কলকাতা, 7 নভেম্বর : রাজ্যে অমিত শাহের সফরের মধ্যেই জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। বিহার নির্বাচনের জন্য আগেই আট কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। বাকি ছয় কম্পানি কেন্দ্রীয় বাহিনী ছত্রিশগড়ে পাঠানো হবে বলে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। অথচ সম্প্রতি জঙ্গলমহলে সামনে এসেছে মাওবাদী কার্যকলাপ। বেশ কয়েকবার উদ্ধার হয়েছে পোস্টার। এই পরিস্থিতিতে কেন্দ্রীয় বাহিনীর তুলে নেওয়ার সিদ্ধান্তে উদ্বিগ্ন নবান্ন।
শাল-পিয়ালের জঙ্গলে এখন সবুজের সমারোহ। বর্ষা শেষে এইসময় ছবিটা নতুন নয় বটে। সেই জঙ্গলের বুক চিরে অনেকের চোখে পড়েছে “বনপার্টি"র আনাগোনা। কেউ মুখে রা কাড়েনি। শুধু স্মৃতিতে ভেসে উঠেছে 10 বছর আগের টুকরো ছবির কোলাজ। একটা সময় জঙ্গলমহল দেখেছে জনতার আদালত। দেখেছে সেই আদালতের বিধানে মৃত্যুদণ্ড। রক্তে ভিজেছে জঙ্গলমহলের লালমাটি। মাওবাদীদের হাতে শহিদ হতে হয়েছে কখনও শিলদার EFR ক্যাম্পের জাওয়ানদের, কখনও সাঁকরাইল থানার OC-কে, কখনও আবার মৃত্যু হয়েছে সাধারণ মানুষের। জঙ্গলমহল দেখেছে রাতের মশাল মিছিল। অস্ত্রের ঝনঝনানি। আরো কত কিছু। "বনপার্টি"দের যাতায়াত ফেরাচ্ছে বছর দশেক আগে সব স্মৃতি। তবে কি জঙ্গলমহলে ফের মাওবাদী-রাজ?
তথ্য বলছে, আবার সংগঠন গুছিয়ে তুলছে মাওবাদীরা। যৌথবাহিনী-পুলিশের নাকের ডগাতেই তারা একটু একটু করে গড়ে তুলেছে "গেরিলা" সংগঠন। এবার উপস্থিতি জানান দেওয়ার পালা চলছে। 15 অগাস্ট স্বাধীনতা দিবসের দিনে ভুলাভেদা এলাকায় মাওবাদী নামাঙ্কিত পোস্টার পাওয়া গিয়েছিল। পুরনো স্মৃতি ফিরিয়ে বেলপাহাড়ি এলাকায় বেশকিছু ব্যবসায়ীর কাছে তোলা চেয়ে চিঠি এসেছে মাওবাদীদের। পুলিশের কাছে জমা পড়েছে অভিযোগ। এইসব ঘটনা রাজ্য প্রশাসনের স্নায়ুচাপ বাড়াচ্ছিল। এরই মাঝে সম্প্রতি বেলপাহাড়ি থানা এলাকার সীমান্ত লাগোয়া ওদলচুঁয়া গ্রামে বেড়াতে যাওয়া পর্যটকরা মুখোমুখি হয় একটি মাওবাদী দলের। খড়্গপুর সদর শহরের ওই পর্যটক দলটি মাওবাদীদের মুখোমুখি হয় ডাঙ্কিকুসুম গ্রামে। দলে ছিল মোট সাতজন। প্রত্যেকেই ছিল সশস্ত্র। মুখ ঢাকা ছিল গামছা দিয়ে। দলে ছিল তিনজন মহিলা। অবশ্য তারা পর্যটকদের মারধর করেনি। শুধু কেড়ে নেয় মোবাইল ফোন।
ঘটনার পরম্পরায় গত মাসে নিজেদের উপস্থিতি জানান দিয়েছে মাওবাদীরা। বেলপাহাড়ি থানা এলাকার ভুলাভেদা গ্রাম পঞ্চায়েতের বিভিন্ন প্রান্তে পোস্টার উদ্ধার হয়েছে। যেখানে এক ঠিকাদারকে হুমকি দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে অবিলম্বে রাস্তার কাজ বন্ধ করতে হবে। পরিস্থিতি একটু একটু করে নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যেতে পারে বুঝে সক্রিয় হয়েছে রাজ্য প্রশাসন। স্বয়ং DGP বীরেন্দ্র গিয়েছিলেন জঙ্গলমহলে। ঝাড়গ্রামের নতুন পুলিশ লাইনে AGD ওয়েস্টার্ন রেঞ্জ, IG বাঁকুড়া রেঞ্জ, ঝাড়গ্রাম এর পুলিশ সুপার, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার, বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার, বেলপাহাড়ির DSP-দের নিয়ে বৈঠক করেন। সেখানেই যৌথবাহিনী এবং রাজ্য পুলিশের সমন্বয়ে মাওবাদী মোকাবিলার বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়।
কিন্তু জঙ্গলমহল থেকে কেন্দ্রীয় বাহিনী প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জানিয়ে দেওয়া হয়েছে রাজ্যের মুখ্যসচিব এবং স্বরাষ্ট্র সচিবকে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর রাজ্যের সফরের মধ্যেই এই সিদ্ধান্ত যথেষ্ট উদ্বেগে ফেলেছে রাজ্য প্রশাসনকে। কেন্দ্রীয় সরকারের এই সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের জন্য নবান্ন কোনও চিঠি দেয় কি না সেটাই এখন দেখার।