বাদুড়িয়া, 8 জুলাই: তৃণমূলের শক্ত ঘাঁটি বাদুড়িয়ায় বুথ দখল করে পুলিশের সামনেই দেদার ছাপ্পা ভোট সিপিএমের ! হ্যাঁ, অবাক করার মতো হলেও, এই অভিযোগই উঠেছে ৷ ঘটনার ভিডিয়োও সামনে এসেছে ৷ এই দৃশ্য দেখে অনেকেই মনে করছেন, হারানো জমি পুনরুদ্ধার করার প্রয়াস চালাতে কোনও কসুরই করছে না লাল ঝান্ডার কর্মী-সমর্থক বাহিনী । দাঁতে দাঁত চেপে রাজনৈতিক লড়াই, তৃণমূলের বিরুদ্ধে পালটা প্রতিরোধ, ইদানিং যেন বঙ্গ সিপিএমের কাছে ট্রেডমার্ক হয়ে দাঁড়িয়েছে । এই ঘটনাক্রম লোকসভা ভোটের আগে বাড়তি অক্সিজেনও জুগিয়েছে কাস্তে-হাতুড়ি-তারাকে ।
কিন্তু বাদুড়িয়ার মতো তৃণমূল নিয়ন্ত্রিত বিধানসভা এলাকাতে সিপিএম যেভাবে ভোটের দিন ফিল্মি কায়দায় ভোটগ্রহণ কেন্দ্রে ঢুকে দেদার ছাপ্পা ভোট দিল, তা নিঃসন্দেহে যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ । এটা কি লোকসভা ভোটের আগে শাসকদলের কাছে অশনি সংকেত? নাকি অন্য কোনও সমীকরণ? এমনই সব প্রশ্ন ইতিমধ্যে উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে ।
বাম আমলে বাদুড়িয়া বিধানসভা আসনটি বরাবর কংগ্রেসের দখলে ছিল। তৃণমূলের বর্তমান বিধায়ক কাজী আব্দুর রহিম ওরফে দিলুর প্রয়াত বাবা কাজী আব্দুর গফফার এই কেন্দ্র থেকেই জিতে দীর্ঘদিন ধরে বিধায়ক থেকেছেন ৷ তখন অবশ্য তিনি কংগ্রেস করতেন ৷ ফলে, একসময় কংগ্রেসের দুর্গ বলতে প্রথমেই নাম আসত উত্তর 24 পরগনার বাদুড়িয়া অঞ্চলটি । বাবার মৃত্যুর পর কংগ্রেসের টিকিটে জয়ী হয়ে বাদুড়িয়া কেন্দ্র থেকে বিধায়ক হন গফফর সাহেবের ছেলে কাজী আব্দুর রহিম । তৃণমূল আমলেও কংগ্রেসের দুর্গ অটুট রেখেছিলেন তিনি ।
2021-র বিধানসভা নির্বাচনের ঠিক আগে তৃণমূলে নাম লেখান কংগ্রেস বিধায়ক কাজী আব্দুর রহিম । এরপরই কংগ্রেসের দুর্গে থাবা বসাতে শুরু করে শাসকদল । সূত্রের খবর, কাজী আব্দুর গফফারের সময় থেকেই সিপিএম কখনও আলাদাভাবে এখানে প্রার্থী দেয়নি । এর কারণও কাজী গফফারের মতো কংগ্রেসের প্রবীণ নেতার দিকে তাকিয়ে । ফলে, কাজী আব্দুর রহিমের তৃণমূলে যোগদান মন থেকে মেনে নিতে পারেননি সিপিএম নেতৃত্ব । কংগ্রেস নেতা কর্মীদের ক্ষোভ তো রয়েছেই তার সঙ্গে ।
আরও পড়ুন: গণতন্ত্রের উৎসবে লুট ব্যালট বাক্স, অভিযোগ তৃণমূলের বিরুদ্ধে
এবারের পঞ্চায়েত ভোটে দলের টিকিট বণ্টন নিয়ে প্রকাশ্যেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছিলেন বাদুড়িয়ার তৃণমূল বিধায়ক কাজী আব্দুর রহিম। নিজের পছন্দসই লোককে প্রার্থী করতে না-পেরে দলীয় নেতৃত্বের একাংশের বিরুদ্ধে বিরুদ্ধাচরণ করেন শাসকদলের এই বিধায়ক । ভোটের প্রচারেও সেভাবে তাঁকে দেখা যায়নি বলে অভিযোগ । আর সুযোগই কাজে লাগিয়ে বাদুড়িয়ার হারানো জমি ফিরে পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে সিপিএম। যা ভোটের দিন সেয়ানে সেয়ানে টক্কর দিয়ে সিপিএম নেতৃত্ব বুঝিয়ে দিলেন, এত সহজে বাদুড়িয়াতে তৃণমূলকে ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নন তারা ।