নন্দীগ্রাম, 18 জানুয়ারি : আজ শুভেন্দুর গড়ে আসছেন তাঁর একদা নেত্রী । নন্দীগ্রামের তেখালি গোকুলনগরে সভা করবেন তৃণমূল সুপ্রিমো । গত 19 ডিসেম্বর রাজ্য রাজনীতির সাম্প্রতিক ইতিহাসে সম্ভবত সবথেকে বড় পালাবদল হয়ে গিয়েছে । ঘাসফুলের জার্সি ছেড়ে পদ্মফুলের জার্সি গায়ে চাপিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী । ঐতিহাসিক এই পালাবদলের পর এই প্রথম শুভেন্দু-গড়ে পা রাখছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
শুভেন্দু বিভিন্ন সময়ে নিজেকে নন্দীগ্রামের ভূমিপূত্র বলে দাবি করে এসেছেন । দক্ষ সংগঠক হিসাবে তৃণমূলে থাকাকালীনও যথেষ্ট নামডাক ছিল তাঁর । এই পরিস্থিতিতে আজ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নন্দীগ্রামে আসাটা শুধুমাত্র কোনও জনসভাই নয়, বর্তমান দলবদলের খেলায় তৃণমূলের লিটমাস টেস্টও বটে । দাদার অনুগামীদের আনুগত্যে ফাটল ধরানোর সভা আজ নন্দীগ্রামে ।
আর আজকের সভার আগে রাজ্য রাজনীতির লাইমলাইটে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে সমানে সমানে টক্কর দিচ্ছেন অধিকারীরা । ছেলে দল ছাড়লেও এখনও তৃণমূলেই রয়েছেন কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী । তমলুকের সাংসদ দিব্যেন্দু অধিকারীও দল ছাড়েননি । কিন্তু আজকের সভায় কি আদৌ তাঁদের দেখা যাবে ? ইটিভি ভারতের তরফে যোগাযোগ করা হয়েছিল অধিকারী পরিবারের সাংসদদের সঙ্গে । শিশিরবাবু শারীরিক অসুস্থতার 'অজুহাতে' আজকের সভায় থাকতে পারবেন না বলে জানিয়েছেন । বলেছেন, "আমার পায়ে অপারেশন হয়েছিল । তাই আমি বাড়ির বাইরে যেতে পারি না ।"
আরও পড়ুন : এবার শক্তি প্রদর্শন দক্ষিণ কলকাতায়, রোড শো বিজেপির
তবে দিব্যেন্দু সভায় যাওয়ার বিষয়ে জল্পনা এখনও জিইয়ে রাখলেন । বললেন, "যাওয়ার বিষয়ে এখনও ঠিক করিনি । পরে বলব ।"
শুভেন্দু অধিকারী দলত্যাগী হওয়ার পর থেকেই অধিকারীদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হয়েছে দলের । বর্ষীয়ান সাংসদ শিশির অধিকারীর ডানাও ছেঁটে ফেলা হয়েছে । প্রথমে দিঘা শংকরপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যানের পদ 'কেড়ে' নেওয়া হয় শিশিরবাবুর থেকে । পরে জেলা সভাপতির পদ থেকেও 'ছেঁটে' ফেলা হয় । এই টালমাটাল অবস্থার মধ্যেই শুভেন্দুর ভাই সৌমেন্দুকে সরিয়ে দেওয়া হয় কাঁথি পৌরসভার প্রশাসক পদ থেকে । পরে তিনি দাদার পথ অনুসরণ করে গেরুয়া শিবিরে নাম লেখান ।
আরও পড়ুন : সাংবাদিক কুণালের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন শিশিরের, দায়িত্ব মনে করালেন তৃণমূল মুখপাত্র
সূত্রের খবর, আজকের সভার জন্য শান্তিকুঞ্জে কোনও ডাক পাঠানো হয়নি । রাজনীতির থেকে যে তাঁর কাছে পরিবার আগে, তা দলত্যাগী ছেলেকে সম্পদ বলে আগেই বুঝিয়ে দিয়েছেন শিশিরবাবু । আজ সভামঞ্চ থেকে যদি কোনও বেফাঁস মন্তব্য করে ফেলেন কাঁথির সাংসদ ! শোনা যাচ্ছে, সেই ভয় থেকেই অধিকারীদের সভায় ডাকার বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইছে তৃণমূল শিবির । হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিট থেকেও নাকি সেইরকম বার্তা এসেছে ।
তবে অধিকারী-সাংসদদের নিয়ে যে দলের কেউ খুব একটা মাথা ঘামাচ্ছে না, তা তৃণমূলের জেলা কোর কমিটির সদস্য মামুদ হোসেনের বক্তব্য থেকেই স্পষ্ট । আজকের জনসভায় সাংসদদের আসা প্রসঙ্গ বলেন, "গত কয়েক মাস ধরে এঁরা কোথায় আছেন কেউ জানে না । আর শিশিরদা আমাদের শ্রদ্ধেয় নেতা । তিনি বলেছেন, শুভেন্দু অধিকারী তাঁর পরিবারের সম্পদ । যে শুভেন্দু অধিকারী তৃণমূলকে পচা-গলা এবং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে গালাগালি করছেন, তিনি তৃণমূলের কাছে আপদ । শিশিরবাবু তাঁর ছেলেকে সম্পদ বলতে পারেন । কিন্তু আমাদের কাছে আপদ । স্বাভাবিকভাবে এঁরা পরিবারে সবাই একজোট আছে । আর সাংসদ পদ বাঁচানোর জন্য এঁরা তৃণমূলে থাকার ভান করছেন ।"
আরও পড়ুন : "আমফানের টাকা চোররা এবার কিডনি চুরি করবে", ঘাসফুলকে আক্রমণ শুভেন্দুর
রাজ্য-রাজনীতির নাটকীয়তা এখানেই শেষ নয় । আজ যখন নন্দীগ্রামে শুভেন্দুর খাসতালুকে সভা করবেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, তখন নন্দীগ্রামের ভূমিপুত্র থাকবেন মমতার গড় কলকাতায় । টালিগঞ্জ থেকে রাসবিহারি পর্যন্ত রোড শো করবেন শুভেন্দু । এর আগে ব্যারাকপুরে এক সভা থেকে হরিশ চ্যাটার্জি স্ট্রিটে পদ্ম ফোটানোর হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের নেতা । আজকের দ্বৈরথে কি সেই 'পদ্ম' ফোটাতে পারবেন শুভেন্দু অধিকারী ? নাকি শুভেন্দুর খাসতালুকেই 'ঘাস ফুল' ফুটিয়ে আসবেন তৃণমূল সুপ্রিমো ? সেই দিকেই এখন তাকিয়ে রয়েছে গোটা রাজ্য ।