বারাসত, 17 এপ্রিল: কিডনির সমস্যায় ভুগছেন । তাই ভিনরাজ্য থেকে ফিরেছেন চিকিৎসা করিয়ে ।কিন্তু, এলাকায় ঢুকেই বাসিন্দাদের প্রবল বাধার মুখে পড়ল ওই ব্যক্তির পরিবার । পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় যে ঘটনাস্থানে আসতে হয় পুলিশকে । শারীরিক পরীক্ষার পর ওই রোগী সহ পরিবারের চারজনকে পাঠানো হয় বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ারান্টাইন সেন্টারে । সেখানেই তাঁদের 14 দিন পর্যবেক্ষণে রাখা হবে বলে স্বাস্থ্যদপ্তর সূত্রে খবর ।
দীর্ঘদিন ধরে কিডনির সমস্যায় ভুগছেন উদয় রায় নামে এলাকার এক ব্যক্তি । তাঁর আদি বাড়ি বাংলাদেশে হলেও বারাসতের পায়োনিয়ার পার্ক এলাকায় ফ্ল্যাট রয়েছে তাঁর । কিডনির চিকিৎসার জন্য মাস দুয়েক আগে স্ত্রী, ছেলেকে নিয়ে বাংলাদেশ থেকে এদেশে আসেন তিনি । বারাসতের পায়োনিয়ার পার্কের ফ্ল্যাটে এসে ওঠেন । লকডাউনের আগেই তাঁকে নিয়ে ভেলোরের CMC হাসপাতালে যান পরিবারের লোকেরা । পরে তাঁদের সহযোগিতা করতে সেখানে যান আরও এক আত্মীয় । এরই মধ্যে দেশে কোরোনা মোকাবিলায় জারি করা হয় লকডাউন । ফলে চিকিৎসার পর ওই ব্যক্তিকে নিয়ে আর এ রাজ্যে ফিরতে পারছিলেন না পরিবারের সদস্যরা । আটকে পড়েন সেখানেই । এরপর কোনও উপায় না দেখে ভিন রাজ্যের একটি অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে বাড়ি আসেন তাঁরা ।
দু-দিনের মাথায় শুক্রবার বিকেলে বারাসতের পায়োনিয়ার পার্কে এসে পৌঁছান সকলে । অভিযোগ, কাউকে কিছু না জানিয়ে চুপিসারে রোগীকে নিয়ে ফ্ল্যাটেও ওঠেন তাঁরা । মধ্যমগ্রামের চৌমাথার কাছে ভিন রাজ্যের অ্যাম্বুলেন্স দেখে সন্দেহ হয় পুলিশের । অ্যাম্বুলেন্স আটকে চালককে জিজ্ঞাসাবাদ করতেই বেরিয়ে আসে তথ্য । তারপরই ওই রোগীর ফ্ল্যাটের সামনে পুলিশ যেতেই চাউর হয় ঘটনাটি । জড়ো হতে শুরু করেন এলাকার বাসিন্দারা । পুলিশও পরিবারের লোকেদের জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে । ফ্ল্যাটে থাকতে বাধা দেওয়া হয় রোগী ও পরিবারের লোকেদের ।
বাসিন্দাদের বাধা পেয়ে শুক্রবার সন্ধ্যায় তাঁদের অ্যাম্বুলেন্সে করে বারাসত হাসপাতালে শারীরিক পরীক্ষার জন্য নিয়ে যায় পুলিশ । পরীক্ষায় কোনওরকম উপসর্গ ধরা না পড়লেও ঝুঁকি না নিয়ে সকলকে পর্যবেক্ষণের জন্য বারাসতের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ারান্টাইন সেন্টারে পাঠিয়ে দেওয়া হয় । জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্রে খবর, সেখানেই 14 দিন তাঁদের শারীরিক পরীক্ষার পর্যবেক্ষণ করা হবে ।
এদিকে খবর পেয়ে ঘটনাস্থানে আসেন পৌরসভার 10 নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর রত্না ভট্টাচার্য । তিনি বলেন, "কোরোনা নিয়ে মানুষের মধ্যে একটা আতঙ্ক কাজ করছে । সেই জায়গা থেকে বাসিন্দারা ওই রোগী সহ পরিবারের লোকেদের ফ্ল্যাটে থাকতে বাধা দেয় । আমরাও কোনও ঝামেলা না চেয়ে এনিয়ে সতর্ক থাকতে চাইছি । তাই পুলিশ প্রশাসনকে বলেছি তাদের সকলের শারীরিক পরীক্ষা করে কোয়ারান্টাইন সেন্টারে রাখার ব্যবস্থা করতে ।"