বারাসত, 28 জুলাই: সাইবার প্রতারণা মামলায় বেসরকারি ব্যাঙ্কের এক আধিকারিক-সহ দু'জনকে সাত বছরের সশ্রম কারাদণ্ডের আদেশ দিল বারাসত আদালত (Barasat Court)। সূত্রে খবর, তিন কোটি টাকারও বেশি এই সাইবার প্রতারণা মামলায় ধৃত বেসরকারি ব্যাঙ্কের আধিকারিক বাপ্পাদিত্য বিশ্বাস-সহ তাঁর সঙ্গী সমীরণ সাহাকে বুধবারই দোষী সাব্যস্ত করেছিলেন বিচারক ভবানীশঙ্কর শর্মা । বৃহস্পতিবার ধৃত এই দু'জনের সাজা ঘোষণা করেন তিনি । তাদের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছিল । উপযুক্ত তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে ধৃত বেসরকারি ব্যাঙ্কের আধিকারি-সহ দু'জনকে দোষী সাব্যস্ত করা হয় বলে খবর আদালত সূত্রে । তাদের দোষী সাব্যস্ত করার ক্ষেত্রে সাইবার সেল গাণিতিক পদ্ধতি গ্রহণ করে বলে জানা গিয়েছে (Barasat court orders 7 year imprisonment in over Rs 3 crore cyber fraud case) ।
এই সাইবার প্রতারণার ঘটনাটি ঘটে 2020 সালের জুলাই মাসে । বাগুইআটির এক বেসরকারি ব্যাঙ্ক অভিযোগ করে জানায়, চেন্নাইয়ে তাঁদের এক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে কোটি কোটি টাকা লোপাট হয়ে গিয়েছে । টাকার অঙ্কটা নাই নাই করে তিন কোটি টাকারও বেশি । তার মধ্যে দু'কোটি টাকা উদ্ধার করা সম্ভব হলেও এক কোটিরও বেশি টাকার হদিস মিলছিল না কিছুতেই । অথচ, টাকা গায়ের হয়ে গিয়েছে বাগুইআটির ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা থেকে । এরপরই তদন্তে নেমে পুলিশ প্রথমে ব্যাঙ্কের আধিকারিক-সহ তিনজনকে গ্রেফতার করে ।
পরে ওই ব্যাঙ্কের আধিকারিক-সহ মোট দু'জনের বিরুদ্ধে চার্জশিট জমা দেওয়া হয় বারাসত আদালতে । তারই মধ্যে ধৃত ব্যাঙ্কের আধিকারিক বাপ্পাদিত্য বিশ্বাস-সহ তাঁর সঙ্গী সমীরণ সাহা জামিনের আবেদন করে কলকাতা হাইকোর্ট এবং সুপ্রিম কোর্টে । দুটি আদালতই জামিনের আবেদন নাকচ করে দু'মাসের মধ্যে নিম্ন আদালতে মামলাটি শেষ করার নির্দেশ দেয় । সেই মতো সাক্ষী-সহ পারিপার্শ্বিক তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে মামলাটি দ্রুততার সঙ্গে শেষ করতে তৎপর হয় বারাসত আদালত ।
তবে মামলাটি এগোনোর ক্ষেত্রে বেশকিছু ক্ষেত্রে বাঁধার সন্মুখীন হতে হয় তদন্তকারীদের । তদন্ত করতে গিয়ে তাঁরা জানতে পারেন, অভিযুক্ত ব্যাঙ্কের আধিকারিক যে আইপি অ্যাড্রেস ব্যবহার করেছিলেন, তা একই সময়ে ব্যবহার করেছেন অন্তত দশ জন । তাই সমস্যা সমাধানে 'ন্যাটো'-নামে একটি গাণিতিক পদ্ধতির সাহায্য নেন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় । সোজা কথায় বললে এই পদ্ধতিতে একই ব্যক্তি একই আইপি এড্রেস ব্যবহার করলে তার মধ্য থেকে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে চিহ্নিত করা সম্ভব । তাছাড়া অভিযুক্ত ব্যাক্তি যে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছিলেন তার আইইএমআই নম্বর চিহ্নিত করতে 'লুন অ্যালগরিদম'-পদ্ধতি ব্যবহার করেছেন বিভাস । আর তাতেই সাইবার প্রতারণা মামলার কিনারা করা সম্ভব হয়েছে বলে জানিয়েছেন সরকারি আইনজীবী বিভাস চট্টোপাধ্যায় ।
আরও পড়ুন : সাইবার প্রতারণায় গ্রেফতার 2, ঝাড়খণ্ড থেকেই চলছিল চক্র দাবি পুলিশের
তিনি বলেন, "চেন্নাইয়ের টি নগর ব্রাঞ্চের গ্রাহক ছিলেন প্রতারিত ওই মহিলা । সেই ব্রাঞ্চের ম্যানেজারের টাকা গায়েবের বিষয়টি নজরে আসতেই সেটি বন্ধ করে দেওয়া হয় । যাবতীয় লেনদেন বাগুইআটির ওই বেসরকারি ব্যাঙ্কের শাখা থেকেই হয়েছে । 2021 সালের এপ্রিল মাসে মামলাটির ট্রায়াল শুরু হয় বারাসত আদালতে । সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে মামলাটি শেষ করতে সবরকমের প্রচেষ্টা চলেছে । সাত বছরের সাজার পাশাপাশি দোষী সাব্যস্ত ওই দু'জনকে জরিমানাও করা হয়েছে ।"