পুরুলিয়া, 11 জানুয়ারি : "আসছে মকর দু'দিন সবুর কর/ তোরা মুড়ি পিঠা জোগাড় কর/ আসছে মকর দু'দিন সবুর কর"। না দু'দিন নয় মকর সংক্রান্তির সময় টুসু পরবের জন্য পুরুলিয়া জেলার মানুষ এক বছর ধরে অপেক্ষা করে থাকেন । পুরুলিয়া, এই নামটা শুনলেই আমাদের মনে ভেসে ওঠে ছৌ-নাচ, লালমাটি, জঙ্গল ঘেরা পাহাড় আর বসন্তের লাল পলাশে রাঙা একের পর এক নৈস্বর্গিক প্রাকৃতিক দৃশ্যের ৷ তবে পুরুলিয়ার অন্যতম পরিচিতি হল টুসু পরব (Tusu Festival of Purulia ) ৷ পুরুলিয়াবাসী মেতে ওঠে এই উৎসবে ৷ রঙিন রঙিন কাগজ ও পাট কাঠি দিয়ে নির্মিত চৌডলে ঝলমল হয়ে ওঠে পুরুলিয়া জেলা ।
এই টুসু উৎসব পৌষ সংক্রান্তি থেকে শুরু হয়ে এক সপ্তাহ ধরে মেলা চলে ৷ এই পরবের আলাদা গুরুত্ব তাই পুরুলিয়ার সংস্কৃতিতেও আছে ৷ কবি তথা অধ্যাপক দিলীপ বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথায়, "ধানের তুষ থেকে বা তুষালি ব্রত থেকেই এই নামকরণ হয়েছে বলে অনেকে বলে থাকেন । তবে টুসু-ভাদু এই দুই উৎসব পুরুলিয়ার মানুষের প্রাণের উৎসব হয়ে উঠেছে । টুসু যেন পুরুলিয়ার মেয়েদের কাছে সখী । সেই জন্য এই পরবের আলাদা গুরুত্ব রয়েছে এখানকার মহিলাদের কাছে ৷" তবে সময়ের গতিতে বর্তমান প্রজন্ম যে এগুলি ভুলতে বসেছে সে কথাও স্বীকার করেন তিনি ।
আরও পড়ুন : অসহায় ক্ষুধার্ত পথচারীদের জন্য গৃহবধূর খুশির ঝুড়ি বনগাঁয়
রীতি অনুযায়ী, টুসু পরবের আগে মেয়েরা বাজার থেকে চৌডল কিনে নিয়ে আসে এবং মকর সংক্রান্তির আগের দিন, যেটিকে স্থানীয় ভাষায় 'বাউড়ি' বলা হয় ৷ রাত জেগে মেয়ে-বউরা টুসু গান গেয়ে থাকেন ৷ যদিও এক মাসে আগে থেকেই চাল গুঁড়োর আলপনা দিয়ে টুসু পাতা হয়, যাতে প্রত্যহ একটি করে ফুল নিবেদন করে থাকেন কুমারী মেয়েরা, এটিই টুসুর পুজো । মকর সংক্রান্তির দিন ওই রঙিন চৌডল-সহ টুসুকে সঙ্গে নিয়ে গান গাইতে গাইতে মেয়েদের দল যায় নিকটবর্তী নদী বা জলাশয়ে ৷ গানের কথাগুলি এইরকম " টুসু ধনকে জলে দিও না/ আমার মনে বড় বেদনা /টুসু ধনকে জলে দিও না ।" এরপর টুসুকে বিসর্জন দিয়ে মকর স্নান সেরে বাড়ি ফেরেন তাঁরা । টুসু উপলক্ষে জেলার নানা প্রান্তে বসে মেলাও ৷ তবে করোনার কারণে এবছর তাঁদের বিক্রি সেরকম হয়নি বলে জানাচ্ছেন বিক্রেতারা ৷