কলকাতা, 19 ডিসেম্বর : তৃণমূল কংগ্রেস থেকে আগেই ইস্তফা দিয়েছেন শুভেন্দু অধিকারী। শনিবার যোগদান করলেন ভারতীয় জনতা পার্টিতে। তার আগে শুভেন্দুর লেখা 6 পাতার একটি খোলা চিঠি সামনে এসেছে। যে চিঠিতে তিনি তাঁর দল ছাড়ার কারণ উল্লেখ করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের একেবারে নিচুতলার কর্মীদের উদ্দেশ্যে।
কী লিখেছেন তিনি, তার অংশবিশেষ দেওয়া হল নিচে -
আমাদের সকলের মহান ও ভালোবাসার পশ্চিমবঙ্গ আজ একটি গুরুত্বপূর্ণ সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে রয়েছে। আমরা যেহেতু 2021 সালের নির্বাচনের দিকে এগিয়ে চলেছি, আমাদের পশ্চিমবঙ্গবাসীকে একটি বিকল্পকে বেছে নিতে হবে, যা আমাদের উপর বরাবরের জন্য গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। সেই কারণেই আজ সময় এসেছে আমার পরবর্তী পদক্ষেপ সম্বন্ধে সিদ্ধান্ত নেওয়ার জন্য। আমি ভাগ্যবান যে কয়েকদিন আগে 50 বছর পূর্ণ করেছি। আর কয়েকজন বলতেই পারেন যে এটা আমার জন্য নতুন ইনিংসের সূচনা।
আমি এই সফরকে আমার জীবনের পরবর্তী ইনিংস হিসেবেই দেখছি। আমি পুরানো বছরগুলিকে স্মরণ না করিয়ে পারছি না। গত তিন দশক ধরে আমি আমার রাজ্যের মানুষের ভালোর জন্য, এই মহান পশ্চিমবঙ্গের জন্য কাজ করতে পেরে দারুণ ভাবে সম্মানিত হয়েছি এবং সুবিধা পেয়েছি। সেই আমার কলেজের দিনগুলি থেকে আমার সহ-নাগরিকরা আমার উপর আস্থা রেখেছেন। আর আমাকে তাঁদের সর্বতোভাবে সেবা করার সুযোগ দিয়েছেন। আমি বিনম্রভাবে এবং আনন্দের সঙ্গে সমস্ত কাজ করেছি এবং সব সময় তাঁদের স্বার্থকে নিজের স্বার্থের ঊর্ধ্বে স্থান দিয়েছি।
আরও পড়ুন : শুভেন্দুময় অমিত-সভা, 'তোলাবাজ ভাইপো' হটিয়ে বাংলা বদলের ডাক
আমার পুরো কেরিয়ারে আমি খুবই সৌভাগ্যবান যে তাঁদের সেবা করার জন্য মানুষ আমাকে বারবার বেছে নিয়েছেন। আর এই অফুরান ভালোবাসার জন্যই আমি সাফল্যের শিখরে পৌঁছাতে পেরেছি। মানুষের দ্বারা নির্বাচিত সরকারের একজন মন্ত্রী হিসেবে তাঁদের সেবা করার সুযোগ পেয়েও আমি সম্মানিত।
আমার পুরো রাজনৈতিক জীবনে আমার সমস্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় একমাত্র যে বিষয়টির দিকে লক্ষ্য রেখেছি, তা হল আমি যাতে আমার সেরা যোগ্যতা দিয়ে আমার সহ নাগরিকদের সেবা করতে পারি। তবে একটা দিক যা আমার রাজনৈতিক কেরিয়ারে একই থেকেছে, তা হল আরও ভালো সমাজ গড়ার জন্য আমাদের আদর্শকে সামনে রেখে চলেছি।
যখন আমরা বামফ্রন্টের বিরুদ্ধে লড়াই করছিলাম, তখন মূল লড়াই ছিল বামপন্থী সরকারের গরিব বিরোধী ও জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে। ভূমি উচ্ছেদ প্রতিরোধ কমিটির মাধ্যমে নন্দীগ্রাম বিক্ষোভের সময় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে মানুষের কাজে আসার জন্য আমরা সম্মানিত। তখন আমাদের লড়াই কোনও ব্যক্তি বিশেষের বিরুদ্ধে ছিল না। কিন্তু গোটা ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ছিল, যা তৈরি করেছিলেন কিছু মানুষ। যাঁরা একেবারে সাধারণ গরিব ও ভূমিহীন মানুষের জীবনকে কঠিন করে তুলছিলেন।
আরও পড়ুন : মেদিনীপুরের ময়দানেই গেরুয়া শুভেন্দুর নব-উত্থান
অনেক আশা নিয়ে আমরা বামপন্থী সরকারকে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছি। আর শান্তিপূর্ণভাবে একটা নতুন সরকার প্রতিষ্ঠা করা হয়। একটা সরকার যা আমাদের স্বার্থরক্ষার কাজ করবে বলে আশা করা হয়েছিল। আমাদের স্বপ্নের পশ্চিমবঙ্গ গড়ে তোলার লক্ষ্যপূরণ করতে সরকার সমর্থ হবে বলেই মনে করেছিলাম।
এমন একটা পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করতে চাওয়া হয়েছিল, যার জন্য আমাদের পূর্বপুরুষরা গর্ব অনুভব করবেন। এমন একটা পশ্চিমবঙ্গ তৈরি করতে চাওয়া হয়েছিল, যা দেখে স্বর্গের দুয়ার থেকে আমাদের স্বাধীনতা সংগ্রামীরা গর্বের সঙ্গে আনন্দ বোধ করবেন। এমন একটা পশ্চিমবঙ্গ গড়তে চাওয়া হয়েছিল, যা গর্ব ও আনন্দের সঙ্গে আমাদের পরবর্তী প্রজন্মের হাতে তুলে দেওয়া যেত। এমন একটা পশ্চিমবঙ্গ গড়ে তুলতে চাওয়া হয়েছিল, যেখানে গুরুদেব রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের সেই কথাকে উপরে তুলে ধরা যায় : আমার সোনার বাংলা।
এর মধ্যে দশ বছর কেটে গিয়েছে। এর মধ্যে একটা দশক পেরিয়ে গেলেও আমাদের ভাই ও বোনেদের সমস্যা একই থেকে গিয়েছে। দুঃখজনক হলেও অনেক ক্ষেত্রে তা আরও খারাপ হয়ে গিয়েছে। কিন্তু স্থবিরতা কোনও গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার জন্য উচিত নয়। এই সমস্যাগুলি সহজেই প্রশাসনিক পরিকাঠামোর দ্বারা নিরসন করা যেত। দুঃখজনক হলেও এখানেই আমরা ব্যর্থ হয়েছি। অত্যন্ত খারাপ ও অসুস্থ উদাহরণ তৈরি করেছে তৃণমূল কংগ্রেস। সেই দল যেখানে আমরা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে লড়াই করেছি।
আরও পড়ুন : দক্ষ সংগঠক হলেও শুভেন্দু কি কোনওদিন মমতার ঘনিষ্ঠ বৃত্তে ছিলেন ?
পশ্চিমবঙ্গ এবং তৃণমূল কংগ্রেস কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয়। পশ্চিমবঙ্গ মহান মানুষদের ভূমি, যাঁরা স্বর্গত হয়েছেন এবং পশ্চিমবঙ্গ তাঁদের স্বাধীনতা সংগ্রামের মাটি। পশ্চিমবঙ্গ তাঁদের মায়ের জন্য, মাটির জন্য এবং তাঁদের মানুষের জন্য। এটা এমন একটা রাজ্য যার জন্য আমরা গর্ব অনুভব করি। যা তৈরি করে দিয়ে গিয়েছেন অনেক মহান ব্যক্তি। যাঁরা অবিরাম ও টানা কঠোর পরিশ্রম করে গিয়েছেন। রাজ্যের মহান পুত্র ও কন্যারা তাঁদের ভালো ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও আশায় জলাঞ্জলি দিয়েছেন তাঁদের সবকিছু। এই মাটি তাঁদের রক্ত, ঘাম ও চোখের জলেরই যে ফল, সেই বিষয়ে আমি পুরোপুরি অবহিত।...
এছাড়া তিনি দল ছাড়ার কারণ হিসেবে নাম না করে তৃণমূল শীর্ষস্তরের নেতাদের এবং ভোটকুশলী প্রশান্ত কিশোরকে আক্রমণ করেছেন। তৃণমূল এখন ব্যক্তিস্বার্থে চলছে বলেও তিনি দাবি করেছেন ওই চিঠিতে।