বারাসত, 13 সেপ্টেম্বর: পেশায় তিনি একজন চিকিৎসক । তিনিই আবার দুর্গা প্রতিমা গড়ে চলেছেন বছরের পর বছর ধরে । বলা ভালো, চিকিৎসকের হাতের ছোঁয়ায় মৃন্ময়ী রূপ পাচ্ছে দেবীদুর্গা ও তাঁর সন্তানেরা । চিকিৎসকের এমন প্রতিভা তাক লাগিয়ে দিয়েছে সকলকে (Barasat Doctor making Durga idol) ।
তিনি চিকিৎসক অনুপম ধর । বাড়ি বারাসতের নবপল্লী ভদ্রবাড়ি সংলগ্ন এলাকায় । তাঁর নিপুণতা ও দক্ষতায় সেজে উঠছে পারিবারিক দুর্গা পুজোর প্রতিমা । চিকিৎসকের দায়িত্ব নিষ্ঠার সঙ্গে পালন করে সময় বের করে তিনি এই দুর্গা প্রতিমা গড়ছেন নিজের বাড়িতেই । তাঁর প্রতিমা গড়ার দক্ষতা দেখে উচ্ছ্বসিত পরিবারের সদস্যরাও । প্রশংসা করতেও ভুলছেন না তাঁরা ।
বংশ পরম্পরা সূত্রে হওয়া ধর পরিবারের এই পুজো প্রায় 20 ধরে হয়ে আসছে বারাসতের বাড়িতে । আগে বাড়িতে ঘট পুজো হলেও এখন সেই পুজোয় হচ্ছে কাঠামোর ওপ দুর্গা প্রতিমা গড়ে । তাও প্রায় সাত বছর ধরে । আর এই সাত বছরে বাড়ির প্রতিটি দুর্গা প্রতিমায় গড়ে উঠেছে চিকিৎসক অনুপম ধরের হাতে । এবারও তার ব্যক্তিক্রম হয়নি ।
পরিবার সূত্রে খবর, পাঁচ বছর ধরে পুরুলিয়ার দেবেন মাহাতো মেডিক্যাল কলেজ এবং হাসপাতালের এসএনসিইউ বিভাগে কর্মরত রয়েছেন চিকিৎসক অনুপম ধর । তার আগে তিনি দিল্লির ইএসআই হাসপাতালে জুনিয়র রেসিডেন্ট হিসেবেও কর্মরত ছিলেন । চিকিৎসার শত ব্যস্ততা । সেখান থেকে সময় বের করে অনুপম প্রতিবছরই পুজোর আগে বারাসতের বাড়িতে চলে আসেন দুর্গা প্রতিমা গড়ার টানে । তারপরই শুরু হয়ে যায় প্রতিমা গড়ার তোড়জোড় । যার ব্যক্তিক্রম ঘটেনি এবছরও (Durga Puja 2022) ।
পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ছোটবেলা থেকেই মাটির প্রতি আলাদা টান ছিল অনুপমের । মাটি দিয়ে যে কোনও জিনিস অনায়াসেই তৈরি করে ফেলত তিনি । ক্রমেই তা পরিণত হয়েছে নেশায় । সেই নেশা চিকিৎসক হওয়ার পরও এতটুকু কমেনি অনুপমের । প্রতিমা গড়া হোক কিংবা মাটির যে কোনও জিনিস । সেই নেশা যেন এখন চিকিৎসকের প্রতিভায় পরিণত হয়েছে । যা হার মানাবে প্রতিমা শিল্পীর কারিগরদেরও ।
এদিকে, যার হাতের ছোঁয়ায় পারিবারিক দুর্গা পুজোর প্রতিমা একটু একটু করে তার মৃন্ময়ী রূপ পায়, সেই চিকিৎসক অনুপম ধর বলেন, "ছোটবেলা থেকেই মাটির কাজ করতে আমার খুব ভালো লাগত । সেটার এখন আমার শখে পরিণত হয়েছে । সাত বছর ধরে বাড়ির দুর্গা প্রতিমা গড়ে চলেছি । তার আগে তৈরি করেছি বাড়ির কালী প্রতিমা । এটা এমন একটা অনুভূতি, যা মুখে প্রকাশ করা যায় না ।"
চিকিৎসক আরও বলেন, "যেহেতু পেশার দিকটাও আমাকে সামলাতে হয় সেহেতু এই প্রতিমা গড়তে সময় লেগে যায় তিন থেকে চার মাস । কখনও কখনও প্রতিমা গড়ার সময় এতটাই মনোযোগ হয়ে যায় যে নাওয়া-খাওয়াও ভুলে যেতে বসি । পুজোর পাঁচটা দিন পরিবার, আত্মীয় স্বজন নিয়ে বাড়িতেই আনন্দ করে থাকি । বাংলাদেশে শুরু হওয়া পারিবারিক এই পুজোয় এখন আমরা বহন করে চলেছি ।"
আরও পড়ুন: ওষুধের র্যাপার দিয়ে 4 ইঞ্চির দুর্গাপ্রতিমা, তাক লাগালেন কোচবিহারের গৃহবধূ
অন্যদিকে, পারিবারিক এই পুজোর আচার আচরণের বিষয়ে চিকিৎসক অনুপমের দিদি পান্না ধর বলেন, "ষষ্ঠী থেকে নবমী পুজোর এই চারটে দিনই মায়ের জন্য ভোগ করা হয় । সঙ্গে থাকে পায়েস,পিঠে-পুলি । সন্ধি পুজোর সময় চাল-কুমড়ো বলি দেওয়া হয় । মাকে বরণ করা হয় 108টি পদ্ম দিয়ে । এই পুজোর আরও বিশেষত্ব যেটা পরিবারের কেউ বাইরে থেকে মিষ্টি এনে মাকে দিতে পারবে না । দুর্গাপুজোর ঘট দশমীর দিন মায়ের সঙ্গে বিসর্জন দেওয়া হয় না । ঘট আলাদা করে বাড়ির ভিতর রেখে দেওয়া হয় । সেই ঘট দিয়েই বাড়ির লক্ষ্মী পুজো হয়ে থাকে । পরে, অবশ্য সেই ঘট বাড়ির পুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয় ।"