বারাসত, 18 অগাস্ট : কোরোনা রিপোর্টে বিভ্রান্তির জেরে 65 বছরের এক প্রবীণের মৃত্যুর অভিযোগ উঠল ৷ ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর 24 পরগনার বারাসতে ৷ ঘটনায় বারাসত জেলা হাসপাতালের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ তুলল মৃতের পরিবার৷ যদিও গাফিলতির অভিযোগ মানতে নারাজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ৷
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, বারাসতের ওই প্রবীণ বেশ কিছু দিন ধরে জ্বর-সর্দি-কাশিতে ভুগছিলেন ৷ কোরোনা উপসর্গ থাকায় 11 অগাস্ট তাঁকে বারাসত জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়৷ হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভরতি থাকাকালীন বৃদ্ধের র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হয়৷ 13 অগাস্ট তাঁর কোরোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসায় হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয়৷ রোগীকে নিয়ে পরিবার বাড়ি ফিরে যায়৷ দু'দিন বাড়িতেই হোম আইসোলেশনে থাকেন তিনি৷ এরপর 15 অগাস্ট স্বাস্থ্য ভবন থেকে যোগাযোগ করা হয় বৃদ্ধের পরিবারের সঙ্গে৷ বলা হয়, রোগীর কোরোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ৷ কথা শুনে চরম বিভ্রান্তিতে পড়েন পরিবারের লোকজন৷ বিভ্রান্তি কাটাতে তাঁরা বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন৷ কিন্তু হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি বলে অভিযোগ৷
এরপর গতকাল সন্ধেয় বারাসত হাসপাতালের তরফে পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগ কর হয় ৷ বলা হয়, বৃদ্ধের কোরোনা রিপোর্ট পজ়িটিভ ৷ চাঁপাডালির কাছে কোরোনা হাসপাতালে ভরতি করতে বলা হয় আক্রান্তকে৷ যা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে পরিবারের৷ তারা কিছুতেই বুঝতে পারছে না, রিপোর্ট পজ়িটিভ হওয়া সত্ত্বেও কীভাবে রোগীর কোরোনা রিপোর্ট নেগেটিভ বলা হল হাসপাতালের তরফে ৷
এদিকে, হাসপাতাল থেকে ফিরে দু'দিন বাড়িতে থাকায় বৃদ্ধের কোনও চিকিৎসা হয়নি ৷ চিকিৎসা না হওয়ায় জ্বর ও শ্বাসকষ্টও বাড়তে থাকে৷ এরপর আজ সকালে বারাসত হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে সংক্রমিতকে ভরতি করা হয় চাঁপাডালির মেগাসিটি কোরোনা হাসপাতালে ৷ কিন্তু ততক্ষণে অনেক দেরি হয়ে গিয়েছে৷ সেখানে ভরতি হওয়ার দু ঘণ্টা পরেই মৃত্যু হয় প্রবীণের৷ কোরোনা রিপোর্টে বিভ্রান্তির জেরেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ করেছে পরিবার৷
তাদের কথায়, "স্বাস্থ্য ভবন রিপোর্ট পজ়িটিভ আসার কথা বলায় আমরা প্রথমে বিশ্বাস করতে পারিনি ৷ বরং তাদের বারাসত হাসপাতালে কোরোনা রিপোর্ট নেগেটিভ আসার কথা বলি৷ কিন্তু তারাও যখন রিপোর্ট পজ়িটিভ বলে জানায় তখন মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে ৷"
যদিও গাফিলতির অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বারাসত জেলা হাসপাতালের সুপার সুব্রত মণ্ডল৷
তিনি বলেন, "র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্টে অনেক সময় রিপোর্ট নেগেটিভ আসে৷ কিন্তু পরে ওই প্রবীণের উপসর্গ দেখে সন্দেহ হওয়ায় ফের আমরা সোয়াব টেস্ট করি৷ তখন তাঁর রিপোর্ট পজ়িটিভ আসে৷ সেই বিষয়টি হাসপাতালের কোরোনা কন্ট্রোল রুম থেকে ফোন করে পরিবারকে জানানো হয়৷ রিপোর্ট পজ়িটিভের কথা রাজ্য স্বাস্থ্য দপ্তর থেকেও তাঁদের জানানো হয়েছে৷ এর মধ্যে বিভ্রান্তির কোনও বিষয় নেই৷"
এদিকে, কোরোনা আক্রান্তের মৃত্যুর পর আতঙ্ক ছড়ায় এলাকায়৷ মৃতের স্ত্রীসহ পরিবারের সদস্যদের হোম কোয়ারানটিনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে জেলা স্বাস্থ্য বিভাগের তরফে৷