বারাসত, 21 অগাস্ট : সামান্য বৃষ্টি হলেই সাবওয়ের ছাদ চুঁইয়ে পড়তে থাকে জল । ভারী বৃষ্টি হলে তো আর কথায় নেই । সাবওয়ের দু'পাশের কংক্রিটের দেওয়ালের ফুটো থেকে ফোয়ারার মতো জল পড়তে শুরু করে । কার্যত জলে ভাসে সাবওয়ের ভিতর । নিম্নচাপের জেরে টানা দু'দিনের বৃষ্টিতে এমনই অবস্থা দাঁড়িয়েছে বারাসত রেলের সাবওয়ের । নিরুপায় হয়ে জল ডিঙিয়েই সাবওয়ের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যেতে হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের । এই অবস্থায় সাবওয়ে পারাপার রীতিমতো আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে তাঁদের কাছে । কারণ, অনবরত জল চুঁইয়ে পড়তে থাকায় যে কোনও সময় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কাও উড়িয়ে দিতে পারছেন না তাঁরা । সবকিছু জেনেও এবিষয়ে রেল কর্তৃপক্ষ উদাসীন বলে অভিযোগ । বিষয়টি খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক ।
বারাসত 12 নম্বর রেলগেটের কাছে সাবওয়ের দাবি ছিল দীর্ঘদিনের । দ-দু'বার শিলান্যাসও হয়েছিল । কিন্তু তারপরও সাবওয়ের মুখ দেখেননি বারাসতের বাসিন্দারা । দীর্ঘ টালবাহানা ও জটিলতা কাটিয়ে অবশেষে সাবওয়ের ছাড়পত্র মেলে । রেলের ট্র্যাক সরিয়ে শুরু হয় সাবওয়ের নির্মাণের কাজ । 2019 সালের 16 জুলাই চালু হয় রেলের নবনির্মিত এই সাবওয়ে । চালু হওয়ার 13 দিনের মাথাতেই ত্রুটি ধরা পড়তে শুরু করে । একটু বৃষ্টিতেই সাবওয়ের ছাদ চুঁইয়ে জল পড়তে শুরু করে । দু'পাশের অ্যাপ্রোচ রোডের অব্যবস্থা নিয়েও অভিযোগ ওঠে । পরে অ্যাপ্রোচ রোড মেরামত করা হলেও এখনও পর্যন্ত সাবওয়ে মেরামত হয়নি ।
সাবওয়ে নির্মাণের প্রথম থেকেই দুর্নীতির অভিযোগ করে আসছে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি থেকে শুরু করে বাসিন্দাদের একাংশ । তাঁদের অভিযোগ, "নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে নির্মাণকাজ হওয়ার ফলেই রেলের সাবওয়ের এই বেহাল দশা । এই নিয়ে তাঁরা স্মারকলিপিও জমা দিয়েছিলেন রেল কর্তৃপক্ষের কাছে । আশ্বাসও দেওয়া হয়েছিল বিষয়টি খতিয়ে দেখার । কিন্তু কোনও লাভ হয়নি ।" ফলে বিষয়টি অজানা নয় রেলের । তা ছাড়া সাবওয়ের নির্মাণ নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন শিয়ালদা ডিভিশনের তৎকালীন DRM প্রভাস দানসেনা । প্রায় একবছর আগে যাত্রী সুরক্ষার হালহকিকত জানতে বারাসত স্টেশনে পরিদর্শনে এসেছিলেন তিনি । সেই সময় খতিয়ে দেখে সাবওয়ের নির্মাণে ত্রুটির কথা স্বীকার করেছিলেন তিনি । এমনকী ত্রুটি মেরামতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপের আশ্বাসও দিয়েছিলেন তৎকালীন DRM । কিন্তু তারপরও রেল কর্তৃপক্ষের হুঁশ ফেরেনি বলে অভিযোগ । নেওয়া হয়নি কোনও উদ্যোগও । যার জেরে সমস্যায় নিত্যযাত্রী থেকে সাধারণ মানুষ ।
এই নিয়ে আন্দোলনও হয়েছিল । পথেও নেমেছিলেন অনেকে । কিন্তু তাতেও রেল কর্তৃপক্ষের ঘুম ভাঙেনি । যা নিয়ে ক্ষোভ রীতিমতো বাড়ছে । এবিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা বাসুদেব কর্মকার বলেন, মানুষের সুরক্ষার দিকে নজর না দিয়ে এই সাবওয়ে নির্মাণ করা হয়েছে । যেভাবে নিম্নমানের সামগ্রী দিয়ে সাবওয়ে নির্মাণ হয়েছে তাতে যেকোনও সময় বড়সড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে । বিপদ হাতে নিয়েই মানুষকে একপ্রকার যাতায়াত করতে হচ্ছে সাবওয়ে দিয়ে । সকলেই জানে বিষয়টি । কিন্তু এখনও পর্যন্ত মেরামতের কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি । সাবওয়ে নির্মাণে দুর্নীতি হয়েছে বলেও অভিযোগ করেন তিনি । তাঁর কথায় "দুর্নীতি ছাড়া এখন কোনও কাজ হয় নাকি? বৃষ্টি হলেই জল চুঁইয়ে পড়তে শুরু করে সাবওয়ের ভিতরে । এখন তো জল থইথই করছে । এই অবস্থাতেও নিরুপায় হয়ে সাবওয়ে ব্যবহার করতে হচ্ছে । সবচেয়ে সমস্যায় পড়েন বয়স্করা । অনেকে যাতায়াত করতে গিয়ে হোঁচট খেয়ে পড়েও যান ।"
সাবওয়ে নির্মাণে রেলের ত্রুটি ও গাফিলতি রয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বারাসত পৌরসভার প্রশাসক বোর্ডের সদস্য ও প্রাক্তন উপ পৌরপ্রধান অশনি মুখোপাধ্যায় । তিনি বলেন, "চালু হওয়ার পর থেকেই রেলের সাবওয়ে নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছে । বিষয়টি জানতে পেরে আমরা সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের নজরে আনি । তিনি একাধিকবার চিঠি দিয়ে রেল কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন । কিন্তু সেখান থেকে কোনও সদুত্তর পাওয়া যায়নি । ফলে, সমস্যা মেটেনি ।" তাঁর কথায়, "সাবওয়ের ওয়াটার লগিংয়ের সমস্যা মেটাতে পৌরসভার তরফে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল । কিন্তু তাতেও সহযোগিতা মেলেনি রেল কর্তৃপক্ষের । "
বিষয়টি নিয়ে পূর্ব রেলের মুখ্য জনসংযোগ আধিকারিক নিখিল চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, "বিষয়টি খতিয়ে দেখতে রেলের ইঞ্জিনিয়ারদের সেখানে পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে । সাবওয়ের কোথাও ত্রুটি, কী ধরনের ত্রুটি তা খতিয়ে দেখবেন তাঁরা । এরপরই ত্রুটি মেরামতের কাজে হাত দেওয়া হবে । আশা করা যায় দ্রুত সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে ।"