বারাসত, 27 অক্টোবর : প্রকাশ্যে BJP-র গোষ্ঠীকোন্দল । এবার দলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শংকর চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ আনলেন দলেরই কর্মী মণীশ কুমার হালদার । অভিযোগ, বিভিন্ন সময়ে দলের নাম করে তাঁর কাছ থেকে মোটা টাকা নিয়েছেন শংকরবাবু । যার পরিমাণ প্রায় 12 লাখ 70 হাজার টাকা । আরও অভিযোগ, সেই টাকা চাইতে গেলে ওই BJP কর্মীকে হুমকির মুখে পড়তে হয়েছে । রীতিমতো মারধর ও প্রাণনাশের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে জেলা সভাপতি ঘনিষ্ঠ এক BJP নেতার বিরুদ্ধে । যার জেরে এখন আতঙ্কে দিন কাটছে ওই BJP কর্মীর । ইতিমধ্যে সুবিচারের আশায় জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন তিনি । অভিযোগও দায়ের করেছেন বারাসত থানায় । তবে, পুলিশ জেলা সভাপতি শংকর চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ না নিয়ে শুধু মারধর ও হুমকির অভিযোগ দায়ের করেছে বলে দাবি আক্রান্ত ওই BJP কর্মীর । যদিও তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ অস্বীকার করে এর পিছনে শাসকদলের চক্রান্তের অভিযোগ এনেছেন শংকর চট্টোপাধ্যায় ।
ঘটনার সূত্রপাত আজ থেকে প্রায় তিন বছর আগে । সেই সময় বারাসত সাংগঠনিক জেলার সম্পাদক পদে ছিলেন শঙ্করবাবু । তখন সভাপতি ছিলেন প্রদীপ বন্দোপাধ্যায় । আর জেলা কমিটির সদস্য ছিলেন মণীশ কুমার হালদার । সম্পাদক পদে থাকাকালীন শংকর চট্টোপাধ্যায় তাঁর কাছ থেকে বিভিন্নভাবে মোটা অঙ্কের টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ । দলের নাম করে কখনও তিন হাজার আবার কখনও চার হাজার টাকা নিয়েছেন মণীশবাবুর কাছ থেকে । জেলা সভাপতি হওয়ার পরও সেই টাকা শংকর চট্টোপাধ্যায় নিয়মিত নিয়ে গিয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে । এই ভাবে প্রায় 12 লাখ 70 হাজার টাকা তাঁর কাছ থেকে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন BJP কর্মী মণীশ হালদার । অভিযোগ, বারবার পাওনা টাকা ফেরতের কথা বলা হলেও শংকরবাবু কোনও পাত্তা দেননি । উলটে জুটেছে হুমকি ও মারধর ।
20 অক্টোবর বারাসতেই প্রকাশ্যে ওই BJP কর্মীকে আক্রান্ত হতে হয় জেলা সভাপতি ঘনিষ্ঠ দলীয় নেতা বাবলু সাহার হাতে । সেদিন মারধরের পাশাপাশি তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও অভিযোগ । এর জেরে আতঙ্কিত হয়ে 21 অক্টোবর বারাসত থানায় দলের জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে যান আক্রান্ত ওই BJP কর্মী । তবে, পুলিশ শংকর চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ দায়ের করেনি বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি । পরিবর্তে শুধু তাঁর ঘনিষ্ঠ BJP নেতা বাবলু সাহার বিরুদ্ধে মারধর ও হুমকির অভিযোগ দায়ের হয়েছে । যা নিয়ে পুলিশের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়েছেন মণীশ হালদার ।
এদিকে সুবিচারের আশায় জেলা পুলিশ সুপারের দ্বারস্থ হয়েছেন ওই BJP কর্মী । এই বিষয়ে মণীশবাবু বলেন,"প্রাণনাশের হুমকির পর থেকে আতঙ্কের মধ্যে রয়েছি । যে কোনও সময় জেলা সভাপতির লোকজন ফের আমার উপর হামলা চালাতে পারে । আশা করছি, জেলা পুলিশ সুপার নিশ্চয় কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন । এখন পাওনা ওই টাকাই আমার কাছে সম্বল । সেই টাকা পেলে আমার পরিবার উপকৃত হবে ।"
যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করে BJP-র বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শংকর চট্টোপাধ্যায় বলেন,"ওঁর সঙ্গে প্রায় দু'বছর ধরে আমার কোনও সম্পর্ক নেই । ওঁকে ঠিকমতো চিনিও না । ফলে কারও প্ররোচনাতেই উনি এমন অভিযোগ করছেন আমার বিরুদ্ধে ।" এর পিছনে শাসকদলের একাংশের হাত রয়েছে বলেও মনে করছেন তিনি । শংকরবাবুর কথায়,"গতবার উনি (মণীশ হালদার ) জেলা কমিটিতে ছিলেন । জেলা কমিটি থেকে বাদ পড়ার আক্রোশেই মিথ্যা অভিযোগ এনে কালিমালিপ্ত করা হচ্ছে আমাকে । আমি যে টাকা নিয়েছি তার যদি কোনও প্রমাণ উনি দেখাতে পারেন, তাহলে আমি দল করাই ছেড়ে দেব ৷ " মিথ্যা অভিযোগ করার জন্য ওই BJP কর্মীর বিরুদ্ধে মানহানির মামলা করারও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জেলা সভাপতি ।
এর আগেও দলের জেলা সভাপতি শংকর চট্টোপাধ্যায়ের কার্যকলাপের বিরুদ্ধে ক্ষোভ উগরে দিয়ে বিক্ষোভে সামিল হয়েছিলেন তাঁর বিরুদ্ধ গোষ্ঠীর নেতা ও কর্মীরা । এমনকী বনগাঁর BJP সাংসদ শান্তনু ঠাকুরের কাছে জেলা সভাপতির বিরুদ্ধে নালিশও করেছিলেন তাঁরা । এরপরও শংকর চট্টোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ বিক্ষোভ ক্রমশ বেড়েছে BJP-র অন্দরে । এই বিষয়ে জেলা সভাপতি বলেন,"যারা দলে পদ পায়নি তাদেরই কয়েকজন তৃণমূলের থেকে টাকা নিয়ে বিশৃঙ্খলা তৈরির চেষ্টা করছে । দলের তরফে তাদের চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে । এই ধরনের ঘটনা বরদাস্ত করা হবে না দলের অভ্যন্তরে ।"
অন্যদিকে, BJP-র এই অভ্যন্তরীণ কোন্দলকে কটাক্ষ করতে ছাড়েনি শাসকদল । এই বিষয়ে জেলা তৃণমূলের মুখপাত্র ও বারাসত পৌরসভার প্রশাসক সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন,"দলের স্বার্থে নয় । আজ যারা BJP করতে আসছে তাদের কাছে প্রধান বিষয় দাঁড়িয়েছে দ্রুত টাকা কামানো । শংকর চট্টোপাধ্যায়ের মতো ওদের দলে অনেকেই রয়েছে যাদের বিরুদ্ধে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে । ওদের বিষয়ে তৃণমূলের নাক গলানোর কোনও দরকার নেই । জেলা সভাপতি সংগঠন বোঝেন কি না আমার সন্দেহ রয়েছে । তাই ওঁর সম্পর্কে যত কম কথা বলা যায় ততই ভালো ।"