পুরুলিয়া, 19 ফেব্রুয়ারি : খাটিয়াতে একমাসের কন্যাসন্তানকে নিয়ে বসে আছেন পাপিয়া মাজি ৷ মাঝেমধ্যেই ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠছেন । বলছেন, "ডিউটি থেকে ফিরে ফোন করবে বলেছিল । কিন্তু, ফোনটা আর এল না ।"
তিন বছর আগে পাপিয়ার বিয়ে হয়েছিল জওয়ান কানাই মাজির সঙ্গে ৷ আড়াই বছরের এক কন্যাসন্তান আছে তাঁদের ৷ এক মাস আগেই আরও এক কন্যাসন্তানের জন্ম দেন তিনি ৷ 2014-তে সেনাবাহিনীতে যোগ দেন কানাই ৷ ছত্তিশগড়ে পোস্টিং ছিল তাঁর ৷ গতকাল মাওবাদীদের সঙ্গে সংঘর্ষে প্রাণ হারিয়েছেন ৷ এখন দুই মেয়েকে নিয়ে কী করবেন, ভেবে পাচ্ছেন না কানাইয়ের স্ত্রী ৷
এখনও স্বামীর মৃত্যু মেনে নিতে পারেননি পাপিয়া ৷ বারবার মনে করছেন, এই বুঝি ফোন এল ৷ সব ঠিক হয়ে যাবে ৷ বলেন "আমার এক বন্ধু জানায়, গুলি লেগেছে ৷ আমি ভেবেছিলাম, বেঁচে আছে ৷ এতটা কিছু হয়নি ৷ কিন্তু, রায়পুর কন্ট্রোলরুমে ফোন করতে সবাই এড়িয়ে যাচ্ছিল ৷ কিছু বলতে চাইছিল না ৷ রাতে বুঝতে পারি, কিছু অঘটন ঘটেছে ৷ তবু বিশ্বাস ছিল যে, সব ঠিক আছে ৷ তারপর আমার শ্বশুরমশাই যখন আমাকে আনতে যান, তখনই বুঝতে পারি যে তিনি আর নেই ৷"
এখন দুই মেয়ে নিয়ে কী করবেন, স্বপ্নগুলো শেষ হয়ে গেল বলেই আবার কান্নাই ভেঙে পড়লেন পাপিয়া । বললেন, "দেশের জন্য শহিদ হল, কিন্তু, আমাদের পরিবার পুরো শেষ হয়ে গেল ৷ আমার আড়াই বছর ও এক মাসের দু'টো সন্তান ৷ আমাদের যে ছোটো ছোটো স্বপ্নগুলো, আশাগুলো, সব নষ্ট হয়ে গেল ৷ আমাদের জীবনে কাউকে দরকার নেই ৷ শুধু সেই মানুষটাকে দরকার ৷ শত চেষ্টা করলেও সেই মানুষটাকে ফিরে পাওয়া যাবে না ৷ সব শেষ হয়ে গেল ৷"
কানাইয়ের বাবা দিলীপ মাজি বলেন, "সন্ধ্যা ছ'টা নাগাদ খবর আসে ৷ আমাদের জানানো হয়, ওর উরুতে গুলি লেগেছে ৷ রায়পুর হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ৷ তারপর রাতে পাড়ার লোকের থেকে জানতে পারি, সব শেষ ৷ তিনদিন আগে শেষ কথা হয়েছিল ৷ ছেলে যা করেছে, দেশের জন্য করেছে ৷ কিন্তু, তাঁর ওই দুই সন্তানকে মানুষ যাতে করতে পারি, সেটা দেখতে সবাইকে অনুরোধ করব ৷"