বারাসত, 23 জুন : আগে ওঁরা CPI(M) করতেন । পঞ্চায়েত ভোটের পর থেকেই গ্রামছাড়া । অত্যাচারের ভয়ে । এই বুঝি বাড়ি এসে বোমা মেরে দিয়ে গেল ! এই বুঝি, বাচ্চাটাকে তুলে নিয়ে গেল । মনে মনে আতঙ্ক কাজ করত । লোকসভা ভোটের আগে আগে ফেরার পালা শুরু । ভোটের পর যোগদান BJP-তে । এখন এলাকায় ক্ষমতা বাড়িয়েছে BJP । তাই, সাত-পাঁচ না ভেবে হাতে গেরুয়া পতাকা তুলে নেওয়া । সুদিন ফেরার আশায় বড় 'ভুল' হয়ে গেল না তো ? ভেবেই মরছেন বহিসগাছির বাসিন্দারা ।
আমডাঙার বহিসগাছি । পঞ্চায়েত নির্বাচনের সময় থেকেই বহিসগাছি খবরের শিরোনামে । রাজনৈতিক সংঘর্ষে সেখানে একাধিক কর্মী খুন হয়েছেন । মাঝে ঝামেলা বন্ধ ছিল । ফের খুনোখুনি শুরু । শুক্রবার (২১ জুন) রাতে নাজমুল করিম নামে এক BJP কর্মীকে মারধরের অভিযোগ ওঠে এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে । কাল তাঁর মৃত্যু হয় । এরপর থেকেই উত্তপ্ত এলাকা । ফের একবার ।
পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগে পর্যন্ত এলাকায় শুধু তৃণমূলের পতাকাই বিরাজ করত । একদা লাল দুর্গে, কাস্তে-হাতুড়িও নৈব নৈব চ । 2018-র মে মাসের পর থেকে আচমকাই পট-পরিবর্তন । অনেকেই লাল পতাকা ছেড়ে ভরসা রাখলেন গেরুয়াতে । লোকসভা নির্বাচন মিটতে সেই সংখ্যাটা যেন বেড়ে গেল । নাজমুল তাদেরই একজন । লোকসভা নির্বাচন শেষে তুলে নেন গেরুয়া পতাকা । পরিবারের অভিযোগ, CPI(M) ছেড়ে BJP-তে যোগ দেওয়ায় নাজমুলকে খুন হতে হল । যদিও তৃণমূল নেতৃত্ব বলছে, রাজনৈতিক কারণে খুন হননি তিনি । নেশাই কাড়ল প্রাণ । একাধিক নেতা দাবি করছেন, "নাজমুল ও মহম্মদ রাকেশ (অভিযুক্ত) একসঙ্গে নেশা করতেন । শুক্রবার তাঁদের মধ্যে বচসা হয় । বিবাদ থেকেই এই ঘটনা ।"
এই সংক্রান্ত আরও খবর : মৃত BJP-কর্মীর পরিবারকে 10 লাখ টাকা সাহায্যের আশ্বাস অর্জুনের
নাজমুলের পরিবারই শুধু নয়, বহিসগাছির বাসিন্দারাও এই যুক্তিতে আমল দিতে রাজি নন । গ্রামে গিয়ে দেখা গেল, অনেকেরই চোখে-মুখে আতঙ্কের ছাপ । প্রথমে কেউ সামনে আসতে চাইছিলেন না । ভরসা দেওয়ায়, ক্যামেরার মুখোমুখি হলেন । উগড়ে দিলেন ক্ষোভ ।
তাহামিমা বিবি । স্বামী, সন্তান নিয়ে বাস । বহুদিন ধরে আছেন । আগে CPI(M) করতেন । এখন BJP-র সঙ্গে যুক্ত । তাঁর কথায়, "তৃণমূল নেতাদের প্রত্যেকের ঘরে ঘরে বোমা, বন্দুক, পিস্তল মজুত আছে । পুলিশ সবকিছু জানে । কোনও ব্যবস্থা নেয় না । আর আমরা ভয়ে ভয়ে মরি । এই বুঝি জয়নাল হালদারের (স্থানীয় তৃণমূল নেতা) লোক এল । আমাদের বাড়ির সামনে বোমা মারল !" পাশ থেকেই একজন বলে উঠলেন, "ওই জয়নালই সব কিছুর মূলে । বাড়িতে আগ্নেয়াস্ত্র মজুত রাখে ।" একটু সাহস পেয়ে ফের বলতে শুরু করলেন তাহামিমা । বললেন, "আমরা আগে CPI(M) করতাম । এখন সব বাধ্য হয়ে BJP-র সঙ্গে যুক্ত হয়েছি । ভোট দিয়েছি । চাই না, গ্রামে মারপিট হোক । আমরা সাধারণ মানুষ । খেটে খাই । টাকার গদিতে বসে থাকা লোকজন এসব করে । তৃণমূল নেতারা আমাদের টিকতে দিচ্ছে না ।" পুলিশের কাছে গেছিলেন ? তাচ্ছিল্যের সুরে তাহামিমার প্রশ্ন, "কার কাছে ? পুলিশ ? ওরা তো কিছুই করবে না । উলটে তৃণমূলের লোকজন যদি জানতে পারে, আমাদের মেরে ফেলবে । সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেছি জানতে পারলে মেরেই ফেলবে । নাজমুল BJP করত । ওকেও মেরে ফেলল । আচ্ছা ওরা একাই কি গ্রামে থাকবে ? এভাবে আর কতদিন চলবে ?"
কথায় কথায়, প্রশ্ন করা হল, "জয়নালকে দেখেছেন ?" এক গ্রামবাসী জবাব দিলেন, "না দেখেই এত কাণ্ড । এত ডরাই । দেখলে না জানি কী না কী হত ।"
গ্রামের শেষপ্রান্তে একটা মুদিখানার দোকান । উত্তপ্ত এলাকা বলে দোকান এখন বন্ধ । তবে, দু'একজন লোক বসেছিলেন । তাঁদের কথাতেও উঠে এল নাজিমুলের মৃত্যু প্রসঙ্গ । তাঁরা অবশ্য জয়নাল হতে সাবধান ! নিচু স্বরে একজন বললেন, "দাদা আস্তে কথা বলুন । যদি রাতে বাড়িতে বোমা পড়ে ।"