ETV Bharat / state

200 বছরের প্রাচীন স্বর্ণপ্রতিমা, পুরুলিয়ার এই রাজবাড়ির পুজোর ইতিহাস জানেন ? - পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির পুজো

পুজোর চারদিন আরাধ্য হয় দ্বিভূজা দুর্গা মূর্তি, বাকি সময় থাকে লকারে ৷

স্বর্ণপ্রতিমা
author img

By

Published : Sep 26, 2019, 5:52 AM IST

Updated : Sep 26, 2019, 8:22 AM IST

পুরুলিয়া, 26 সেপ্টেম্বর : প্রতিমার বয়স 200 বছরের একটু বেশিই হবে ৷ তবে পুজোটি কিন্তু আরও প্রাচীন ৷ পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির পুজো ৷ প্রাচীন আমলের এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঔরঙ্গজেব থেকে রাজা জয়সিংহের নাম ৷

ইতিহাস জানার জন্য পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় 400 বছর ৷ সালটা 1666 ৷ সেই সময় দিল্লির তখতে ঔরঙ্গজেব ৷ চালু হয়েছে জিজিয়া কর ৷ ধর্মরক্ষার জন্য স্বপারিষদ সেই সময় উজ্জয়িনী থেকে পুরুলিয়ায় পালিয়ে আসেন রাজা জয়সিংহ ৷ পুরুলিয়ায় তখন বাস মুণ্ডাদের ৷ তাঁদের সর্দার খামার মুণ্ডাকে হত্যা করে সেই এলাকা দখল করেন জয়সিংহ ৷ নাম হয় জয়পুর ৷ মুণ্ডারা একটি খাঁড়াকে (তরোয়ারি) হিসেবে ইষ্টদেবী পুজো করতেন ৷ তা নিয়ে নেন জয়সিংহ ৷ সেই খাঁড়াটিকে কলা বউ হিসেবে পুজো শুরু করেন ৷

Purulia
বর্তমানে রাজবাড়ি

পরিবারের সদস্য প্রশান্ত নারায়ণ সিংদেও বলেন, "এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে পুজো হত ৷ পরবর্তীতে সপ্তম রাজা কাশীনাথ সিংয়ের আমলে দুর্গাপুজোর সময় প্রদীপ থেকে আগুন লেগে যায় ৷ অমঙ্গলের ভয়ে তিনদিন ঠাকুরের সামনে ছিলেন রাজা ৷ পরে স্বপ্নে দেখতে পান মা বলছেন, তুমি আমার স্বর্ণপ্রতিমা প্রতিষ্ঠা কর ৷" এরপর বারাণসী থেকে স্বর্ণশিল্পী এনে শুরু হয় সোনার মূর্তি তৈরির কাজ ৷ 108টি সোনার আকবরি মোহর দিয়ে দ্বিভুজা দুর্গা মূর্তি ও 60 কেজি রূপা দিয়ে চালচিত্র তৈরি করা হয় ৷ এরপর থেকে এভাবেই পুজো হয়ে আসছে ৷

দেখুন ভিডিয়ো

পরিবারের আরও এক সদস্য শংকরনারায়ণ সিংদেও জানান, 1970 সালে রাজবাড়িতে ডাকাত পড়ে ৷ কয়েকটি বিগ্রহ চুরি হয়ে যায় ৷ তবে সোনার মূর্তি নিয়ে যেতে পারেনি ডাকাতরা ৷ তৎকালীন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের পরামর্শে সোনার মূর্তিটিকে ব্যাঙ্কের লকারে রাখা শুরু হয় ৷ এরপর থেকেই সারা বছর লকারেই থাকে সোনার মূর্তি ৷ পুজোর চারদিন কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় রাজবাড়িতে আনা হয় ৷ পুজো শেষে আবার তা লকার রাখা হয় ৷

ধুমধাম করে চারটে দিন পুজো হয় ৷ বছরের বাকি দিনগুলি ব্যাঙ্কের লকারেই রাখা হয় পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির সোনার তৈরি দ্বিভূজা দুর্গা মূর্তি ৷ এছাড়াও এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ রূপোর তৈরি চালচিত্র ৷ আর বহু ইতিহাস সম্বলিত এই পুজো দেখতে ভিড় জমান পুরুলিয়া-সহ পড়শি ঝাড়খণ্ড ও বিহারের মানুষও ৷

Purulia
রাজবাড়ির বর্তমান অবস্থা

পুরুলিয়া, 26 সেপ্টেম্বর : প্রতিমার বয়স 200 বছরের একটু বেশিই হবে ৷ তবে পুজোটি কিন্তু আরও প্রাচীন ৷ পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির পুজো ৷ প্রাচীন আমলের এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঔরঙ্গজেব থেকে রাজা জয়সিংহের নাম ৷

ইতিহাস জানার জন্য পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় 400 বছর ৷ সালটা 1666 ৷ সেই সময় দিল্লির তখতে ঔরঙ্গজেব ৷ চালু হয়েছে জিজিয়া কর ৷ ধর্মরক্ষার জন্য স্বপারিষদ সেই সময় উজ্জয়িনী থেকে পুরুলিয়ায় পালিয়ে আসেন রাজা জয়সিংহ ৷ পুরুলিয়ায় তখন বাস মুণ্ডাদের ৷ তাঁদের সর্দার খামার মুণ্ডাকে হত্যা করে সেই এলাকা দখল করেন জয়সিংহ ৷ নাম হয় জয়পুর ৷ মুণ্ডারা একটি খাঁড়াকে (তরোয়ারি) হিসেবে ইষ্টদেবী পুজো করতেন ৷ তা নিয়ে নেন জয়সিংহ ৷ সেই খাঁড়াটিকে কলা বউ হিসেবে পুজো শুরু করেন ৷

Purulia
বর্তমানে রাজবাড়ি

পরিবারের সদস্য প্রশান্ত নারায়ণ সিংদেও বলেন, "এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে পুজো হত ৷ পরবর্তীতে সপ্তম রাজা কাশীনাথ সিংয়ের আমলে দুর্গাপুজোর সময় প্রদীপ থেকে আগুন লেগে যায় ৷ অমঙ্গলের ভয়ে তিনদিন ঠাকুরের সামনে ছিলেন রাজা ৷ পরে স্বপ্নে দেখতে পান মা বলছেন, তুমি আমার স্বর্ণপ্রতিমা প্রতিষ্ঠা কর ৷" এরপর বারাণসী থেকে স্বর্ণশিল্পী এনে শুরু হয় সোনার মূর্তি তৈরির কাজ ৷ 108টি সোনার আকবরি মোহর দিয়ে দ্বিভুজা দুর্গা মূর্তি ও 60 কেজি রূপা দিয়ে চালচিত্র তৈরি করা হয় ৷ এরপর থেকে এভাবেই পুজো হয়ে আসছে ৷

দেখুন ভিডিয়ো

পরিবারের আরও এক সদস্য শংকরনারায়ণ সিংদেও জানান, 1970 সালে রাজবাড়িতে ডাকাত পড়ে ৷ কয়েকটি বিগ্রহ চুরি হয়ে যায় ৷ তবে সোনার মূর্তি নিয়ে যেতে পারেনি ডাকাতরা ৷ তৎকালীন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের পরামর্শে সোনার মূর্তিটিকে ব্যাঙ্কের লকারে রাখা শুরু হয় ৷ এরপর থেকেই সারা বছর লকারেই থাকে সোনার মূর্তি ৷ পুজোর চারদিন কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় রাজবাড়িতে আনা হয় ৷ পুজো শেষে আবার তা লকার রাখা হয় ৷

ধুমধাম করে চারটে দিন পুজো হয় ৷ বছরের বাকি দিনগুলি ব্যাঙ্কের লকারেই রাখা হয় পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির সোনার তৈরি দ্বিভূজা দুর্গা মূর্তি ৷ এছাড়াও এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ রূপোর তৈরি চালচিত্র ৷ আর বহু ইতিহাস সম্বলিত এই পুজো দেখতে ভিড় জমান পুরুলিয়া-সহ পড়শি ঝাড়খণ্ড ও বিহারের মানুষও ৷

Purulia
রাজবাড়ির বর্তমান অবস্থা
Intro:পুরুলিয়া : দূর্গামা আসেন কড়া পুলিশি প্রহরায় l পূজোর টানা চারদিন জেলা পুলিশের কড়া নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে রাজ পরিবারে বিরাজমান হয়ে পুজো নেন মা l প্রাচীন ঐতিহ্য ও আচারবিধি বজায় রেখে দক্ষিণবঙ্গের পুরুলিয়া জেলায় যে সমস্ত দূর্গা পুজো হয়ে থেকে তার মধ্যে জয়পুর রাজবাড়ীর দূর্গাপুজো অন্যতম l এই পূজোর অন্যতম আকর্ষণ হলো সোনার তৈরী দ্বিভুজা দূর্গা মূর্তি ও রুপার তৈরী চালচিত্র পুজো lBody:এই পুজোর ইতিহাস নিয়ে রাজ পরিবারের সদস্য শঙ্কর নারায়ণ সিংহদেও ও প্রশান্ত নারায়ণ সিংহদেও জানান, প্রায় চারশো বছর আগে ইংরেজির 1600 সালে রাজা জয়সিংহ উজ্জ্বয়নী থেকে এসে এই এলাকার মুন্ডা সর্দার খামার মুন্ডাকে হত্যাকে হত্যা করে জঙ্গলমহলের এই জয়পুর এলাকা দখল নিয়ে জয়পুরের পত্তন করেছিলেন l যার নামে এই স্থানের নাম হয় জয়পুর l প্রায় চারশো বছর আগে খামার মুন্ডারা এই এলাকার খাঁড়াটিকে তাদের ইস্ট দেবী হিসেবে পুজো করতেন l রাজা জয় সিংহ এই খাঁড়াটিকে মুন্ডা বসতি থেকে ছিনিয়ে নিয়ে, শক্তির দেবী হিসেবে বিনা মূর্তিতেই এই খাঁড়াটিকে কলা বৌ হিসেবে পুজো করার রীতি প্রচলন করেন l এর কোনো লিখিত তথ্য নেই, তবে কেবল পারম্পরিক প্রবাদ থেকেই এই তথ্য জানা যায় l
তারপর বহু বছর পর সপ্তম রাজা কাশিনাথ সিংহের আমলে দূর্গা পূজোর দিন আগুন লেগে যায় কলা বৌ-এ l পুড়ে ছাই হয়ে যায় গোটা ঘর l সেই সময় রাজা কাশিনাথ সিংহ মানত করেন সোনার প্রতিমা তৈরী করে তাতে রুপার চালচিত্র লাগিয়ে মায়ের পুজো করার সিদ্ধান্ত নেন l তারপরই সোনার বিগ্রহ তৈরীর জন্য বেনারসের স্বর্ণ শিল্পীদের ডেকে পাঠিয়ে 1 সের (1 কেজি) সোনার দ্বিভুজা দূর্গা মূর্তি ও দেড় মন (60 কেজি) রুপার চালচিত্র তৈরী করান l সেই থেকে মহা ধুমধামের সঙ্গে সোনার বিগ্রহ পুজো আসছে জয়পুর রাজবাড়ীতে l কিন্তু 1970 সালে ঘটে যায় আরও এক বিপত্তি l সেই সময় একদল ডাকাত হানা দেয় রাজবাড়ীতে l তবে ওই সোনার মূর্তি নিয়ে যেতে পারেনি তারা l ওই মন্দিরে থাকা সমস্ত অলংকার ও অন্যান্য দামি সামগ্রী চুরি করে নিয়ে যায় ওই ডাকাতদলটি l Conclusion:এই ঘটনার পরই টনক নড়ে রাজপরিবারের l তৎকালীন জেলা পুলিশ সুপারের উদ্যোগে রাজবাড়ীর দূর্গার স্বর্ণ বিগ্রহের নিরাপত্তা দিতে চালু হয় বিশেষ ব্যবস্থা l ঠিক হয় পূজোর পাঁচ দিন ছাড়া 360 দিন কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থার সঙ্গে বিগ্রহকে ব্যাংকের লকারে রাখা হবে l সেই থেকে আজও পর্যন্ত পূজোর পাঁচ দিনের জন্য ব্যাংক থেকে কড়া পুলিশি নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে পূজোর পাঁচ দিন আনা হয় রাজবাড়িতে l ব্যাপক নিরাপত্তা ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে হয় দূর্গা মায়ের পুজো l পুজো শেষে দশমীর দিন একইভাবে নিয়ে যাওয়া হয় ব্যাংকে l
তবে দূর্গা পূজোর এই চারটি দিন মহাধুমধামের সঙ্গে পালন করা হয় l আয়োজিত হয় নানান ধরণের সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান l রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে তো বটেই প্রতিবেশী রাজ্যে ঝাড়খন্ড এবং বিহার থেকেও বহু দর্শনার্থী পুজো দেখতে ভিড় জমান এই রাজবাড়ীতে l
Last Updated : Sep 26, 2019, 8:22 AM IST
ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.