পুরুলিয়া, 24 মার্চ : কর্মী নিয়োগের জাল নোটিস ঘিরে হইচই পুরুলিয়া দেবেন মাহাত মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ৷ অভিযোগ, গ্রুপ-ডিতে কর্মী নিয়োগের প্রতারণা চক্র ফের সক্রিয় হয়ে উঠেছে জেলাজুড়ে । প্রতারকরা ইতিমধ্যেই মেডিক্যাল কলেজের ভুয়ো নোটিফিকেশন বের করে বেকার যুবক-যুবতীদের নিজেদের প্রতারণার জালে জড়ানোর চেষ্টা শুরু করেছে বলে খবর । এমনকী ইন্টারভিউ থেকে নিয়োগপত্র সবই ভুয়ো দেওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ (Fake notice of recruitment of staff in Purulia Medical College) ।
বিষয়টি জানাজানি হতেই শোরগোল শুরু হয়েছে জেলাজুড়ে । ওই নোটিস দেখে অনেকেই নির্ধারিত দিনে সাক্ষাৎকার দিতে যাবেন বলে ঠিক করে রেখেছেন । এখন জানা যাচ্ছে, সেই নোটিসটিই ভুয়ো । কিন্তু পরীক্ষার্থীরা হয়তো এখনও পর্যন্ত এই বিষয়ে কিছুই জানেন না ৷ একইসঙ্গে মেডিক্যাল কলেজকে কেন্দ্র করেই বারবার এধরনের প্রতারণা চক্র কেন সক্রিয় হচ্ছে, তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে বিভিন্ন মহলে ।
স্থানীয় ও মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, সম্প্রতি মেডিক্যাল কলেজের একাধিক পদে কর্মী ও আধিকারিক নিয়োগের একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হয় । তার পরেই 56 জন কর্মী নিয়োগের একটি ভুয়ো বিজ্ঞপ্তি ছড়িয়ে পড়ে । ওই ভুয়ো বিজ্ঞপ্তিতে রাজ্য সরকারের লোগোও ব্যবহার করা হয়েছে । ওই ভুয়ো বিজ্ঞপ্তিতে কর্মী নিয়োগে শিক্ষাগত যোগ্যতার কোনও মানদন্ড রাখা হয়নি । মার্চ মাসের 30 তারিখ সকাল এগারোটার সময় মেডিক্যাল কলেজই ইন্টারভিউ নেওয়া হবে বলে লেখা রয়েছে ওই ভুয়ো নিয়োগপত্রে (Fake Job Notice) ।
আরও পড়ুন : BJP Protest in Assembly : বগটুই কাণ্ডে মমতার পদত্যাগের দাবিতে বিধানসভায় বিজেপির বিক্ষোভ
মেডিক্যাল কলেজ সূত্রে জানা গিয়েছে, 56 জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী নিয়োগের যে বিজ্ঞপ্তি বাজারে ছড়িয়ে পড়েছে তা ভুয়ো । কর্মী নিয়োগের আসল বিজ্ঞপ্তি মেডিক্যাল কলেজ এবং পুরুলিয়া জেলা প্রশাসনের ওয়েবসাইটে আপলোড করা রয়েছে ৷ এমনকী এর আগেও এই ধরনের জাল নিয়োগের ঘটনা ঘটেছে দেবেন মাহাত মেডিকেল কলেজকে কেন্দ্র করে । নিয়োগপত্রে মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষের স্বাক্ষরও জাল করা হয়েছিল । সেসময় কলেজের পক্ষ থেকে পুলিশ সুপারের কাছে এবিষয়ে লিখিত অভিযোগও করা হয়েছিল ।
স্থানীয় সূত্রে আরও জানা গিয়েছে, মোটা টাকার বিনিময়ে কর্মী নিয়োগের এই প্রতারণা চক্র পুরুলিয়া শহর সহ জেলার প্রত্যন্ত এলাকাগুলিতেও নিজেদের জাল বিস্তার করতে সক্ষম হয়েছে । একাধিক থানাতে কয়েকজনকে গ্রেফতারও করেছিল পুলিশ । তবে এই চক্রের আসল মাথারা এখনও অধরা । নামমাত্র দু‘-একজনকে গ্রেফতার করেই পুলিশ তদন্ত কার্যত গুটিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন বিজেপির জেলা সভাপতি বিবেক রাঙা । তিনি বিষয়টি মেডিকেলের অধ্যক্ষের কাছে জানতে চাইবেন বলে জানিয়েছেন ।
অন্যদিকে ওই প্রতারণা চক্রে মেডিক্যাল কলেজেরও (Purulia Medical College) একাংশের জড়িত থাকার সম্ভাবনা প্রবল বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে । কলেজের কেউ জড়িত না থাকলে এতটা নিপুণ দক্ষতায় দীর্ঘদিন ধরে প্রতারণা চক্র চালানো সম্ভব নয় বলে মনে করছে পুলিশ । এবিষয়ে পুরুলিয়া জেলার জেলাশাসক রাহুল মজুমদার কোনও প্রতিক্রিয়া দেননি । জেলা পরিষদের সভাধিপতি সুজয় বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, "বিষয়টি শুনেছি । বারবার কেন মেডিক্যাল কলেজকে কেন্দ্র করেই প্রতারণা চক্র সক্রিয় হয়ে পড়ছে তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন ।"
আরও পড়ুন : Mamata Banerjee to Visit Bagtui : আজ বগটুইয়ে মমতা, যেতে পারেন হাসপাতালেও
এবিষয়ে মেডিক্যাল কলেজের (Purulia Medical College) অধ্যক্ষ পীতবরণ চক্রবর্তী বলেন, "ভুয়ো নিয়োগের নোটিফিকেশনের বিষয়টি নজরে আসার পরই পুলিশকে জানানো হয়েছে । এফআইআরও করা হয়েছে ।"
তিনি আরও বলেন, "আমার স্বাক্ষর এবং সরকারি লোগো নকল করা হয়েছে । এর আগেও এধরনের ঘটনা ঘটেছিল । তারপর পুলিশের তৎপরতায় কিছুদিন বন্ধ থাকলেও ফের প্রতারকরা সক্রিয় হয়ে পড়েছে । ঘটনার সঙ্গে হাসপাতালের কর্মী কেউ যুক্ত আছে কি না সেটা তো আর আমি খুঁজে বের করতে পারবো না । কেউ জড়িত থাকলে পুলিশকেই খুঁজে বের করতে হবে । এধরণের প্রতারণার ফাঁদে যাতে কেউ না পড়েন, সেবিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতনও করা হবে ।"