ETV Bharat / state

বারাসত থেকে সুমেরুর রেডিয়ো বার্তা শোনেন বাবলু - babulu gupta radio message

বারাসতে ঘরে বসে সুদূর দক্ষিণ মেরুর রেডিয়ো বার্তা ! হ্যাঁ, শুনতে গল্পের মতো মনে হলেও তা সত্যি ৷ প্রায় 21 হাজার কিলোমিটার দূরে থেকেও দক্ষিণ মেরুতে থাকা বিজ্ঞানীদের রেডিয়ো বার্তা শুনলেন 64 বছরের বাবলু গুপ্ত ৷

babulu gupta
সুমেরুর রেডিও বার্তা শোনেন 64 বছরের বৃদ্ধ
author img

By

Published : Sep 26, 2020, 10:24 PM IST

বারাসত, 26 সেপ্টেম্বর : বয়স 64। তবু মনে তাঁর ডিক্সিংয়ের (DXing) উন্মাদনা। আর সেই নেশাতেই বিশ্বের 253টি রেডিয়ো স্টেশনকে জুড়ে ফেলেছেন উত্তর 24 পরগনার বারাসতের বাবলু গুপ্ত। শোনালেন সুমেরুর রেডিয়ো বার্তাও। তাঁর স্বপ্ন মহাকাশে পাঠানো উপগ্রহের বেতার বার্তা শোনারও।

বারাসতের সুবর্ণপত্তনের বাসিন্দা বাবলু। তাঁর মহল্লাকে স্থানীয় ভাষায় বার্মা কলোনি বলা হয়। তাঁর শিকড়ও বার্মা মুলুকে ছিল। ডিক্সিংয়ের নেশায় দোতলা বাড়ির একটা ঘর মহাকাশ বার্তার উপকরণে সাজিয়ে ফেলেন। ছাদে ঝোলানো বিভিন্ন রকমের অ্যান্টেনা।

কেন এমন অদ্ভুত নেশা ? বাবলু জানালেন, সময়টা 1968 সাল। তখন তাঁর বয়স মাত্র 12 । খবরের কাগজে বের হল, অলিম্পিকের ধারা বিবরণী শোনা যাবে মেলবোর্ন রেডিয়ো স্টেশন থেকে। কিন্তু বাড়ির রেডিয়োয় তা তো শোনা যাবে না। ছোট্ট বাবলু সেদিন সকাল থেকে বাবার রেডিয়ো নিয়ে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেন। রেডিয়োর বোতাম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অবশেষে পেয়ে গেলেন মেলবোর্ন রেডিয়োর সংযোগ। সেই বেতার বার্তা অস্পষ্ট হলেও মাথায় নেশা চেপে গেল, আরও দূরের রেডিয়ো বার্তা শুনবেন। স্কুলের টিফিনের খরচ জমিয়ে নানারকম অ্যান্টেনা কিনে বাড়িতে বসালেন। একে একে জাপান, অ্যামেরিকা, লন্ডন, ইট্যালি, রাশিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিয়ো স্টেশনগুলোকে ছুঁয়ে ফেললেন। সব মিলিয়ে তিনি 253টি রেডিয়ো স্টেশনের বার্তা শোনার ব্যবস্থা করেছেন বাড়িতেই। তার জন্য বাড়ির ছাদে বসিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টেনা। একটা ঘরও বিভিন্ন যন্ত্রে ভরে ফেলেছেন।

সুদূর সুমেরুর আন্টার্কটিকা মহাদেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বছরে একবার কয়েক ঘণ্টার জন্য অস্থায়ী রেডিয়ো স্টেশন করে কয়েকটি দেশ। বাবলু তাঁর ঘরোয়া প্রযুক্তিতে সেই সুমেরুর রেডিয়ো বার্তাও শোনার ব্যবস্থা করেছেন। চলতি বছর অগাস্টে তা অনেকেই শুনিয়েছেন। বাকি নেই আর দূরের কোনও দেশই। বাবলু বলেন, "ছোটোবেলায় রেডিয়ো শোনা ছিল আমার নেশা। সেই নেশাতেই ছোটোখাটো প্রযুক্তির সাহায্যে আমি প্রথম মেলবোর্ন রেডিয়ো স্টেশনের অনুষ্ঠান শুনেছিলাম। তারপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিয়ো স্টেশনের বার্তা আমি বাড়ি বসে শুনেছি। অন্যদেরও শুনিয়েছি।"

আর কোনও অধরা স্বপ্ন আছে?

জবাবে 64 বছরের বাবলু বলেন, "আমার শেষ স্বপ্ন পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠানো উপগ্রহে যে রেডিয়ো থাকে তার বার্তা শুনব। আমি সেই চেষ্টা শুরুও করেছি।" ভিনদেশের রেডিয়ো বার্তা শোনার জন্য সরকারি অনুমতি প্রয়োজন আছে কি? বাবলুর জবাব, "ডিক্সিং(Dxing) করার জন্য সরকারি অনুমতি লাগে না। অনেকেরই এই শখ আছে। হ্যাম রেডিয়োর জন্য অনুমতি প্রয়োজন। সেটা আমার করাও আছে।"

সুমেরুর রেডিয়ো বার্তা শোনেন বাবলু

পেশায় ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনার বাবলু কাজের ফাঁক পেলেই রেডিয়ো নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাতে রাতের পর রাত ঘুমোননি। সংসারে তেমন সময় দিতে পারেননি। তবু স্ত্রী অপর্ণা ও ছেলে অর্পণের তা নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেউ। বরং তাঁকে তাঁরা উৎসাহই দিয়েছেন। অপর্ণা বলেন, "আমি বিয়ের পর থেকে দেখছি, মানুষটা কাজের ফাঁকে কেবল রেডিয়ো নিয়ে পড়ে থাকেন। প্রথম প্রথম রাগ হত। পরে দেখলাম, রেডিয়োই ওর ধ্যান-জ্ঞান। তখন থেকে উৎসাহ দিতে শুরু করি।" বাবলুর দিদি শেফালি গুপ্তও ভাইয়ের এই অদ্ভুদ নেশাকে উৎসাহ দিয়েছেন।

বয়স বাড়ছে । তবু বাবলু স্বপ্ন দেখে চলেছেন বিশ্বের আরও কোনও দূর দেশে রেডিয়ো স্টেশন থাকলে তা তিনি বারাসতে বসে শোনার ব্যবস্থা করবেন। স্বপ্ন উপগ্রহের বেতার বার্তা শোনারও।

বারাসত, 26 সেপ্টেম্বর : বয়স 64। তবু মনে তাঁর ডিক্সিংয়ের (DXing) উন্মাদনা। আর সেই নেশাতেই বিশ্বের 253টি রেডিয়ো স্টেশনকে জুড়ে ফেলেছেন উত্তর 24 পরগনার বারাসতের বাবলু গুপ্ত। শোনালেন সুমেরুর রেডিয়ো বার্তাও। তাঁর স্বপ্ন মহাকাশে পাঠানো উপগ্রহের বেতার বার্তা শোনারও।

বারাসতের সুবর্ণপত্তনের বাসিন্দা বাবলু। তাঁর মহল্লাকে স্থানীয় ভাষায় বার্মা কলোনি বলা হয়। তাঁর শিকড়ও বার্মা মুলুকে ছিল। ডিক্সিংয়ের নেশায় দোতলা বাড়ির একটা ঘর মহাকাশ বার্তার উপকরণে সাজিয়ে ফেলেন। ছাদে ঝোলানো বিভিন্ন রকমের অ্যান্টেনা।

কেন এমন অদ্ভুত নেশা ? বাবলু জানালেন, সময়টা 1968 সাল। তখন তাঁর বয়স মাত্র 12 । খবরের কাগজে বের হল, অলিম্পিকের ধারা বিবরণী শোনা যাবে মেলবোর্ন রেডিয়ো স্টেশন থেকে। কিন্তু বাড়ির রেডিয়োয় তা তো শোনা যাবে না। ছোট্ট বাবলু সেদিন সকাল থেকে বাবার রেডিয়ো নিয়ে নানাভাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শুরু করলেন। রেডিয়োর বোতাম ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে অবশেষে পেয়ে গেলেন মেলবোর্ন রেডিয়োর সংযোগ। সেই বেতার বার্তা অস্পষ্ট হলেও মাথায় নেশা চেপে গেল, আরও দূরের রেডিয়ো বার্তা শুনবেন। স্কুলের টিফিনের খরচ জমিয়ে নানারকম অ্যান্টেনা কিনে বাড়িতে বসালেন। একে একে জাপান, অ্যামেরিকা, লন্ডন, ইট্যালি, রাশিয়া-সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিয়ো স্টেশনগুলোকে ছুঁয়ে ফেললেন। সব মিলিয়ে তিনি 253টি রেডিয়ো স্টেশনের বার্তা শোনার ব্যবস্থা করেছেন বাড়িতেই। তার জন্য বাড়ির ছাদে বসিয়েছেন বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টেনা। একটা ঘরও বিভিন্ন যন্ত্রে ভরে ফেলেছেন।

সুদূর সুমেরুর আন্টার্কটিকা মহাদেশে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য বছরে একবার কয়েক ঘণ্টার জন্য অস্থায়ী রেডিয়ো স্টেশন করে কয়েকটি দেশ। বাবলু তাঁর ঘরোয়া প্রযুক্তিতে সেই সুমেরুর রেডিয়ো বার্তাও শোনার ব্যবস্থা করেছেন। চলতি বছর অগাস্টে তা অনেকেই শুনিয়েছেন। বাকি নেই আর দূরের কোনও দেশই। বাবলু বলেন, "ছোটোবেলায় রেডিয়ো শোনা ছিল আমার নেশা। সেই নেশাতেই ছোটোখাটো প্রযুক্তির সাহায্যে আমি প্রথম মেলবোর্ন রেডিয়ো স্টেশনের অনুষ্ঠান শুনেছিলাম। তারপর বিশ্বের বিভিন্ন দেশের রেডিয়ো স্টেশনের বার্তা আমি বাড়ি বসে শুনেছি। অন্যদেরও শুনিয়েছি।"

আর কোনও অধরা স্বপ্ন আছে?

জবাবে 64 বছরের বাবলু বলেন, "আমার শেষ স্বপ্ন পৃথিবী থেকে মহাকাশে পাঠানো উপগ্রহে যে রেডিয়ো থাকে তার বার্তা শুনব। আমি সেই চেষ্টা শুরুও করেছি।" ভিনদেশের রেডিয়ো বার্তা শোনার জন্য সরকারি অনুমতি প্রয়োজন আছে কি? বাবলুর জবাব, "ডিক্সিং(Dxing) করার জন্য সরকারি অনুমতি লাগে না। অনেকেরই এই শখ আছে। হ্যাম রেডিয়োর জন্য অনুমতি প্রয়োজন। সেটা আমার করাও আছে।"

সুমেরুর রেডিয়ো বার্তা শোনেন বাবলু

পেশায় ইন্টিরিয়র ডিজ়াইনার বাবলু কাজের ফাঁক পেলেই রেডিয়ো নিয়ে গবেষণা শুরু করেন। তাতে রাতের পর রাত ঘুমোননি। সংসারে তেমন সময় দিতে পারেননি। তবু স্ত্রী অপর্ণা ও ছেলে অর্পণের তা নিয়ে কোনও ক্ষোভ নেউ। বরং তাঁকে তাঁরা উৎসাহই দিয়েছেন। অপর্ণা বলেন, "আমি বিয়ের পর থেকে দেখছি, মানুষটা কাজের ফাঁকে কেবল রেডিয়ো নিয়ে পড়ে থাকেন। প্রথম প্রথম রাগ হত। পরে দেখলাম, রেডিয়োই ওর ধ্যান-জ্ঞান। তখন থেকে উৎসাহ দিতে শুরু করি।" বাবলুর দিদি শেফালি গুপ্তও ভাইয়ের এই অদ্ভুদ নেশাকে উৎসাহ দিয়েছেন।

বয়স বাড়ছে । তবু বাবলু স্বপ্ন দেখে চলেছেন বিশ্বের আরও কোনও দূর দেশে রেডিয়ো স্টেশন থাকলে তা তিনি বারাসতে বসে শোনার ব্যবস্থা করবেন। স্বপ্ন উপগ্রহের বেতার বার্তা শোনারও।

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.