বারাসত, 6 অগস্ট : 42 দিন ধরে যমে-মানুষে লড়াই শেষ ৷ জীবন যুদ্ধে হার মানলেন তৃণমূলের হামলায় আহত বিজেপি নেতা মহম্মদ আলি (42) ৷ শুক্রবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর ৷ হাসপাতাল সূত্রে খবর, আঘাতের জেরে মস্তিষ্কে রক্ত জমাট বাঁধার কারণে বিভিন্ন অঙ্গ প্রতঙ্গের স্বাভাবিক কাজকর্ম বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ওই বিজেপি নেতার ৷ শেষ পর্যন্ত মাল্টিঅর্গান ফেলিওর হওয়ায় মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন তিনি ৷ তাঁর মৃত্যু নিয়ে রাজনৈতিক চাপানউতোর শুরু হয়েছে বারাসতে ৷ তৃণমূল ও বিজেপি, উভয়েই একে-অপরের ঘাড়ে দোষ চাপিয়েছে ৷
আরও পড়ুন : Political Murder : খয়রাশোলে বিজেপির বুথ সভাপতির ঝুলন্ত দেহ উদ্ধার
বিধানসভা ভোটের ফলাফল ঘোষণা হতেই রাজনৈতিক অশান্তি বাড়তে শুরু করে উত্তর 24 পরগনা জেলায় ৷ ব্যতিক্রম ছিল না জেলা সদর বারাসতও ৷ অভিযোগ, শাসকদলের মদতপুষ্ট দুষ্কৃতীদের হামলায় ঘরছাড়া হতে হয় বারাসতের বিভিন্ন এলাকার কয়েকশো বিজেপি কর্মীকে ৷ দীর্ঘদিন ঘরছাড়া থাকার পর শেষে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে ধাপে ধাপে ঘরছাড়া কর্মীদের বাড়ি ফেরানোর ব্যবস্থা করে পুলিশ প্রশাসন ৷ গত 17 জুন বারাসতের প্রায় 80 জন ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীকে বাড়ি ফেরানো হয় পুলিশের উপস্থিতিতে ৷ এঁদের মধ্যে পৌরসভার 7 নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মহম্মদ আলিও ছিলেন ৷ তিনি বিজেপির বারাসত পশ্চিম মণ্ডলের সংখ্যালঘু মোর্চার সভাপতির দায়িত্বে ছিলেন ৷
বাড়ি ফেরার সপ্তাহ খানেক যেতে না যেতে ফের আলির উপর হামলা হয় ৷ অভিযোগ, তৃণমূল আশ্রিত দুষ্কৃতীরা তাঁকে বেধড়ক মারধর করে ৷ দুষ্কৃতীদের হামলায় জখম হন আরেক বিজেপি কর্মী জুলফিকার আলিও ৷ তাঁর আঘাত গুরুতর না হলেও মহম্মদ আলির মাথায় ও বুকে গুরুতর চোট লাগে ৷ আহত দু’জনকেই ভর্তি করা হয় বারাসত জেলা হাসপাতালে ৷ কিন্তু, অবস্থার অবনতি হওয়ায় সেখান থেকে আহত বিজেপি নেতা মহম্মদ আলিকে স্থানান্তরিত করা হয় বারাসতের একটি বেসরকারি হাসপাতালে ৷ সেখানে তাঁর বেশ কয়েক দিন চিকিৎসা চললেও শারীরিক অবস্থার কোনও উন্নতি হয়নি ৷ উল্টে, চিকিৎসার খরচ বাড়তে থাকায় ফের তাঁকে ভর্তি করা হয় বারাসাত জেলা হাসপাতালে ৷ সম্প্রতি সেখান থেকে ওই বিজেপি নেতাকে নিয়ে যাওয়া হয় কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ৷ সেখানে বেশ কিছুদিন ভর্তি থাকার পর এদিন সকালে মৃত্যু হয় তাঁর।
বিজেপি নেতার মৃত্যুর জন্য সরাসরি শাসকদলকে কাঠগড়ায় তুলেছেন বিজেপির বারাসত সাংগঠনিক জেলার সহ-সভাপতি প্রতীপ চট্টোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘হাইকোর্টের নির্দেশে ঘরছাড়া বিজেপি কর্মীরা ঘরে ফিরলেও তাঁদের উপর ফের হামলা হচ্ছে ৷ এর থেকেই বোঝা যায় রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা কোথায় পৌঁছেছে ৷ স্থানীয় তৃণমূল কো-অর্ডিনেটরের ইন্ধনেই শাসকদলের দুষ্কৃতীরা হামলা চালিয়েছে দলের সংখ্যালঘু নেতার উপর ৷ পুলিশ সবকিছু জানে ৷ তা সত্ত্বেও দোষীদের বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না ৷ তৃণমূল না মানে আইন, না মানে হাইকোর্টের আদেশ ৷ এর বিরুদ্ধে আমরা প্রতিবাদ আন্দোলন গড়ে তুলব ৷’’
আরও পড়ুন : TMC Worker Killed : বিরাটিতে খুন তৃণমূল কর্মী, হাসপাতালে আটক এক দুষ্কৃতী
যদিও ঘটনার সঙ্গে কোনও রাজনীতির সম্পর্ক নেই বলেই দাবি করেছেন বারাসত শহর তৃণমূলের সভাপতি ও পৌরসভার প্রশাসক মণ্ডলীর সদস্য অশনি মুখোপাধ্যায় ৷ তিনি বলেন, ‘‘সম্পূর্ণ অরাজনৈতিক একটি ঘটনায় রাজনীতির রং লাগানোর চেষ্টা করছে বিজেপি ৷ ওরা রাজ্যে অশান্তির বাতাবরণ সৃষ্টি করতে চাইছে ৷ যিনি মারা গিয়েছেন, তিনি কোনদিনও বিজেপি করতেন না ৷ দুই বন্ধুর মদ খাওয়া নিয়ে গন্ডগোলের জেরেই এই ঘটনা ৷ এই মৃত্যুর জন্য যদি কেউ দায়ী থাকেন, তাহলে তিনি হলেন বিজেপি কর্মী জুলফিকার আলি ৷ ওঁর বিরুদ্ধেই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত প্রশাসনের ৷’’ তবে তৃণমূল যাই বলুক, মৃতের পরিবার কিন্তু ঘটনার জন্য শাসকদলকেই অভিযুক্ত করছে ৷