গাইঘাটা, 26 ডিসেম্বর : এবার কি তবে কেন্দ্রের শাসকদলের সঙ্গে সম্মুখ সমরে নামল সর্বভারতীয় মতুয়া মহাসংঘ (All India Matua Mahasangha) ? সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক সুখেন্দ্রনাথ গায়েনের দু’টি ফেসবুক পোস্ট ঘিরেই তৈরি হয়েছে এই জল্পনা (Matua Facebook Post Controversy) ৷ যেদিন বঙ্গ-বিজেপির বিধায়কদের হোয়াট্সঅ্যাপ গ্রুপ ছেড়ে বেরিয়ে আসেন পাঁচ মতুয়া বিধায়ক (Matua MLAs Left BJP Whatsapp Group), সেদিনই পরপর দু’টি পোস্ট করেন সুখেন্দ্রনাথ ৷ যা নজরে আসতেই মতুয়াদের রাজনৈতিক অবস্থান (Matua Politics) নিয়ে শুরু হয়েছে জোর চর্চা ৷
সুখেন্দ্রনাথ তাঁর প্রথম পোস্টে লিখেছেন, ‘‘অল ইন্ডিয়া মতুয়া মহাসংঘ আর নির্দিষ্ট কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন করবে না ৷’’ আর দ্বিতীয় পোস্টে লেখা হয়েছে, ‘‘মতুয়াদের বঞ্চিত করা হচ্ছে ৷ তৈরি থাকুন আগামী দিনের জন্য ৷ মতুয়ারাও বঞ্চিত করার ক্ষমতা রাখে ৷’’ দ্বিতীয় পোস্টটিকে কার্যত হুঁশিয়ারি বলেই মনে করছে ওয়াকিবহাল মহল ৷ আর প্রথম পোস্টে সমস্ত রাজনৈতিক দলকে নিশানা করা হলেও তাদের প্রধান লক্ষ্য যে বিজেপি, সেটা বোঝা যাচ্ছে এই দ্বিতীয় পোস্ট থেকেই ৷
কেন এমনটা মনে করছেন রাজনীতির কারবারিরা ? তাঁদের ব্যাখ্য়া হল, বাংলায় বিজেপির উত্থানে মতুয়াদের সমর্থন একটা বড় ফ্যাক্টর ৷ সাম্প্রতিক লোকসভা নির্বাচন হোক, কিংবা বিধানসভা ভোট, বিজেপি প্রার্থীদের দু’হাত ভরে আশীর্বাদ করেছেন মতুয়া ভোটাররা ৷ কিন্তু, এর বদলে তাঁদের যা দাবিদাওয়া ছিল, কেন্দ্র তা পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে ৷ সুখেন্দ্রনাথ নিজে এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ‘‘অনেক আশা নিয়েই বিজেপিকে সমর্থন করেছিলাম আমরা ৷ নিঃশর্ত নাগরিকত্ব-সহ বেশ কিছু দাবি ছিল আমাদের ৷ কিন্তু, সেসবের কিছুই এখনও পূরণ হয়নি ৷’’
প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে সিএএ এবং এনআরসি-বিরোধী আন্দোলন ক্রমশ জোট বাঁধলেও মতুয়াদের অবস্থান কিন্তু এর একেবারে উল্টো ৷ তাঁরা চান, সিএএ এবং এনআরসি দ্রুত কার্যকর করা হোক ৷ অথচ অসমে এনআরসি কার্যকর করতে গিয়ে যে জটিলতা তৈরি হয়েছে, তারপর কেন্দ্রের পক্ষে এনিয়ে দ্রুত কোনও পদক্ষেপ করা রাজনৈতিকভাবে সম্ভব নয় ৷ বিশেষ করে যখন একের পর এক রাজ্যে বিধানসভা ভোট আসন্ন ৷ এই প্রেক্ষাপটে রাজ্য বিজেপির সাংগঠনিক রদবদলে কোনও মতুয়া মুখ তুলে আনেনি গেরুয়া শিবির ৷ তাদের এই পদক্ষেপ মতুয়া সংগঠনের অন্দরে বিজেপিবিরোধী ক্ষোভ বাড়িয়েছে বলেই মত রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের ৷
অন্যদিকে, তৃণমূল মতুয়াদের সবরকম সুযোগ সুবিধা দেওয়ার কথা বললেও সিএএ ও এনআরসি-বিরোধিতা খোদ মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের ঘোষিত অবস্থান ৷ এই অবস্থায় ফাঁপড়ে পড়েছেন মতুয়া নেতারা ৷ মানুষের সমর্থন হারাতে হতে পারে, এমন কোনও পদক্ষেপই করতে চান না তাঁরা ৷ তাই প্রকাশ্যে কোনও রাজনৈতিক দলকে সমর্থন না করার সিদ্ধান্ত ঘোষণা আদতে মতুয়া নেতৃত্বের রাজনৈতিকভাবে সঠিক থাকার কৌশলও হতে পারে ৷ পাশাপাশি, তাদের এই ঘোষিত অবস্থান বিজেপি, তৃণমূল-সহ রাজনৈতিক দলগুলিকেও চাপে রাখবে ৷ কারণ, কোনও পক্ষই মতুয়া ভোটব্যাঙ্ক হাতছাড়া করতে রাজি হবে না ৷
আরও পড়ুন : Matua MLAs Left BJP Whatsapp Group : পাঁচ মতুয়া বিধায়ককে তৃণমূলে আমন্ত্রণ মমতাবালার, পাল্টা কটাক্ষ সুব্রতর
তবে এর পুরোটাই জল্পনা আর সম্ভাবনা নির্ভর বিশ্লেষণ ৷ সুখেন্দ্রনাথ নিজে এই প্রসঙ্গে জানিয়েছেন, ফেসবুকে তিনি যে পোস্ট করেছে, সেটা এখনও পর্যন্ত তাঁর ব্যক্তিগত মতামত ৷ যদিও আগামী দিনে সংগঠন এই বিষয়ে খোলাখুলিভাবে নিজের অবস্থান স্পষ্ট করবে বলেই জানিয়েছেন তিনি ৷