নিউডাউন, 25 এপ্রিল: তৃণমূল কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় মঙ্গলবার থেকে শুরু করলেন জনসংযোগ যাত্রা ৷ তার আগে তৃণমূলে ‘নবজোয়ার আনতে’ অভিষেকের এই কর্মসূচিকে কটাক্ষ করলেন বিজেপির জাতীয় সহ-সভাপতি দিলীপ ঘোষ ৷ এদিন নিউটাউনের ইকোপার্কে প্রাতঃভ্রমণের পর তিনি বাংলার শাসক দলের সেকেন্ড ইন কমান্ডের এই কর্মসূচি নিয়ে কটাক্ষ করেন ৷ বলেন, ‘‘নতুন তৃণমূল হয়েছে । মমতার তৃণমূল হয়তো উঠে গিয়েছে । ওই নেতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন ।’’
তবে শুধু অভিষেকের জনসংযোগ যাত্রা নয়, একাধিক ইস্যুতে এদিন সকালে তৃণমূল কংগ্রেস ও মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের সরকারের সমালোচনায় তিনি সরব হন ৷ সেই তালিকায় কালিয়াগঞ্জের ঘটনা যেমন রয়েছে, তেমনই রয়েছে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে মমতার বৈঠক, দুর্নীতিতে সিবিআই তদন্তের মতো বিষয়গুলিও ৷
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসংযোগ যাত্রা: এই নিয়ে দিলীপ ঘোষের বক্তব্য, ‘‘নতুন তৃণমূল হয়েছে । মমতার তৃণমূল হয়তো উঠে গিয়েছে । ওই নেতারা বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছেন । তৃণমূল হয়তো এভাবেই আবার সর্বভারতীয় পার্টি হওয়ার চেষ্টা করছে । জানি না এটা কতটা যুক্তিযুক্ত । রাজনীতির ধারা এখন এরকম হয়ে গিয়েছে । আমরা ও বাংলার মানুষ অন্য রাজনীতি দেখে অভ্যস্ত । জানি না কার সঙ্গে সংযোগ করবেন ?’’
এর পরই তাঁর কটাক্ষ, তৃণমূলের যে নেতারা সিবিআইয়ের ডাক পাচ্ছেন, তাঁদের কুশল সংবাদ জানতে গিয়েছেন হয়তো অভিষেক । দলে পুরনো লোক আর কে কে আছেন, হয়তো সেটাই দেখতে গিয়েছেন । পাশাপাশি তিনি অভিযোগ করেছেন, আগে তৃণমূলের থেকে বলা হয়েছিল সব প্রার্থী মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায় ঠিক করবেন ৷ এখন বলা হচ্ছে প্রার্থী মানুষ ঠিক করবেন ৷ আসলে দুর্নীতির ফাঁস থেকে বাঁচতে তৃণমূল নতুন কৌশল নিয়েছে ৷ মেদিনীপুরের সাংসদের আরও দাবি, মানুষ এখন তৃণমূলের থেকে বাঁচতে চাইছেন ৷
কালিয়াগঞ্জ কাণ্ড: উত্তর দিনাজপুরের ওই এলাকায় নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের যে অভিযোগ উঠেছে, তার তদন্তে এসেছে জাতীয় শিশু অধিকার রক্ষা কমিশন ৷ দিলীপ ঘোষের অভিযোগ, সেই কমিশনের চেয়ারপার্সন প্রিয়াঙ্ক কাননুগোর সঙ্গে অসহযোগিতা করছে রাজ্যের পুলিশ ও প্রশাসন ৷ এর আগে তিলজলায় নাবালিকা খুনের ঘটনায় একই ব্যবহার করা হয়েছিল ৷ এই প্রসঙ্গে জলপাইগুড়িতে একই পরিবারের বেশ কয়েকজনের আত্মহত্যার ঘটনার কথা বলেছেন দিলীপ ৷ সেখানেও তৃণমূল নেতারা জড়িত থাকায় পুলিশ আদালতে সুইসাইড নোট পেশ করছে না বলে দিলীপের অভিযোগ ৷
মমতা-নীতীশ বৈঠক: সোমবার নবান্নে বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে বৈঠক করেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ৷ সেই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন বিহারের উপ মুখ্যমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা তেজস্বী যাদবও ৷ এই নিয়ে কটাক্ষ করেছেন মেদিনীপুরের সাংসদ ৷ তাঁর বক্তব্য, ‘‘এর আগে সিপিএমের হরকিষণ সিং সুরজিত ঠিক এই জিনিসটাই করতেন । এই করে করে তাঁর নিজের পার্টি উঠে গেল । গত বার আমরা দেখলাম মমতা সেই রোল প্লে করেছেন । পটনা, মুম্বই, লখনউ ঘুরে বেড়ালেন । তাঁর এক ডজন সিট কমে গেল । পার্টিটা লোকাল পার্টি হয়ে গেল । এখন নীতীশ কুমারের হাতে কোনও কাজ নেই । একজন ছোকরা তাঁকে ধাক্কা মারছেন, সরিয়ে দেওয়ার জন্য। তাই তিনি তীর্থযাত্রায় বেরিয়েছেন ।’’ পাশাপাশি রাজনৈতিক বৈঠক কেন বাংলার মুখ্য প্রশাসনিক ভবন নবান্নে হল, সেই প্রশ্নও তুলেছেন দিলীপ ৷
তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ: আরামবাগের সাংসদ অপরূপা পোদ্দারের বিরুদ্ধে যে মামলা হয়েছে কলকাতা হাইকোর্টে, সেই নিয়ে দিলীপ ঘোষ বলেন, ‘‘সবার কোটা হয় কীভাবে ? ড্রাইভারের কোটা, পিয়নের কোটা । সারা দেশে তো এই সিস্টেম উঠে গিয়েছে । এখানে আছে কীভাবে ? এই ধরনের যত নিয়োগ হয়েছে, তার তদন্ত হওয়া উচিত ।’’ অন্যদিকে পৌরসভায় নিয়োগ নিয়েও সিবিআই তদন্ত প্রসঙ্গে দিলীপের বক্তব্য, ‘‘বিশাল দুর্নীতিতে নেতা-নেত্রীরা লাভবান হয়েছে । কোর্টে একটার পর একটা কেস হয়েছে । যখন থেকে তৃণমূল ক্ষমতায় এসেছে, দুর্নীতির আখড়া চলছে । যতগুলি নিয়োগ হয়েছে, সব তদন্ত হওয়া উচিত ।’’
আরও পড়ুন: দুর্নীতির টাকা দিয়ে বিলাসী বাস ও 292 তাঁবু খাটিয়ে জনসংযোগ, অভিষেককে কটাক্ষ দিলীপের