বারাসত, 11 অক্টোবর: সাবওয়ের দেওয়াল (Barasat Rail Subway) চুঁইয়ে অবিরাম পড়ে চলেছে বৃষ্টির জল। আর সেই জল থইথই করছে সাবওয়ের ভিতর। দেখে বোঝার উপায় নেই, এটি কোনও খাল নাকি পুকুর ৷ সেই অবস্থাতেই সাবওয়ে পারাপার করতে বাধ্য হচ্ছেন পথচারীরা। এমনই বেহাল দশা উত্তর 24 পরগনা জেলার সদর শহর বারাসতের একমাত্র রেলওয়ে সাবওয়ের।
সাবওয়ের ভিতর জল জমে থাকার দুর্ভোগ কার্যত যেন নরক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে শহরবাসীর কাছে । অভিযোগ, এই যন্ত্রণা 12 মাসের । এক পশলা বৃষ্টিতেই সাবওয়ের অবস্থা বেহাল হয়ে পড়ে । সবকিছু জেনেও হাত গুঁটিয়ে বসে রয়েছে রেল কর্তৃপক্ষ । সমস্যার সমাধানে এখনও পর্যন্ত তেমন কোনও পদক্ষেপ তারা নেয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে । ফলে, দুর্ভোগ যন্ত্রণা রয়েই গিয়েছে।
শহরবাসীর দুর্ভোগ কমাতে আজ থেকে তিন বছর আগে বারাসত 12 নম্বর রেলগেটের ঠিক পাশে করে চালু হয়েছিল রেলের এই সাবওয়েটি । চালু হওয়ার 13 দিনের মাথাতেই সারওয়ের বেআব্রু চেহারা প্রকট হয়ে ওঠে। একদিকে, সাবওয়ের দেওয়াল চুঁইয়ে অনবরত বেরতে শুরু করে বৃষ্টির জল। অন্যদিকে, সাবওয়ের দু-দিকের অ্যাপ্রোচ রোডের বেহাল দশায় প্রাণ ওষ্ঠাগত হয়ে ওঠে পথচারীদের । সেই খবর সবার প্রথমে প্রকাশিত হয়েছিল ইটিভি ভারতেই।
আরও পড়ুন: সরকারি নির্দেশ অমান্য করে পুকুর ভরাট, গড়ে উঠছে বসতবাড়ি; কাঠগড়ায় শাসকদলই
খবরের জেরে সেই সময় অ্যাপ্রোচ রোডের মেরামত হলেও সাবওয়েতে জল জমার মূল সমস্যা থেকেই গিয়েছে। রেলের উচ্চপদস্থ কর্তারা বারাসত স্টেশনে পরিদর্শনে এসে একসময় সাবওয়ের সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দিয়েছিলেন। এমনকী কোথায়ও কোনও ত্রুটি হয়ে থাকলে তা খতিয়ে দেখা হবে বলেও আশ্বস্ত করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু, আশ্বাসই সার! তিন বছর পরও সাবওয়ের সমস্যার সুরাহা হওয়া তো দূরের কথা ৷
উলটে দুর্ভোগ বেড়েছে শহরবাসীর। রেলের যে সাবওয়ে দু'পাড়ের বাসিন্দাদের দুর্ভোগ কমাতে তৈরি হয়েছিল। সেই সাবওয়েই এখন নরক যন্ত্রণা হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে। যেভাবে সাবওয়ের দেওয়াল এবং ছাদ চুঁইয়ে বৃষ্টির জল অনবরত বেরিয়ে চলেছে তাতে যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও করছেন পথচারীরা। আর বিপদ নিয়েই পারাপার চলছে সাবওয়ে দিয়ে। এই নিয়ে রেলের বিরুদ্ধে ক্ষোভও উগরে দিয়েছেন বাসিন্দারা।
এই বিষয়ে সজল কর নামে এক পথচারী বলেন, "সাবওয়ের ভিতরে এক ফুট সমান জলে থইথই করছে। অসুবিধা হলেও বাধ্য হয়েই সেখান থেকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণ না করা হলে সাবওয়ের এই অবস্থা হয় কী করে? দেখছেন না কীভাবে সাবওয়ের দেওয়াল দিয়ে জল বেরোচ্ছে। যে কোনও সময় বড়সড় অঘটন ঘটবে না কে তা বলতে পারে ৷ দ্রুত এই বেহাল সাবওয়ের মেরামত করা জরুরি। রেল কর্তৃপক্ষ সেদিকে নজর দিক, সেটাই আমরা চাই।" একই সুর শোনা গিয়েছে সুপ্রিয়া সাঁতরা নামে অপর এক পথচারীর গলাতেও।
আরও পড়ুন: একযোগে বিধায়ক-পুলিশের অভিযান, গ্রেফতার বেআইনি মাটির কারবারি
অন্যদিকে, রেল কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের তৃণমূল কাউন্সিলর (TMC Councilor) দেবব্রত পাল। তিনি বলেন, "সাবওয়ের সমস্যা নিয়ে সাধারণ মানুষের অভিযোগ পেয়ে বারাসত স্টেশনের রেল আধিকারিকদের সঙ্গে ইতিমধ্যে যোগাযোগ করে বিষয়টি জানিয়েছি তাঁদের। বলেছি অনতিবিলম্বে সাবওয়ের এই জল সমস্যার সুরাহা করতে হবে। এরপরও যদি সমস্যার সমাধানে কোনও উদ্যোগ না নেওয়া হয়, তাহলে আমরা বাসিন্দাদের নিয়ে আন্দোলনে নামতে বাধ্য হব।"
সাবওয়ে নিয়ে রেলের কোথাও গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করেন বিজেপির (BJP) বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস মিত্র। তাঁর মতে, "সাবওয়ে নির্মাণে পরিকল্পনার ক্ষেত্রে কোথায়ও ত্রুটি বিচ্যুতি থাকতে পারে। এটা রেলের ব্যর্থতা বলেই মনে করি। তারপরও বলব, নাগরিক পরিষেবায় যাতে কোনও ব্যাঘাত না ঘটে, সেবিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষের কাছে আমরা দলগতভাবে আবেদন করব। আশা করি রেল দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করবে।"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে বারাসত স্টেশন ম্যানেজার জয়দেব মণ্ডলের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তিনি এই নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া দিতে রাজি হননি।
আরও পড়ুন: গাড়িতে ভুয়ো নম্বর লাগিয়ে কয়লা পাচারের চেষ্টা, আটক 8টি ডাম্পার