নন্দকুমার, 11 জুলাই : মনুয়া কাণ্ডে ছায়া এবার পূর্ব মেদিনীপুরে। প্রেমিকের সঙ্গে সম্পর্ক রাখতে পরিকল্পনা করে শওহরকে খুন করে দেহ বাড়ির ভিতরে পুঁতে দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বিবি ও তার প্রেমিক। মৃতের নাম শেখ নুর মহম্মদ(43)৷ নন্দকুমার থানার ফতেপুর গ্রামের ঘটনা ৷ আজ সকালে মৃতদেহটি উদ্ধার করতে আসমার বাপের বাড়ি ফতেপুর গ্রামে যায় পুলিশ ৷ সেখানেই রান্না ঘরে নুরের দেহ পুঁতে রাখা ছিল ৷ পুলিশ সেই দেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য পাঠাল ৷ দেহের পচন শুরু হয়েছে ৷ ঘটনার তদন্ত শুরু করেছে নন্দকুমার থানার পুলিশ।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, পেশায় ট্রাকের চালক ছিলেন শেখ নুর মহম্মদ দিন ৷ গত সপ্তাহের শুক্রবার অর্থাৎ প্রায় সাতদিন নিখোঁজ ছিলেন তিনি । পরিবারের তরফে নন্দকুমার থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করে মৃতের মা। নূর মহম্মদের দুই পুত্র সন্তান রয়েছে। জানা গিয়েছে, কয়েক বছর আগে থেকেই নুর মহম্মদের বেগম আসমা বিবি পাশের গ্রাম শ্যামসুন্দর পুরের যুবক শেখ দুলালের সঙ্গে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্কে ছিল। এনিয়ে দম্পতির মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত । একাধিকবার সেই বিবাদ মিটিয়ে নিতে নন্দকুমার থানার দ্বারস্থ হয় উভয় পক্ষ। কিন্তু আসমার সঙ্গে গোপনে সম্পর্ক থেকে যায় শেখ দুলালের। এই বিষয়টি জানতে পারার পর ফের দম্পতির মধ্যে বিবাদের সূত্রপাত হয় ৷ সম্পর্কের অবনতি হওয়ায় গত মাসে গ্রামের বেশ কিছু স্থানীয় বাসিন্দাদের উদ্যোগে উভয়পক্ষকে নিয়ে বসে একটি সালিশি সভা বসে। সেই সভায় গ্রামবাসীরা শেখ দুলালকে বিবাহ-বহির্ভূত সম্পর্ক থেকে বেরিয়ে আসার নির্দেশ দেন এবং বিভিন্ন ধরনের অপমানজনক কথাও বলেন। অভিযোগ, সেই সভায় দুলালকে হুমকিও দেন নুর মহম্মদ। এরপরই গত শুক্রবার বাড়ি থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় নুর মহম্মদ।
এরপরই নূর মোহাম্মদের নিখোঁজ হওয়ার পিছনে তাঁর বিবি আসমার হাত রয়েছে বলে সন্দেহ প্রকাশ করে পরিবার ও এলাকাবাসীরা । এরপর গতকাল দুপুরে আসমার বাপের বাড়িতে গিয়ে প্রতিবেশীরা নুর মহম্মদের খোঁজ করে ৷ তাঁর কাছে জানতে চায় কোথায় নুর ৷ তখনই আসমা জানায় শওহর গাড়ি নিয়ে ভিনরাজ্যে কাজে গিয়েছে। এরপরই প্রতিবেশীরা চেপে ধরতেই অসংলগ্ন উত্তর দিতে শুরু করে সে। তারপরই এলাকাবাসীদের সন্দেহ হওয়ায় নন্দকুমার থানার পুলিশকে খবর দেয় এলাকাবাসীরা ৷ তারপরই পুলিশ আসমাকে আটক করে থানায় নিয়ে যায়।
গতকাল রাতে থানার পুলিশের জেরায় শওহরকে খুনের কথা স্বীকার করে আসমা ৷ সে পুলিশকে জানান, সম্পর্কের টানাপোড়েনের কারণে শওহরকে খুন করেছে সে এবং শেখ দুলাল। ওই রাতেই দুলালকে আটক করে নন্দকুমার থানার পুলিশ। দুই অভিযুক্তকে মুখোমুখি বসিয়ে জেরা করতেই উঠে আসে চাঞ্চল্যকর তথ্য। এলাকাবাসীদের চোখ এড়াতে নুর মহম্মদকে খুন করার পর বাড়ির মধ্যেই পুঁতে দিয়েছিল তারা। যাতে কোনও রকম দুর্গন্ধ না ছড়ায় তার জন্য গর্তের মুখে সিমেন্ট দিয়ে প্লাস্টারও করে দেয় তারা। স্বীকারোক্তির পরই আসমা ও তার প্রেমিক দুলালকে রাতেই গ্রেপ্তার করে পুলিশ । আজ সকালে মৃতদেহটি উদ্ধার করতে আসমার বাপের বাড়ি ফতেপুর গ্রামে যায় পুলিশ ৷ সেখানে রান্না ঘর থেকে নুরের দেহ উদ্ধার করে পুলিশ।
এবিষয়ে মৃতের দাদা শেখ সুখউদ্দিন বলেন, "গ্রামের তরফে যেদিন দুই জনকে নিয়ে সালিশি সভায় বসা হয়েছিল সেদিনই দুলাল অপমানের প্রতিশোধ নেবে বলে জানিয়েছিল। গতকাল আমরা আসমাকে চেপে ধরতেই সে খুনের কথা স্বীকার করে নেয়। নিজের বাপের বাড়িতে দাদকে খুন করে পরিকল্পনা করে পুঁতে দিয়েছিল ৷"
জেলার পুলিশ আধিকারিক জানান, খুনের কথা স্বীকার করে নিয়েছে অভিযুক্তরা । আমরা ঘটনার তদন্ত করছি । দেহ ময়নাতদন্তের পরে জানা সম্ভব হবে কিভাবে খুন করা হয়েছে।"