হাড়োয়া, 21 জুলাই : একুশে জুলাইয়ের ভার্চুয়াল সভার পরেই তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষে উত্তপ্ত উত্তর 24 পরগনার হাড়োয়া । সংঘর্ষে বোমা ও গুলি চলার অভিযোগ । ঘটনায় মৃত্যু হয়েছে দুই তৃণমূল সমর্থকের । আহত হয়েছেন 4 জন । পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের নাম লক্ষ্মী বালা (60) ও সঞ্জীব জানা (18) । আহত 4 জনকে হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে । খবর পেয়ে পুলিশ বাহিনী পৌঁছায় ঘটনাস্থানে । পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে নামানো হয়েছে ব়্যাফ (RAF) ।
এলাকার দখলদারি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই বিবাদ চলছিল হাড়োয়ার দুই তৃণমূল নেতা তপন রায় ও যজ্ঞেশ্বর প্রামাণিকের মধ্যে । এদিন সেই বিবাদ ঘিরে সংঘর্ষ বাধে দুই নেতার অনুগামীদের মধ্যে । দু'পক্ষই একে অপরের বিরুদ্ধে হামলা, পাল্টা হামলার অভিযোগ তুলেছে ।
বুধবার দলের শহিদ দিবসের ভার্চুয়াল সভার উপলক্ষ্যে জায়েন্ট স্ক্রিনের বন্দোবস্ত হয় মোহনপুর পঞ্চায়েতের কালিপুর পার্টি অফিসে । দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বক্তব্য শোনার জন্য সেখানে ভিড় করেন তৃণমূল নেতা তপন রায়ের অনুগামীরা । বক্তব্য শোনার পর দুপুরে টেংরামারি এলাকা দিয়ে বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা । অভিযোগ, সেই সময় মোহনপুর অঞ্চলের তৃণমূল সভাপতি যোগেশ্বর প্রামাণিকের অনুগামীরা পথ আটকায় তাঁদের । শুরু হয় বচসা ৷ এর পর পুরোনো বিবাদ চরমে ওঠে । সংঘর্ষ বাধে দু'পক্ষের অনুগামীদের । সংঘর্ষ চলাকালীন একে অপরকে লক্ষ্য করে বোমা ছোড়ে ৷ এবং গুলি চালানো হয় বলে অভিযোগ । গুলি লেগে ঘটনাস্থলেই লুটিয়ে পড়েন লক্ষ্মী বালা ও সঞ্জীব জানা । সংঘর্ষে আহত হন আরও 4 তৃণমূল সমর্থক । গুলিবিদ্ধ ও সংঘর্ষে আহতদের উদ্ধার করে হাড়োয়া গ্রামীণ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় । সেখানে চিকিৎসকরা জানান, গুলিবিদ্ধ দু'জনের মৃত্যু হয়েছে ৷ খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে আসে হাড়োয়া থানার পুলিশ বাহিনী । এলাকায় উত্তেজনা থাকায় নামানো হয় ব়্যাফ ও কমব্যাট ফোর্স ৷
স্থানীয় বাসিন্দা নিশীথ মান্না বলেন, "তৃণমূলের দু'পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে । এখানে বিজেপির কোনও ব্যাপার নেই । দু'জন নিহত হয়েছেন । আহত হয়েছেন আরও তিন থেকে চারজন । এর বেশি জানি না ৷"
ঘটনার জন্য তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি যোগেশ্বর প্রামাণিককে দায়ী করেছেন তৃণমূল নেতা উত্তম প্রধান ৷ বলেন, "অঞ্চল সভাপতি অনুগামীরাই দলের কর্মী-সমর্থকদের লক্ষ্য করে গুলি চালিয়েছে । অঞ্চল সভাপতি দীর্ঘদিন ধরেই দলবিরোধী কাজকর্ম চালিয়ে যাচ্ছেন । ভোটের সময়ও তিনি বিজেপির হয়ে কাজ করেছেন । তিনি নিজের মতো দল চালাচ্ছেন । কারও সঙ্গে কোনওরকম আলোচনা করার প্রয়োজন মনে করেন না । তাঁকে অঞ্চল সভাপতির পদ থেকে সরানোর জন্য আমরা দলকে জানিয়েছে । আমরা চাই, এর একটা বিহিত হোক । এলাকায় শান্তি ফিরে আসুক ।"
আরও পড়ুন: হামলার ঘটনায় পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ সিদ্দিকুল্লা, পথ অবরোধ সংগঠনের
যদিও যাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সেই তৃণমূলের অঞ্চল সভাপতি যোগেশ্বর প্রামাণিকের কোনও প্রতিক্রিয়া মেলেনি । হাড়োয়া থানার পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার তদন্ত শুরু হয়েছে । মৃতদেহ ময়নাতদন্তের জন্য বসিরহাট জেলা হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে । ময়নাতদন্তের রিপোর্ট এলেই বিষয়টি পরিষ্কার হবে ।