পুরুলিয়া, 26 সেপ্টেম্বর : প্রতিমার বয়স 200 বছরের একটু বেশিই হবে ৷ তবে পুজোটি কিন্তু আরও প্রাচীন ৷ পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির পুজো ৷ প্রাচীন আমলের এই পুজোর সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে ঔরঙ্গজেব থেকে রাজা জয়সিংহের নাম ৷
ইতিহাস জানার জন্য পিছিয়ে যেতে হবে প্রায় 400 বছর ৷ সালটা 1666 ৷ সেই সময় দিল্লির তখতে ঔরঙ্গজেব ৷ চালু হয়েছে জিজিয়া কর ৷ ধর্মরক্ষার জন্য স্বপারিষদ সেই সময় উজ্জয়িনী থেকে পুরুলিয়ায় পালিয়ে আসেন রাজা জয়সিংহ ৷ পুরুলিয়ায় তখন বাস মুণ্ডাদের ৷ তাঁদের সর্দার খামার মুণ্ডাকে হত্যা করে সেই এলাকা দখল করেন জয়সিংহ ৷ নাম হয় জয়পুর ৷ মুণ্ডারা একটি খাঁড়াকে (তরোয়ারি) হিসেবে ইষ্টদেবী পুজো করতেন ৷ তা নিয়ে নেন জয়সিংহ ৷ সেই খাঁড়াটিকে কলা বউ হিসেবে পুজো শুরু করেন ৷
পরিবারের সদস্য প্রশান্ত নারায়ণ সিংদেও বলেন, "এভাবেই দীর্ঘদিন ধরে পুজো হত ৷ পরবর্তীতে সপ্তম রাজা কাশীনাথ সিংয়ের আমলে দুর্গাপুজোর সময় প্রদীপ থেকে আগুন লেগে যায় ৷ অমঙ্গলের ভয়ে তিনদিন ঠাকুরের সামনে ছিলেন রাজা ৷ পরে স্বপ্নে দেখতে পান মা বলছেন, তুমি আমার স্বর্ণপ্রতিমা প্রতিষ্ঠা কর ৷" এরপর বারাণসী থেকে স্বর্ণশিল্পী এনে শুরু হয় সোনার মূর্তি তৈরির কাজ ৷ 108টি সোনার আকবরি মোহর দিয়ে দ্বিভুজা দুর্গা মূর্তি ও 60 কেজি রূপা দিয়ে চালচিত্র তৈরি করা হয় ৷ এরপর থেকে এভাবেই পুজো হয়ে আসছে ৷
পরিবারের আরও এক সদস্য শংকরনারায়ণ সিংদেও জানান, 1970 সালে রাজবাড়িতে ডাকাত পড়ে ৷ কয়েকটি বিগ্রহ চুরি হয়ে যায় ৷ তবে সোনার মূর্তি নিয়ে যেতে পারেনি ডাকাতরা ৷ তৎকালীন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপারের পরামর্শে সোনার মূর্তিটিকে ব্যাঙ্কের লকারে রাখা শুরু হয় ৷ এরপর থেকেই সারা বছর লকারেই থাকে সোনার মূর্তি ৷ পুজোর চারদিন কড়া পুলিশি নিরাপত্তায় রাজবাড়িতে আনা হয় ৷ পুজো শেষে আবার তা লকার রাখা হয় ৷
ধুমধাম করে চারটে দিন পুজো হয় ৷ বছরের বাকি দিনগুলি ব্যাঙ্কের লকারেই রাখা হয় পুরুলিয়ার জয়পুর রাজবাড়ির সোনার তৈরি দ্বিভূজা দুর্গা মূর্তি ৷ এছাড়াও এই পুজোর অন্যতম আকর্ষণ রূপোর তৈরি চালচিত্র ৷ আর বহু ইতিহাস সম্বলিত এই পুজো দেখতে ভিড় জমান পুরুলিয়া-সহ পড়শি ঝাড়খণ্ড ও বিহারের মানুষও ৷