আমডাঙা, 1 ডিসেম্বর: তোয়েব আলি মণ্ডল নয় ! আমডাঙা খুন-কাণ্ডে মাস্টারমাইন্ড ধৃত আলি আকবর মণ্ডলই। জেল থেকে ছাড়া পাওয়ার পর সেই পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডলকে খুনের পরিকল্পনা করে। বাকিরা সঙ্গ দেয় তার। পরিকল্পনা মতো ঘটনার দিন আততায়ীদের সঙ্গে নিয়ে আকবরই বোমা মেরে খুন করে তৃণমূলের পঞ্চায়েত প্রধানকে। রূপচাঁদ মণ্ডল খুনে ধৃত আলি আকবর মণ্ডল ওরফে গুন্ডাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে এমনই তথ্য উঠে এসেছে পুলিশের হাতে। পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ঘটনার 14 দিনের মাথায় খুনের মাস্টারমাইন্ড আলি আকবর মণ্ডল-সহ আরও তিন আততায়ীকে পাকড়াও করা হয়েছে। ধৃত তিনজন হলেন সামসুদ্দিন মণ্ডল, গিয়াসউদ্দিন মণ্ডল এবং কাজি আনোয়ার হোসেন। এর আগে এই খুনের ঘটনায় আনোয়ার হোসেন মণ্ডল ও আলমগীর শেখ ওরফে খাঁচাওয়ালা আফতারকে গ্রেফতার করেছিল পুলিশের বিশেষ তদন্তকারী দল। এবার পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডল খুনে গ্রেফতার হলেন আরও চারজন। সবমিলিয়ে গ্রেফতারের সংখ্য়া দাঁড়াল ছয়।
এনিয়ে শুক্রবার বারাসতের ময়নায় জেলা পুলিশ সুপারের দফতরে সাংবাদিক সম্মেলনে বিশেষ তদন্তকারী দলের নেতৃত্বে থাকা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (জোনাল) বিশ্ব চাঁদ ঠাকুরকে পাশে বসিয়ে জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায় দাবি করেন, "এই খুনের মাস্টারমাইন্ড ধৃত আলি আকবরই। তাঁকে বসিরহাটের মাটিয়ার একটি গোপন আস্তানা থেকে পাকড়াও করা হয়েছে। বাকিদের ধরা হয়েছে আমডাঙার বিভিন্ন এলাকা থেকে। প্রাথমিকভাবে ধৃতদের জেরা করে জানা গিয়েছে এই খুনের সঙ্গে প্রত্যক্ষভাবে জড়িত তাঁরা। সেই তথ্যও পাওয়া গিয়েছে ।" পুলিশ সুপারের মতে, "খুনের আগে বেশ কয়েকবার পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডলের সাথে ফোনে কথা হয়েছে আততায়ীদের কারও না কারও সঙ্গে ।" ঠিক কার সঙ্গে ওই তৃণমূল নেতার কথা হয়েছে তা অবশ্য তদন্তের স্বার্থে খোলসা করতে চাননি তিনি। তাঁর কথায়, "রূপচাঁদের সাথে ধৃত গুন্ডা এবং খাঁচাওয়ালা আফতারের একসময় ভালো সম্পর্ক ছিল। পরবর্তী সময়ে সেই সম্পর্ক ভেঙে গিয়ে ব্যাক্তিগত আক্রোশের জন্ম নেয়। রূপচাঁদের সঙ্গে গুন্ডা ও খাঁচাওয়ালা আফতারের ব্যাক্তিগত আক্রোশ চরম জায়গায় পৌঁছেছিল বিগত চার-পাঁচ মাস ধরে ।"
সেই আক্রোশের জেরেই পঞ্চায়েত প্রধান রূপচাঁদ মণ্ডলকে বোমা মেরে খুন করা হয়ে থাকতে পারে বলে মনে করছেন পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়। যেহেতু আলি আকবর ওরফে গুন্ডার পরিচিত এলাকা আমডাঙার কামদেবপুর হাট। সেহেতু সে সহ বাকি আততায়ীরা খুনের পর খুব সহজেই এলাকা থেকে গা ঢাকা দিতে সক্ষম হয়েছে বলে জানিয়েছেন বারাসত পুলিশ জেলার পুলিশ সুপার। তিনি বলেন, "খুনের পর থেকেই সন্দেহভাজন আততায়ীদের গতিবিধির ওপর নজর রাখা হচ্ছিল। খুনের আগে ও পরে তাঁরা কার কার সঙ্গে যোগাযোগ রাখছিলেন। কোথায় পালিয়ে গিয়েছিলেন। সেই যাবতীয় তথ্য হাতে আসার পরই গ্রেফতার করা হয় ধৃত এই চারজনকে। ধৃত আকবরের আগেও দুষ্কৃতী মূলক কাজকর্মের অভিযোগ রয়েছে। সেকারণে বিভিন্ন সময়ে তাঁকে জেলেও যেতে হয়। বাকি তিনজনেরও বিভিন্ন ধরণের অপরাধের অভিযোগ রয়েছে। তদন্তে আরও কোনও তথ্য বেরিয়ে আসে কি না, তার জন্য ধৃতদের মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে ।" এদিকে, এই খুনে এখনও পর্যন্ত রাজনৈতিক কারণ কিংবা সুপারি কিলার দিয়ে খুনের বরাত, এমন কোনও তথ্য সামনে আসেনি বলেই দাবি করেছেন জেলার পুলিশ সুপার ভাস্কর মুখোপাধ্যায়।
আরও পড়ুন