বারাসত, 23 অক্টোবর: চেকে নয় ! এবার সরাসরি নগদ টাকা দিয়ে পুরস্কৃত করা হল এক দুর্গাপুজো কমিটিকে। গেরুয়া শিবিরের এই উদ্যোগ ঘিরেই তৈরি হয়েছে বিতর্ক । ঘটনাটি উত্তর 24 পরগনার জেলাসদর বারাসতে । বিতর্কের এখানেই শেষ নয় ! যে বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক আরও বেড়েছে তা হল, খোদ বিজেপির সাংগঠনিক জেলা সভাপতি তরুণকান্তি ঘোষ মঞ্চে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের নগদ পুরষ্কার তুলে দিচ্ছেন পুজো কমিটির উদ্যোক্তাদের, সেই ছবি ধরা পড়েছে এবং সেই কথা তিনি ভরা মঞ্চে সদর্পণে ঘোষণাও করছেন । রবিবারের এই ঘটনা নিয়েই প্রশ্ন উঠেছে বিভিন্ন মহলে । সরকারি কোনও পদে না থেকেও কেন্দ্রীয় সরকারের পুরস্কার কীভাবে গেরুয়া শিবিরের একজন জেলা সভাপতি পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দিতে পারেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠছে ৷ চেকে না দিয়ে সেই পুরস্কার নগদে প্রদান করা হল কিসের ভিত্তিতে, এইসব প্রশ্ন তুলে বিজেপিকে আক্রমণ করেছে তৃণমূল ৷ যদিও বিতর্ক দেখা দিতেই নগদে পুরস্কার নেওয়ার বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা ।
বারাসত বরিশাল কলোনির সবুজ সংঘ ক্লাবের পুজো এবছর 62 তম বর্ষে পা দিয়েছে । এবছর তাদের থিম চন্দ্রযান-3। এই পুজো ঘিরে ইতিমধ্যেই প্রবল আগ্রহ তৈরি হয়েছে দর্শনার্তী ও বারাসতবাসীর মধ্যে । এই পুজো মণ্ডপে রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোসও ঘুরে গিয়েছেন । ফলে পুজো মণ্ডপ এবং মাতৃ প্রতিমা দর্শন করার উৎসাহও বেড়েছে দর্শনার্থীদের মধ্যে ।
এসবের মধ্যেই অষ্টমীর রাতে এই পুজো কমিটিকে পুরস্কৃত করতে সদলবলে সেখানে যান বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তরুণকান্তি ঘোষ । এরপর মঞ্চে উঠে তিনি পুজো কমিটির কর্মকর্তাদের হাতে তুলে দেন নগদ 25 হাজার টাকা । যদিও সেই টাকা রাখা ছিল একটি খামের মধ্যে। প্রকাশ্যে সেই টাকা দেখানো না হলেও খামের মধ্যে যে 25 হাজার টাকাই রয়েছে সেকথা বারবার বলতে শোনা গিয়েছে পুজো কমিটির কর্মকর্তাদেরও ৷ ওই নগদ অর্থ পুজো উদ্যোক্তাদের হাতে তুলে দেওয়ার পর তরুণকান্তি ঘোষ বলেন,"আমাদের সরকার (কেন্দ্রীয় সরকার) এক থেকে দেড় লক্ষ টাকা দিয়েছে পুজো কমিটিগুলিকে। সেটা অবশ্যই মণ্ডপ অনুযায়ী । তখনই আমি আফসোস করে বলেছিলাম কেন এই পুজো কমিটিকে এই নগদ টাকার রেঞ্জে নিয়ে আসা হল না । এটা আমাদের নিজেদের মধ্যেই কোথাও ভুল বোঝাবুঝির জন্য হয়েছে ৷ এনিয়ে আমি একটু অসন্তুষ্ট বলতে পারেন ! এই পুজো মণ্ডপের যা মান ও বাজেট সেই তুলনায় 25 হাজার টাকা খুবই কম । তা সত্ত্বেও পুজো উদ্যোক্তারা এই টাকা সাদরে গ্রহণ করলেন তার জন্য কৃতজ্ঞ ।"
তবে এই পুরস্কার প্রদান নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক ৷ যদিও এই বিতর্ক থেকে নিজেদের দূরেই রাখছেন পুজো কমিটির উদ্যোক্তারা । এই বিষয়ে পুজো কমিটির সম্পাদক গনজিৎ ভৌমিক বলেন,"নগদে পুরস্কার দেওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ ভুল । কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে পুজো কমিটির কাছে প্রস্তাব এসেছিল যদি কেন্দ্রীয় সরকারের পাঁচটি করে ফ্লেক্স পুজো মণ্ডপের সামনে টাঙানো হয় তাহলে 25 হাজার টাকা অনুদান পাব আমরা । সেই অনুদানের টাকায় দেওয়া হয়েছে আমাদের । কেন্দ্রীয় সরকার হোক কিংবা রাজ্য সরকার, প্রত্যেকের কাছ থেকেই অনুদান আমরা নেব । এক্ষেত্রে আমাদের কোনও বিধিনিষেধ নেই । তবে, কোনও রাজনৈতিক দলের নেতাদের কাছ থেকে অনুদান গ্রহণ করব না আমরা । এটাই আমাদের ক্লাবের সিদ্ধান্ত । এনিয়ে কোনও দ্বিমত নেই আমাদের মধ্যে ৷"
আরও পড়ুন: মণ্ডপে বেআইনি বিদ্যুৎ সংযোগ! কয়েক লক্ষ টাকার জরিমানা বিদ্যুৎ পর্ষদের
এদিকে, বিষয়টি নিয়ে গেরুয়া শিবিরকে নিশানা করেছে শাসক শিবির । এনিয়ে বারাসত শহর তৃণমূলের সভাপতি ও পৌরসভার পৌর পারিষদ অরুণ ভৌমিক বলেন,"কোনওদিন নগদে পুরষ্কার দেওয়ার কথা আমি শুনিনি । ভোট হোক কিংবা পুজো, নগদ টাকা বিতরণ করার নোংরা রাজনীতি বিজেপি করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে । এটাই ওদের সংস্কৃতি । রাজ্য সরকারও তো পুজো কমিটিগুলোকে আর্থিক অনুদান দিয়েছে ! সেটা নগদে নয়। সম্পূর্ণ নিয়ম মেনে চেকের মাধ্যমে । এসবের কোনও ধার ধারে না বিজেপি নেতারা । এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই ৷" অন্যদিকে,বিতর্কের মুখে সাফাই দিয়ে বিজেপির রাজ্য কমিটির সদস্য তাপস মিত্র বলেন,"ওটা কেন্দ্রীয় সরকারের পুরস্কারের কোনও টাকা নয় । পার্টিগতভাবে নগদ টাকা দেওয়া হচ্ছে পুজো কমিটিগুলোকে উৎসাহিত করতে । পার্টির সিদ্ধান্ত মেনেই জেলা সভাপতি সেই টাকা দিয়েছেন। তৃণমূল অযথা এই নিয়ে বিতর্ক তৈরি করছে । শাসকদল ও তার সরকারের এরকম হাজারো বিতর্ক খুঁজলে পাওয়া যাবে । তৃণমূল যত কম কথা বলবে ততই ওদের ভালো ৷"