বনগাঁ, 30 জুন: "মতুয়া ভাইরা ঠাকুরনগরে পুণ্যভূমিতে কোনও চোরকে ঢুকতে দেয়নি", ঠাকুরনগরে জনসভা থেকে নাম না-করে অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে তুলোধনা করলেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদার ৷ বৃহস্পতিবার সভার প্রথম থেকে তাঁর নিশানায় ছিলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক ৷ তবে বিজেপি সাংসদ একবারও অভিষেকের নাম নেননি ৷ তার বদলে তৃণমূল সাংসদকে 'টুয়েলভ পাশ চোর', 'তৃণমূলের বেবি' বলে আক্রমণ করেন ৷
পাশাপাশি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও একহাত নেন সুকান্ত মজুমদার ৷ বনগাঁ সাংগঠনিক জেলা তৃণমূলের সভাপতি বিশ্বজিৎ দাসও বাদ পড়েননি তাঁর কোপ থেকে ৷ তাঁকে 'মুকুলের চেলা' বলেছেন বিজেপি নেতা ৷ এমনকী বিশ্বজিতের বাড়িতে সিবিআই ও ইডি-র নেমন্তন্ন আসবে বলে হুঁশিয়ার দেন সুকান্ত ৷
ত্রিস্তরীয় পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রচারে উত্তর 24 পরগনার গাইঘাটার ঠাকুরনগর রেল পার্কিংয়ে বুধবার জনসভা করেন সুকান্ত মজুমদার ৷ এদিন তিনি বলেন, "ঠাকুরবাড়িতে একটা টুয়েলভ পাশ চোর ঢুকতে গিয়েছিল ৷ কিন্তু মতুয়া ভাইরা বুঝিয়ে দিয়েছেন, তাঁরা কী করতে পারেন ৷ চোরকে ঢুকতে না দিয়ে মতুয়ারা ঠিক করেছেন ৷ কে জানে চোর যদি ঠাকুরের সোনার গয়না চুরি করে চলে যেত ৷"
আরও পড়ুন: ঠাকুরবাড়িতে তৃণমূল-বিজেপি মতভেদ, রাজনৈতিক দ্বন্দ্বের বলি মতুয়া ভক্তরা
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ঠাকুরনগরে ঠাকুরবাড়ির হরিচাঁদ মন্দিরে পুজো দিতে পারেননি ৷ এ নিয়ে এদিন এমন নজিরবিহীন আক্রমণ করেন সুকান্ত মজুমদার কালীঘাটার কাকু ওরফে সুজয়কৃষ্ণ ভদ্রর ডায়েরিতে 'এবি' লেখা পাওয়া গিয়েছে ৷ সংবাদমাধ্যম সূত্রে তা জানতে পেরেছেন সুকান্ত ৷ এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "কালীঘাটের কাকুর ডায়েরিতে ইডি 'এবি'র নাম পেয়েছে ৷"
তাঁর দাবি, বিজেপি নেতা প্রথমে এই 'এবি' নামের অর্থ বুঝতে পারছিলেন না ৷ এরপর দক্ষিণ 24 পরগনা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন, "একজনের বড় বড় ছবি লাগিয়ে লেখা রয়েছে 'উই লাভ এবি' ৷ তখন সুকান্তর কাছে পরিষ্কার হল এই এবিটা আসলে তৃণমূলের বেবি । তৃণমূল কংগ্রেস নতুন বেবি তার নাম এবি ৷ তিনি আরও ভবিষ্যদ্বাণী করেন, অনুব্রত মণ্ডল ও তাঁর মেয়ে সুকন্যা এখন তিহাড়ে বন্দি ৷ তাঁরা বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার সিনেমার বিখ্যাত 'থালা বাটি কম্বল, জেলখানা সম্বল' ৷ আর কিছুদিন পরে 'পিসি-ভাইপো'ও এই গানটি গাইবেন ৷
আরও পড়ুন: প্রকল্পের কাজ না-করেই টাকা আত্মসাৎ, কাঠগড়ায় তৃণমূল পরিচালিত পঞ্চায়েত
রাজ্য নির্বাচন কমিশন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কাছে 822 কোম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী চেয়েছে, কিন্তু পায়নি ৷ এই প্রসঙ্গে সুকান্ত জানান, কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষে একসঙ্গে 822 কোম্পানি বাহিনী দেওয়া সম্ভব নয় ৷ জম্মু-কাশ্মীর ও মণিপুরে বাহিনী মোতায়েন রয়েছে ৷ সেখান থেকে তাদের উঠিয়ে নেওয়া সম্ভব নয় ৷ তবে বনগাঁতে পঞ্চায়েত নির্বাচনে কেন্দ্রীয় বাহিনীর প্রয়োজন নেই ৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, "আমি বলছি বনগাঁর মতো জেলায় বিজেপির কর্মীরা কেন্দ্র বাহিনীর কাজ করে দেবে ৷"
দলত্যাগ প্রসঙ্গে বিধায়ক বিশ্বজিৎ দাসকে 'গদ্দার' বলে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন সুকান্ত মজুমদার ৷ তিনি কটাক্ষ করেন, তৃণমূলের জেলা সভাপতি বিশ্বজিৎ মুকুল রায়ের পিছনের লেজ ধরে ধরে এসেছিলেন ৷ বিজেপির ভোটে জিতে তিনি তৃণমূলে ফিরে গিয়েছেন ৷ আর তৃণমূলের এমন দুরবস্থা যে বিজেপির টিকিটে জেতা বিধায়ককে জেলা সভাপতি বানাতে হয়েছে ৷
আরও পড়ুন: পঞ্চায়েত ভোটের আগে অনুব্রত থেকে রাজ্যপাল, ইটিভি ভারতে বিস্ফোরক শতাব্দী
বিশ্বজিতের উদ্দেশ্যে সাংসদ বলেন, "গুরুদেব মুকুলবাবুর খবরটা রাখেন তো ! দিল্লিতে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৷ এক কানে জোড়া ফুল, আরেক কানে পদ্মফুল নিয়ে পাগল হয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছেন ৷ কারও সঙ্গে দেখা করতে পারছে না। এরপরে বিশ্বজিৎ দাস কে পরামর্শ দিয়ে বলেন, "যেখানে যাচ্ছেন আপনার কর্মীরা ঝাঁটা দেখাচ্ছে। তাই ওদিকে থেকে বেশি কিছু করতে পারবেন না। সময় আছে এখন ঠিক হয়ে যান। না হলে দেখবেন সৎ রঞ্জনের মত আপনারও কোন সময় সিবিআই ইডি নেমন্তন্ন চলে যাবে ৷"