দিঘা, 17 জুলাই : অনেক আশা নিয়ে রোজ মাঝ সমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছেন তাঁরা ৷ নাওয়া-খাওয়া ভুলে এখন একটাই লক্ষ্য তাঁদের ৷ কিন্তু, প্রতিবারই হতাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে ৷ গত বছরের মতো এবারও দিঘায় সেভাবে দেখা নেই ইলিশের ৷ দুই মাসের ব্যান পিরিয়ড (মাছ প্রজননের জন্য)-সহ লকডাউনের 101 দিন পার করে আনলক 2 পর্বে 1 জুলাই থেকে সমুদ্রে পাড়ি দিচ্ছেন মৎস্যজীবীরা ৷ প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার লঞ্চ-ট্রলার ও ভুটভুটি সমুদ্রে নামছে ৷ কিন্তু, যার জন্য এত কিছু, তারই দেখা নেই সেভাবে ৷ লাভের চেয়ে লোকসানই বেশি বলে জানাচ্ছেন মৎসজীবীরা ৷
আষাঢ় মানেই ইলিশ ধরার মরশুম ৷ ইলশেগুড়ি বৃষ্টি আর পূবালি হাওয়ায় এবার ভালো ইলিশ পাওয়া যাবে বলেই আশা ছিল ৷ আবার লকডাউনের জেরে পরিষ্কার হয়েছে সমুদ্র ৷ খাবারও প্রচুর ৷ তাই ইলিশ পাওয়ার সম্ভাবনাও ছিল বেশি ৷ আষাঢ় পেরিয়ে শুরু হয়েছে শ্রাবণ ৷ কিন্তু, দক্ষিণবঙ্গে এখনও সেভাবে বৃষ্টি হয়নি ৷ তাই দেখা মিলছে না ইলিশেরও ৷ জালে ইলিশ না ওঠার জন্য আবহাওয়ার খামখেয়ালিপনাকেই দুষছেন মৎস্যজীবীরা ৷ কোরোনা সংকটের মধ্যে কর্মচারীদের বেতন দিয়ে জ্বালানি যন্ত্রণা (ডিজ়েলের মূল্যবৃদ্ধি) সহ্য করে শুধুমাত্র ইলিশের আশাতেই সমুদ্রে লঞ্চ-ট্রলার ভাসিয়েছিলেন মালিকরা ৷ কিন্তু, সেভাবে ইলিশ না পাওয়ায় হতাশ ৷ তবে, খালি হাতে ফিরতে হয়নি তাঁদের ৷ ইলিশ বাদে অন্য সামুদ্রিক মাছ নিয়ে ফিরেছে লঞ্চ-ট্রলারগুলো ৷
ফিশিং লঞ্চের মালিকদের কথায়, বিগত বছরগুলোতে এই সময়ে প্রতিদিন 20-30 টন ইলিশ দেশ-বিদেশের বাজারে সরবরাহ করা হত ৷ আবহাওয়ার কারণে গত বছরও তেমন ইলিশ ছিল না ৷ মরশুম শুরুর 17 দিন পর এবার দেড় টন ইলিশও সরবরাহ করা যায়নি ৷ দিঘা মোহনার লঞ্চ মালিক গিরিশচন্দ্র রাউত বলেন, "মাঝিরা প্রতিনিয়ত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন ইলিশ ধরার জন্য ৷ কিন্তু, কোনওভাবেই তা নাগালে আসছে না ৷ প্রথম দিকটায় বেশ কয়েকটা ইলিশ ধরা পড়েছিল ৷ তারপর থেকে আজ পর্যন্ত তেমন ইলিশ নেই ৷ লঞ্চ সাজিয়ে মাঝ সমুদ্রে নামাতে প্রায় 10-12 লাখ টাকা খরচ হয় ৷ মাঝিদের বেতন থেকে শুরু করে জালের ক্ষতি প্রচুর টাকার ব্যাপার ৷ ইলিশ সেভাবে না ওঠায় ক্ষতি হচ্ছে ৷ কর্মচারীদের বেতন না দিলে ওদের সংসার চলবে না ৷ সব কিছু মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে চলছে আমাদের ৷ তাও ব্যবসা চালিয়ে যেতে হচ্ছে ৷"
আড়তদার স্বদেশ রঞ্জন নায়ক বলেন, "প্রতি বছর দিঘার মোহনা থেকে প্রায় 10 কোটি টাকা আয় হয় ইলিশ বিক্রি করে ৷ কিন্তু, এ বছর এখনও ইলিশের দেখা নেই ৷ ইলিশ ধরার জাল যারা তৈরি করেছেন, তাঁরা প্রচুর লোকসানে পড়েছেন ৷ ডিজ়েলের দাম, জাল ও কর্মীদের দাম যে হারে বেড়েছে তাতে সবার বেতন ও খাওয়া খরচ দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে ৷ এ বছরও বোটের মালিকরা গত বছরের ক্ষতি নিয়েই ফের ধার দেনা করে ইলিশ ধরতে সমুদ্রে যাচ্ছেন ৷ এ বছরও ইলিশ না পাওয়া গেলে অনেক লঞ্চ-ট্রলার বসে যেতে বাধ্য হবে ৷ আমাদের কাছে বোটের মালিকরা মাছ ধরতে যাওয়ার আগে অগ্রিম টাকা নেন ৷ ইলিশ না পেলে ওরা আমাদের সেই টাকা ফেরত দেবে কী করে ৷"
তবে, সমুদ্রে জল বাড়লে ও বৃষ্টি হলে ইলিশ ধরা পড়বে বলে আশাবাদী দিঘা ফিশারম্যান অ্যান্ড ফিশ ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম কর্মকর্তা নবকুমার পয়ড়া ৷ তিনি বলেন, "মরশুমে প্রায় 1,000-1,200 টন ইলিশ মেলে দিঘার সমুদ্রে ৷ কিন্তু, এবছর এখনও দেখা মেলেনি ইলিশের ৷ যে কয়েকটা ইলিশ জালে পড়েছে, তাও বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে ৷ 500 গ্রাম ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে 850 টাকায় ৷ যা 300-400 টাকায় বিক্রি হওয়ার কথা ৷ এক প্রকার বলা চলে, দিঘাতে এখন ইলিশের খরা চলছে ৷ আশা রাখছি, ঝড়-বৃষ্টি ও পূবালী বাতাস শুরু হলে আবার ইলিশ ওঠা শুরু হবে ৷"