নৈহাটি, 4 জানুয়ারি : দেবক গ্রামে বাজি কারখানায় বিস্ফোরণের পর প্রশ্ন উঠেছে প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে । কোনও রাজনৈতিক দলের মদতে ওই কারখানা চলছিল কি না, তা নিয়ে জল্পনা শুরু হয়েছে । স্থানীয়দের একাংশের তরফে অভিযোগের আঙুল উঠছে শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেস ও পুলিশের বিরুদ্ধে । তাঁদের অভিযোগ, পুলিশের সঙ্গে 'মাসোহারা চুক্তি' ছিল কারখানার মালিক নুর আলমের । তা ছাড়া অবৈধ কারখানা চলার পেছনে মদত ছিল তৃণমূল কংগ্রেসের ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, যে কারখানায় বিস্ফোরণ হয়েছে সেটি ছাড়াও আরও ছয়টি বেআইনি বাজি কারখানা চলছে ওই এলাকায় । পাশাপাশি গ্রামের প্রায় 200 বাড়িতেও অবৈধভাবে বাজি তৈরি হয় । প্রশাসন বিষয়টি জেনেও না কি পদক্ষেপ করেনি । বাসিন্দাদের একাংশ বলেন, "এলাকার বেআইনি বাজি কারখানাগুলির সঙ্গে পুলিশের মাসোহারা চুক্তি রয়েছে । মাস গেলে পুলিশকর্তাদের কাছে পৌঁছে যায় টাকা । তাই সব জেনেও পুলিশ এতদিন ব্যবস্থা নেয়নি । তা ছাড়া শাসকদলের নেতাদেরও কারখানার মালিকরা টাকা দেন । তৃণমূলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অনুদানের একটা বড় উৎস হল দেবগ্রামের বাজিপাড়া । কার্যত শাসকদলের অলিখিত সমর্থনে চলছে ওই বেআইনি বাজি কারখানাগুলি ।" তাঁদের প্রশ্ন, মামুদপুর পঞ্চায়েত অফিসের থেকে ঢিল-ছোড়া দূরত্বে কীভাবে এমন বেআইনি কারখানা চলছিল ।
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ জানিয়েছে, নুর আলম বাম জমানায় CPI(M)-এর ছত্রছায়ায় ছিল । তবে রাজ্যে তৃণমূল ক্ষমতায় আসার পর সে তার রাজনৈতিক আনুগত্য পরিবর্তন করে । নৈহাটিতে তৃণমূলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে দলের নেতাদের পাশে নুর আলমকে একাধিকবার দেখা গিয়েছে। দেবগ্রামে গত তিন বছর ধরে সে ওই বেআইনি বাজি কারখানা চালাচ্ছে । ২৯ জন কর্মী কাজ করেন ওই কারখানায় । তবে শুক্রবার নমাজ পড়ার জন্য কারখানায় মাত্র পাঁচ শ্রমিক কাজে এসেছিলেন । নুর আলমের সঙ্গে তৃণমূলের আঁতাতের অভিযোগ প্রসঙ্গে উত্তর 24 পরগনার তৃণমূল জেলা সভাপতি জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক বলেন, "দলের কেউ এই কাজে থাকলে তাকে ছেড়ে কথা বলা হবে না । আইন আইনের পথে চলবে । পুলিশ তদন্ত শুরু করেছে ।"
উল্লেখ্য, গতকাল দুপুর 12টা নাগাদ বিস্ফোরণ হয় নৈহাটির দেবক গ্রামে । বিস্ফোরণের তীব্রতা এতটাই বেশি ছিল যে, গঙ্গার ওপারে হুগলিতেও তা অনুভূত হয় । বিস্ফোরণের জেরে উড়ে যায় কারখানাটির ছাদ । গুরুতর জখম হন একাধিক । তাঁদের ব্যারাকপুর, নৈহাটি ও কল্যাণীর হাসপাতালে ভরতি করা হয় । পরে তাদের মধ্যে চার জনের মৃত্যু হয়েছে । একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক । স্থানীয়রা অভিযোগ করেন, এলাকায় বেআইনি বাজি কারখানার বিরুদ্ধে আগেই অভিযোগ জানিয়েছিলেন । কিন্তু কোনও লাভ হয়নি । একবছর আগেও ওই কারখানায় বিস্ফোরণ হয় । সেবার মৃত্যু হয়েছিল ছয় জনের । এবার বিস্ফোরণের পর থেকে কারখানার মালিক পলাতক । তার বিরুদ্ধে সুয়োমোটো মামলা দায়ের করেছে পুলিশ ।