আমডাঙা, 30 জানুয়ারি: 500 বছরের পুরনো মন্দির । পরতে পরতে লুকিয়ে ইতিহাস । অথচ, এতদিনেও মন্দিরের পরিকাঠামোর কোনও উন্নয়ন হয়নি বললেই চলে । মন্দিরের সামনের রাস্তা এখনও কাঁচা ৷ নেই পর্যাপ্ত পানীয় জল কিংবা পুণ্যার্থীদের জন্য সুনির্দিষ্ট বসার জায়গাও । ফলে, পুজো দিতে এসে সমস্যার মুখে পড়তে হত পুণ্যার্থীদের । এবার সেই সমস্যার সুরাহা হতে চলেছে । জাগ্রত আমডাঙার করুণাময়ী মন্দিরের পরিকাঠামো ঢেলে সাজানোর পরিকল্পনা নিয়েছে রাজ্য সরকার । ইতিমধ্যে পর্যটন দফতরের তরফে এই মন্দিরের সামগ্রিক উন্নয়নে 78 লক্ষ টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে । সেই টাকায় সেজে উঠবে মন্দিরের চারপাশ । রাস্তা, পানীয় জল, পুণ্যার্থীদের বসার জায়গা থেকে শুরু করে মন্দিরের চারদিকে বাউন্ডারি দেওয়া । সবকিছুই হবে বরাদ্দকৃত টাকায় । সরকারের এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছে আমডাঙা করুণাময়ী মন্দির কমিটি (Amdanga Karunamoyee Kali Mandir)।
প্রায় 500 বছরের পুরনো আমডাঙার এই করুণাময়ী মন্দিরের সঙ্গে বহু ইতিহাস ও আবেগ জড়িয়ে রয়েছে । কথিত আছে, মহারাজ মানসিংহ দেবীর কাছে একদিন স্বপ্নাদেশ পান যে, তাঁরই প্রধান পুরোহিত রামানন্দ গিরি গোস্বামী উন্মাদ অবস্থায় বাংলাদেশের সূক্ষ্মাবর্তী নদী তীরবর্তী জঙ্গলে ঘোরাঘুরি করছেন । সেই পরম ভক্ত ব্রাহ্মণকে তুমি আমার বিকল্প করুণাময়ী মাতৃমূর্তি তৈরি করে প্রতিষ্ঠা করে এসো । দেবীর এমন আদেশ পাওয়ার পর মহারাজ মানসিংহ পুরোহিত রামানন্দ গিরির খোঁজ করা শুরু করেন । দীর্ঘ খোঁজাখুঁজির পর মায়ের বর্তমান মন্দিরের সামনে তিনি দেখতে পান সেই পুরোহিতকে । এরপরই তাঁকে দেবীর স্বপ্নাদেশের কথা জানান সবিস্তারে এবং দেবীর ইচ্ছেনুযায়ী করুণাময়ী মূর্তি তৈরি করে সেখানেই মায়ের পুজো শুরু করেন মহারাজ মানসিংহ ।
আগে আমডাঙার নাম ছিল রামডাঙা । পরবর্তীতে বাংলা ভাষার বিবর্তনের মধ্যে দিয়ে জায়গার নাম পরিবর্তন হয়ে আমডাঙা হয়েছে । এই মন্দিরের ওপর বহু ঝড় ঝাপটা এসেছে । তবু সমস্ত বাধা অতিক্রম করে আজও নিয়ম নিষ্ঠা মেনে পুজো হয়ে আসছে এই মন্দিরে । ইতিহাস ঘেঁটে জানা গিয়েছে, 365 বিঘা এলাকাজুড়ে যে জমির ওপর এই মন্দিরটি গড়ে উঠেছে তা একসময় দান করেছিলেন মহারাজ কৃষ্ণচন্দ্র । মন্দিরের ঠিক সামনে এখনও ফলকে জ্বলজ্বল করছে রাজা কৃষ্ণচন্দ্র এবং মানসিংহের পৌরাণিক নানান স্মৃতি । প্রাচীন এবং ঐতিহ্যবাহী মন্দির হওয়া সত্ত্বেও উন্নয়নের ছোঁয়া সেভাবে পৌঁছায়নি সেখানে ।
আরও পড়ুন : কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে টালা পার্কের শিব মন্দির সংস্কার হিন্দু-মুসলিম-বৌদ্ধদের
এখনও 34 নম্বর জাতীয় সড়ক থেকে কাঁচা রাস্তা পেরিয়েই মন্দিরে প্রবেশ করতে হয় পুণ্যার্থীদের । মায়ের পুজো দেওয়ার পর কোথাও একটু বিশ্রাম নেবেন কিংবা বসবেন তারও ব্যবস্থা ছিল না । অগত্যা নিরুপায় হয়ে মন্দিরের সামনে আমবাগানে বসেই বিশ্রাম নিতে হত পুণ্যার্থীদের । দীর্ঘদিন ধরে এই সমস্ত সমস্যার সুরাহা চেয়ে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে আসছিলেন মন্দির কর্তৃপক্ষ থেকে স্থানীয় বাসিন্দা সকলেই । অবশেষে সরকারি উদ্যোগে সেই সমস্ত সমস্যার সুরাহা হতে চলেছে । মন্দিরের সামনে পর্যাপ্ত আলো নিয়ে আগে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ থাকলেও সম্প্রতি খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষের বিধায়ক তহবিল থেকে কয়েক লক্ষ টাকা ব্যয়ে আলোর স্তম্ভ বসেছে সেখানে । ফলে মন্দির চত্বরে আলোর সমস্যা অনেকটাই মিটেছে । যদিও মন্দিরে ঢোকার রাস্তায় আলোর সমস্যা রয়েই গিয়েছে ।
এদিকে, মন্দিরের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে রাজ্য সরকার যে 78 লক্ষ টাকা বরাদ্দ করেছে তা নিশ্চিত করেছেন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক রফিকুর রহমান ৷ তাঁর কথায়,"আমডাঙার করুণাময়ী মন্দিরের সুনাম সর্বত্র রয়েছে । এখানে সাধারণ পুণ্যার্থীদের পাশাপাশি পুজো দিতে আসেন সমাজের বিশিষ্ট ব্যক্তিরাও । তাই মন্দিরের পরিকাঠামোগত উন্নয়নে উদ্যোগী হয়েছে রাজ্য সরকার । উদ্দেশ্য একটাই, মন্দিরকে ঘিরে ধর্মীয় পর্যটন কেন্দ্র গড়ে তোলা ।"
অন্যদিকে, বিষয়টি নিয়ে আমডাঙা করুণাময়ী মন্দির কমিটির সম্পাদক অমলচন্দ্র ঘোষ বলেন, "আমডাঙাবাসী এবং মন্দির কর্তৃপক্ষের তরফ থেকে আমরা রাজ্য সরকারের উদ্যোগকে কৃতজ্ঞতা জানাই । মন্দির কমিটি সরকারকে সবরকমভাবে সহযোগিতা করতে প্রস্তুত ।"
আরও পড়ুন : শতবর্ষের পথে রাজ্যের প্রাচীনতম সরস্বতী মন্দির, জানুন বাগদেবী আরাধনার রীতি