বারাসত, 3 ফেব্রুয়ারি: প্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের দৌলতে আজ সবই হাতের মুঠোয় ৷ নিমেষে নানান অজানা তথ্য খুব সহজেই মানুষ পেয়ে যাচ্ছে এখন ৷ আর প্রযুক্তির এই সহজলভ্যতা ফলে হারিয়ে যেতে বসেছে 'সার্কাস'-এর মতো প্রাচীন শিল্পও (Circus Industry Fighting for Existence with Technology) ৷ দিনদিন এর কদর কমতে থাকায় চিন্তা বেড়েছে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত কয়েকশো শিল্পীর ৷ পেটের তাগিদে প্রতিনিয়ত লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন তাঁরা ৷ এই ভেবে যে, একদিন আবার সার্কাসের সুদিন ফিরবে ৷ মানুষ প্রাধান্য দেবে শিল্পীর মাহাত্ম্যকে ৷ প্রাচীন এই খেলাকে বাঁচাতে রাজ্য এবং কেন্দ্রীয় সরকারের একযোগে এগিয়ে আসা উচিত বলে মনে করছেন সাধারণ মানুষ ও সার্কাস কোম্পানিগুলি ৷
গ্রাম বাংলায় একসময় সার্কাস বলতে মানুষ অন্তপ্রাণ ছিল ৷ জীবজন্তু থেকে জিমন্যাস্টিক, স্টান্টবাজির রকমারি খেলা দেখতে লোকজন ভিড় করতেন সার্কাসের শোগুলিতে ৷ মজাও পেতেন দর্শকরা ৷ এখন অবশ্য কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশে সার্কাসে জীবজন্তু পুরোপুরি নিষিদ্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ রয়েছে শুধু স্টান্টবাজি, জিমন্যাস্টিক এবং জোকারের বিভিন্ন মজাদার খেলা ৷ তবে, সার্কাসে জন্তু জানোয়ার নিষিদ্ধ হয়ে যাওয়ায় একদিকে শো-এর সংখ্যা যেমন কমেছে ৷ পাশাপাশি, রুটি-রুজিতেও টান পড়েছে এই পেশার সঙ্গে যুক্ত শিল্পীদেরও ৷
তার উপর করোনা পরিস্থিতি সবকিছু যেন ওলটপালট করে দিয়েছে ৷ টানা দু'বছর অন্যান্য সবকিছুর সঙ্গে এই শিল্পও মুখ থুবড়ে পড়েছে ৷ পেটের তাগিদে অনেকেই আবার পেশা বদল করতে বাধ্য হয়েছেন ৷ লোকসানে চলায় বহু সার্কাস কোম্পানির ঝাঁপও বন্ধ হয়ে গিয়েছে ৷ হাতেগোনা কয়েকটি এখনও টিমটিম করে জ্বলছে ৷ তারই একটি 'ডায়মন্ড সার্কাস' (Diamond Circus) ৷ করোনা পরিস্থিতি কাটিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে মরিয়া এই সার্কাস কোম্পানি ৷ তবে, ইন্টারনেটের যুগে সার্কাসের কদর কমায় দর্শক টানতে ইতিমধ্যে নতুন ভাবনাও আনতে হয়েছে তাদের ৷
ডায়মন্ড সার্কাসে যেমন দর্শকদের মনোরঞ্জনে নিয়ে আসা হয়েছে আফ্রিকান শিল্পীদের ৷ তেমনই আড়াই ফুটের জোকার-সহ মোট তিনজন রয়েছে সেখানে ৷ তা দিয়েই বাজিমাত করতে চাইছে ডায়মন্ড সার্কাস কোম্পানি ৷ ইতিমধ্যে, তাঁদের আসর বসেছে উত্তর 24 পরগনা জেলার সদর শহর বারাসতে ৷ সেখানকার পাইওনিয়ার পার্কের মাঠে তাবু খাটিয়ে চলছে সার্কাসের এই আসর ৷ প্রায় একমাস ধরে সেখানেই দর্শকদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত থাকবেন গৌরাঙ্গ ঘোষ, বেনু দাসের মতো জোকার শিল্পীরা ৷ আক্ষেপ একটাই, শিল্পী হিসেবে সরকারি মর্যাদা না পাওয়ায় ৷
আরও পড়ুন: বারুইপুরে শুরু ঐতিহ্যবাহী রাসমেলা, এবারের চমক আফ্রিকান ডায়মন্ড সার্কাস
এই বিষয়ে গৌরাঙ্গ ঘোষ বলেন, "সার্কাসের শো থেকে যেটুকু আয় হয়, তা দিয়েই কোনও মতে সংসার চলে 6 জনের ৷ এই পেশার সঙ্গে প্রায় 15 বছর জড়িত ৷ তাই, অভাব-অনটন থাকলেও কিছু করার নেই ! আমরা তো আর অন্য পেশাকে বেছে নিতে পারব না ৷ সেই কারণে প্রতিনয়ত লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যেতে হচ্ছে ৷ সরকার যদি একটু আমাদের কথা চিন্তা করত, তাহলে উপকার হত সকলের ৷"
একই সুর শোনা গিয়েছে আরেক সার্কাস শিল্পী বেনু দাসের গলাতেও ৷ তাঁর কথায়, "প্রায় আঠারো বছর হয়ে গেল এই পেশার সঙ্গে যুক্ত রয়েছি ৷ অনেক ঘাত-প্রতিঘাত দেখেছি ৷ তবু পেশা বদল করিনি ৷ কোনও এক সময় সুদিন ফিরবে সার্কাস শিল্পের, এই আশাতেই ৷"
এদিকে, সার্কাসে জীবজন্তু নিষিদ্ধ হওয়ায় প্রভাব যে কিছুটা হলেও এই শিল্পে পড়েছে, তা মেনে নিয়েছেন ডায়মন্ড সার্কাস কোম্পানির ম্যানেজার মোল্লা সাদেক রহমান ৷ তিনি বলেন, "আগে বাঘ, সিংহ, হাতির গর্জন শুনলেই মানুষ টের পেয়ে যেত সার্কাসের আসর বসেছে ৷ এখন সেসব অতীত ৷ তবু, আমরা দর্শকদের মনোরঞ্জনে কোনও খামতি রাখিনি ৷ বারাসতে সার্কাসকে ঘিরে সাধারণ মানুষের যে উৎসাহ উদ্দীপনা রয়েছে, তাতে আশা করছি এই শিল্পের সুদিন ফিরবে অদূর ভবিষ্যতে ৷"