পুরুলিয়া, 6 মে : দেশজুড়ে কোরোনা আতঙ্ক । বন্ধ স্কুল-কলেজ-অফিস-আদালত । সাধারণ মানুষ আজ গৃহবন্দী । বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে বের হতে নারাজ কেউই । কোরোনা আতঙ্কে জমায়েত এড়াতে বন্ধ সব সম্প্রদায়ের পুজো অর্চনা । বাড়িতে বসেই পুজো অর্চনা করছেন সকলেই । আর তাই কোরোনার আতঙ্কে আগামীকাল বুদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষে অযোধ্যা পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হওয়া হাজার বছরের পুরোনো ঐতিহ্যবাহী শিকার উৎসব বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নিল আদিবাসী সংগঠন "ভারত জাকাত মাঝি পরগনা মহল" ।
পুলিশ-প্রশাসন ও বন বিভাগের নির্দেশকে সাধুবাদ জানিয়ে শুধুমাত্র বিশেষ কয়েকজন ব্যক্তি মিলে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে প্রথা অনুযায়ী পুজো করা হবে বলে সংগঠনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে । পুরুলিয়া জেলা পুলিশ ও বন বিভাগ বাঘমুন্ডি এলাকায় ঢোল ধামসা নিয়ে আদিবাসীদের শিকারে না যাওয়ার জন্য প্রচারও চালাচ্ছে । সচেতন করছেন সাধারণ মানুষকেও ।
প্রত্যেক বছর বৌদ্ধ পূর্ণিমা উপলক্ষ্যে বাঘমুন্ডি ব্লকের অযোধ্যা পাহাড়ে অনুষ্ঠিত হয় আদিবাসিদের শিকার উৎসব । জেলা পুলিশ প্রশাসনের পক্ষ থেকে আদিবাসীদের এই শিকার উৎসব ঠেকাতে নেওয়া হয় একাধিক উদ্যোগ । বুদ্ধ পূর্ণিমার এক সপ্তাহ আগে থেকে প্রতি বছর শিকার বন্ধের নির্দেশে প্রচার চালানো হয় । বুদ্ধ পূর্ণিমার দিন গোটা পাহাড়জুড়ে পুলিশি প্রহরা থাকে । তবুও পুলিশ প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞাকে উপেক্ষা করে প্রতি বছর শিকার উৎসব পালন করেন আদিবাসীরা । শিকারের সংখ্যাটা কমলেও শিকার কিন্তু বন্ধ হয়নি কোনও বছর ।
এই উৎসবে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই ওড়িশা, ঝাড়খণ্ড এবং আরও অন্যান্য রাজ্য থেকে আদিবাসী সম্প্রদায়ের বহু মানুষ আদিবাসী শিকারির দল যোগদান করে থাকে । এই দিনে তির-ধনুক, কুঠার, বল্লম নিয়ে গোটা অযোধ্যা পাহাড়ে দাপিয়ে বেড়ায় আদিবাসীরা । বনবিড়াল, হরিণ, শুকর, ময়ূর-সহ বিভিন্ন পশুপাখিদের শিকার করে সেই শিকার দেবদেবীদের অর্পণ করার পর রান্না করে সকলেই সেই মাংস খেয়ে থাকেন । এছাড়াও এই দিনটিতে নানান সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন হয়ে থাকে । দূর দূরান্ত থেকে বহু পর্যটকও ভিড় জমান এই উৎসবে । কিন্তু এবছর কোরোনার জেরে দেশজুড়ে জারি হওয়া লকডাউনে বাইরের জেলা বা বাইরের রাজ্য থেকে কোনও আদিবাসী শিকারিরা আসতে পারবেন না অযোধ্যায় । তাছাড়া পুরুলিয়ার আদিবাসীদের একটা আতঙ্ক রয়েছে । তাই এবার শুধু সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে বাছাই করা কয়েকজন আদিবাসী সম্প্রদায়ের মানুষ শুধু পুজো করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন । বন্ধ থাকবে শিকার ।