হালিশহর, 14 ডিসেম্বর: সংসদে হামলার চেষ্টায় তদন্ত যত এগোচ্ছে, ততই সামনে আসছে এই ঘটনার সঙ্গে বাংলার যোগাযোগ ৷ এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত ললিত ঝা কলকাতায় বেশ কিছুদিন ছিলেন বলে আগেই জানা গিয়েছিল ৷ সেই সূত্রে এবার সামনে এল আরও দু’টি নাম ৷ তাঁদের একজন নীলাক্ষ আইচ ৷ আর দ্বিতীয়জন নীলাক্ষর এক বান্ধবী ৷ এই দু’জনের সঙ্গে গত কয়েকমাসে বেশ কয়েকবার ললিতের যোগাযোগ হয়েছে বলে জানা গিয়েছে ৷
কে এই নীলাক্ষ আইচ ? উত্তর 24 পরগনার হালিশহরের বাসিন্দা ৷ বিধাননগর গর্ভনমেন্ট কলেজের দ্বিতীয়বর্ষে ইংরেজি অনার্সের ছাত্র ৷ কেন তাঁর নাম সংসদে হামলার সঙ্গে জুড়ে গেল ? উঠছে সেই প্রশ্নও ৷ জানা গিয়েছে, সংসদে হামলার মূল অভিযুক্ত ললিত ঝা ওই ঘটনার ভিডিয়ো প্রথম পাঠিয়েছিলেন নীলাক্ষকে ৷ আর এখান থেকেই নীলাক্ষর সম্বন্ধে সন্দেহ ক্রমশ দানা বাঁধতে শুরু করেছে ৷
প্রশ্ন উঠছে, তাহলে কি এই হামলার ছক কষার সময় নীলাক্ষও জানতেন সবকিছু ? নীলাক্ষ অবশ্য পুরোটাই অস্বীকার করেছেন ৷ তাঁর দাবি, ‘‘আমাকে একটা ভিডিয়ো পাঠিয়েছিলেন (ললিত ঝা) ৷ সেটা দেখতে বলেছিলেন ৷’’ কিন্তু তাঁকেই কেন ভিডিয়ো পাঠালেন ললিত ? এই প্রশ্নের সদুত্তর অবশ্য মেলেনি এখনও ৷
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় নীলাক্ষর বাড়িতে হাজির হন রাজ্য পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিক ৷ তিনি বেশ কিছুক্ষণ নীলাক্ষর বাড়িতে ছিলেন ৷ তিনি কথা বলেন নীলাক্ষার সঙ্গে ৷ পরে তিনি জানান, দিল্লি পুলিশের তরফে রাজ্য পুলিশের শীর্ষকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছে ৷ গোয়েন্দা বিভাগের ওই আধিকারিক এর থেকে বেশি কিছু জানাতে রাজি হননি ৷ তবে মনে করা হচ্ছে যে দিল্লি পুলিশ যোগাযোগ করতেই উপরতলার নির্দেশে তিনি সেখানে তদন্তে গিয়েছিলেন ৷
উল্লেখ্য, বুধবার দুপুরে লোকসভার ভিতরে সাগর শর্মা ও ডি মনোরঞ্জন নামে দু’জন হামলার চেষ্টা করে ৷ বাইরে সেই সময় স্লোগান দিচ্ছিলেন নীলম ও অমল শিন্ডে নামে দু’জন ৷ চারজনকেই গ্রেফতার করে দিল্লি পুলিশ ৷ তদন্তে উঠে আসে ললিত ঝা নামে বিহারের এক যুবকের নাম ৷ অভিযুক্ত চারজন যে বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছিলেন, সেই বাড়ির মালিককে পুলিশ গ্রেফতার করলেও এখনও ললিত পলাতক ৷
তদন্তের সূত্র ধরে পুলিশের কাছে ললিতের সঙ্গে কলকাতার যোগাযোগ উঠে আসে ৷ বেশ কয়েকবছর বড়বাজার এলাকায় ভাড়া থাকতেন তিনি ৷ সেই নিয়ে দিল্লি পুলিশ ইতিমধ্যেই কথা বলেছে কলকাতা পুলিশের সঙ্গে ৷ সেই বিষয়ে তদন্তও শুরু হয়েছে ৷ মনে করা হচ্ছে, কলকাতায় থাকার সময়ই নীলাক্ষর সঙ্গে পরিচয় হয় ললিতের ৷
এই নিয়ে নীলাক্ষর বক্তব্য, ‘‘আমার সঙ্গে ললিত ঝা-এর পরিচয় হয় এপ্রিল মাসে ৷ সেন্ট্রাল অ্যাভিনিউতে ভারত সভা হলে একটি অনুষ্ঠানে পরিচয় হয় ৷ উনি সেখানে ওই অনুষ্ঠান আয়োজনে সাহায্য করেছিলেন ৷ তখন আমাদের এনজিও-তে যোগ দেওয়ার আহ্বান জানাই ৷’’ নীলাক্ষ আরও জানিয়েছে যে তাঁর এক বান্ধবীর সঙ্গেও ললিতের পরিচয় ছিল ৷ ওই বান্ধবীও কলেজ পড়ুয়া ৷ তবে তিনি ইতিহাস বিভাগের ছাত্রী ৷
নীলাক্ষর বাবা নিলয় আইচ বলেন, ‘‘এনজিও ফেসবুকের মাধ্যমে করে ৷ সাম্যবাদী সুভাষ সভা ছিল ওই এনজিও-র নাম ৷ অনেকে মিলে এটা তৈরি করেছিল ৷ বিনামূল্যে পড়াত ৷ ললিত ঝা-কে তো চিনিই না ৷’’ সত্যিই কি কোনও পরিচয় ছিল না ? শুধুই এনজিও-র সূত্রে আলাপ ? উত্তর খুঁজছেন তদন্তকারীরা ৷ আর নীলাক্ষও বলেছেন, ‘‘আমার সঙ্গে দিল্লি পুলিশের একজন যোগাযোগ করেছেন ৷ তদন্তে সবরকম সহযোগিতা করব৷ যা জানি সব বলব ৷’’
আরও পড়ুন: