । তখনই পরিচয় হয় থানার সাব ইন্সপেক্টরের সঙ্গে । কথায় কথায় মহিলাকে পাওনা টাকা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন তিনি ।
আরও পড়ুন: উজ্জয়িনীতে আড়াই ঘণ্টা রাস্তায় ঘুরেও সাহায্য পেল না ধর্ষিতা নাবালিকা ! তদন্তে পুলিশ
মহিলার দাবি, তিনি ওই পুলিশ কর্তার কথায় বিশ্বাস করে বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে তোলেন তাঁর সঙ্গে । পরে সেই সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠতা হয় দু'জনের মধ্যে । অভিযোগ, পাওনা টাকা পাইয়ে দেওয়া তো দূরের কথা । উলটে ঘনিষ্ঠ মুহুর্তের ছবি মোবাইল বন্দি করে ওই মহিলাকে দিনের পর দিন ব্ল্যাকমেল করে কয়েক লক্ষ টাকা হাতিয়ে নেন সাব ইন্সপেক্টর । প্রতিবাদ করলে নির্যাতিতা মহিলার কপালে জোটে অকথ্য অত্যাচার । শেষমেশ অভিযুক্ত পুলিশ কর্তার ব্ল্যাকমেলের হাত থেকে বাঁচতে এবং তাঁর শাস্তি চেয়ে বাসুদেবপুর থানার দ্বারস্থ হন নির্যাতিতা ওই মহিলা । গত 22 সেপ্টেম্বর এ বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের হয় সেখানে । অভিযোগ পেয়েই নড়েচড়ে বসেছে ব্যারাকপুর কমিশনারেট ।
এই বিষয়ে নির্যাতিতা মহিলা বলেন, "পাওনা টাকা পাওয়ার আশাতেই বাসুদেবপুর থানায় গিয়েছিলাম পুলিশের সাহায্য পেতে । তখন উনি অভিযোগ করতে দেননি । বলেন পাওনা টাকা তিনিই পাইয়ে দেবেন আমাকে । কিন্তু সেসব তো কিছুই হয়নি । উলটে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক তৈরি করে যৌন নিগ্রহ করা হয় একাধিক সময়ে । ব্ল্যাকমেল করে তাঁর কাছ থেকে পাঁচ লক্ষ টাকার সোনা-রুপার গয়না এবং নগদ এক লক্ষ টাকা হাতিয়েও নেয় সে ৷" টাকা চাইতে গেলে অভিযুক্ত পুলিশ কর্তা তাঁর ওপর শারীরিক এবং মানসিক নির্যাতন চালায় বলেও অভিযোগ করেছেন মহিলা ।
আরও পড়ুন: সৌদিতে অধ্যাপিকাকে বিয়ের প্রতিশ্রুতি দিয়ে সহবাস, হায়দরাবাদে পার্কস্ট্রিট পুলিশের জালে অভিযুক্ত
এ দিকে অভিযোগ দায়ের হওয়ার পর থেকেই রীতিমতো ওই মহিলাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ । ফলে যথেষ্ট আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন নির্যাতিতা বলে দাবি তাঁর । অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে ব্যারাকপুর কমিশনারেটের ডিসি নর্থ শ্রী হরি পাণ্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয় ৷ তবে তিনি এই বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে চাননি । কমিশনারেট সূত্রে জানা গিয়েছে, ইতিমধ্যে অভিযুক্ত পুলিশ কর্তাকে ক্লোজ করে বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে ।