শিলিগুড়ি, 14 জানুয়ারি: সবুজে ঘেরা গভীর জঙ্গল । মাঝে ছোট্ট কাঁচা পথ । সেই আকাঁবাকা পথ ধরে গভীর জঙ্গলের ভিতরে পূজিত হন মা বনদুর্গা । শত শত মানুষের সমাগম ঘটে এই পুজোকে ঘিরে । পুজোর পাশাপাশি বসে মেলাও । শিলিগুড়ি শহর লাগোয়া ডাবগ্রাম-ফুলবাড়ি বিধানসভার অন্তর্গত বৈকণ্ঠপুর অভয়ারণ্যের গভীর জঙ্গলের মধ্যে এই বনদুর্গার মন্দির ৷
এই পুজোর আয়োজন বয়ে নিয়ে আসছে কয়েক দশকের ইতিহাস ৷ মূলত, উত্তরবঙ্গের জলপাইগুড়ি জেলার মানুষের সঙ্গে ভবানী পাঠক ও দেবী চৌধুরানি এই নাম দু'টোর ইতিহাস ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে আছে । তেমনই রয়েছে সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের উপন্যাসে উল্লেখিত দিল্লিভিটা চাঁদের খাল জায়গাটি । সকলের কাছে অপরিচিত হলেও বনদুর্গার মন্দির হিসেবে উত্তরবঙ্গের মানুষের কাছে ভালোই পরিচিত ।
কথিত আছে, এখনকার বনদুর্গা মন্দির সেই সময় ডাকাত সর্দার ভবানী পাঠক ও তাঁর শিষ্যা দেবী চৌধুরানির গোপন আস্তানা ছিল । ইতিহাসে থেকে জানা যায়, দেবী চৌধুরানি নাকি নৌকা করে করতোয়া নদী হয়ে সেখানে আসতেন । এখানে পুজো অর্চনা করতেন । তখন থেকেই এখানে সূচনা হয় পুজোর । প্রথমদিকে অবশ্য ওই এলাকার ঠুনঠুনিয়া গ্রাম নামে পরিচিত ছিল । আর ঠুনঠুনি মা বলে এখানে দেবী পূজিত হতেন । তবে বর্তমানে এই মন্দির বনদুর্গা বলেই সকলের কাছে পরিচিত হয়েছে ।
ইতিহাসের পাতা ঘাঁটলে দেখা যায়, সাহিত্য সম্রাট বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায় তাঁর 'দেবী চৌধুরানি' উপন্যাসেও 'দিল্লিভিটা চাঁদের খাল নামে' এই স্থানের কথা উল্লেখ করেছেন । প্রথমে স্থানীয় রাজবংশী সম্প্রদায়ের মানুষরা ঠুনঠুনির পুজো নামে মন্দিরে পুজোর শুরু করেন । পরবর্তীতে 44 বছর ধরে একটি নতুন কমিটি গঠন করে মা বনদুর্গার নামে পুজোর আয়োজন করে আসছেন উদ্যোক্তারা । এখন বন দফতর, প্রশাসন ও পুলিশ ওই পুজোর আয়োজনে সম্পূর্ণ সহযোগিতা করে থাকে ।
প্রতিবছর পৌষ মাসের পূর্ণিমা তিথিতে রীতিনীতি মেনে জাঁকজমক করে পুজো হয় মন্দিরে । এবার মকর সংক্রান্তির ঠিক আগের দিনে পূজিত হলেন মা বনদুর্গা । বৈকণ্ঠপুর গভীর জঙ্গলের প্রায় আড়াই কিলোমিটার ভেতরে গেলে দেখা মিলবে ওই বনদুর্গা মন্দিরের । বছরের অন্যান্য সময় সেখানে জনমানবশূন্য থাকলেও পুজোর দিন লোক সমাগমে ভরে যায় ।
এই বনদুর্গা পুজো দেখতে জলপাইগুড়ি, দার্জিলিং, কোচবিহার এমনকি পার্শ্ববর্তী রাজ্য অসম থেকেও প্রচুর মানুষ আসে । বছরের শুধু এই দুই দিন নয়, সারা বছর পূর্ণিমাতে সামান্য আকারে পুজো হয় মন্দিরে । একইভাবে 13 জানুয়ারি জাঁকজমকভাবে গত কয়েক দশকের রীতিনীতি মেনে মন্দিরে পুজো হয়েছে । প্রতি বছর গভীর রাতে মন্দিরে পুজো হয় । তবে ভক্তদের কথা মাথায় রেখে এবার সকাল থেকে বিকেল চারটে ও 14 জানুয়ারি সকাল থেকে বিকেল চারটে পর্যন্ত ভক্তদের সমাগম হয় মন্দিরে । মাঝরাতে মন্দিরে ভক্তদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি ছিল ।
পুজো কমিটির সম্পাদক রাজু সাহা বলেন, "প্রতি বছর রাতে পুজোর আয়োজন করা হয় এবং প্রচুর পুণ্যার্থী তথা লক্ষাধিক মানুষের সমাগম হয় । 44 বছর ধরে এই পুজো হয়ে আসছে । এবারে ভক্তবৃন্দদের নিরাপত্তার জন্য সোম ও মঙ্গলবার বিকেল পর্যন্ত পুজো হয় ।"
মেলায় আগত মিঠুন রায় বলেন, "দূর দূর থেকে বহু সন্ন্যাসী এই পুজোয় অংশ নেন । আমরাও দল বেঁধে পুজো দিতে এসেছি ।" মৌমিতা মৈত্র বলেন, "শুনেছি মা খুব জাগ্রত । সমস্ত মনস্কামনা পূরণ হয় । সেজন্য এখানে আসা ।"