ময়না, 16 এপ্রিল : পুলিশি সন্ত্রাসের অভিযোগকে কেন্দ্র করে আজ ভোর রাতে পুলিশ ও অপর এক পক্ষের সংঘর্ষের ঘটনায় রণক্ষেত্র হয়ে ওঠে ময়নার বাকচা। বোমাবাজির পাশাপাশি মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের গাড়ি সহ মোট পাঁচটি পুলিশ গাড়ি ভাঙচুর করা হয়। চণ্ডীপুর থানার OC ইমরান মোল্লা সহ চার পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটিয়ে কোনওমতে পরিস্থিতি সামাল দেয়। BJP-র অভিযোগ, পুলিশের পোশাকে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী গ্রামে তাণ্ডব চালায়। তাদের সঙ্গ দেয় পুলিশও। সাধারণ মানুষের উপর অত্যাচার চালানো হয়। তখন প্রতিরোধ গড়ে তোলে মানুষজন। যদিও পুলিশ সূত্রে খবর, BJP পরিকল্পিতভাবে পুলিশের উপর এই হামলা চালিয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে খবর, পুলিশ ও তৃণমূল সাধারণ মানুষের উপর হামলা চালিয়েছে, এই খবর চাউর কয়েক হাজার মানুষ পুলিশ ক্যাম্প ঘিরে ফেলে। এরপর পুলিশের সঙ্গে তাঁদের সংঘর্ষ শুরু হয়। পুলিশের ক্যাম্প থেকে বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি করা হয় বলে অভিযোগ। এরপর বিক্ষোভকারীরা পালটা বোমাবাজি শুরু করে। পরিস্থিতি সামাল দিতে পুলিশ কাঁদানে গ্যাসের সেল ফাটায়। ভোররাতে জেলার বিভিন্ন প্রান্ত থেকে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে RAF ও কমব্যাট ফোর্স পৌঁছে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দুই BJP নেতাকে আটক করা হয়েছে।
BJP-র অভিযোগ, পুলিশের পোশাকে তৃণমূলের গুন্ডাবাহিনী ও পুলিশ রাতভর গ্রামে তাণ্ডব চালিয়েছে। গ্রামবাসীদের লক্ষ্য করে বোমাবাজি করার পাশাপাশি কাঁদানে গ্যাসের সেল ছোড়া হয়েছে। তমলুকের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (হেড কোয়ার্টার) শিবশঙ্কর পাত্র বলেন, "সোমবার রাতে বাকচায় বিভিন্ন ঘটনায় অভিযুক্তদের খোঁজে SDPO-র পুলিশ তল্লাশি করছিল। এরপর ভোররাতে কিছু দুষ্কৃতী পরিকল্পনা করে পুলিশ ক্যাম্প ঘেরাও করে আক্রমণ করে। বোমাবাজি করা হয়। কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদের পর কয়েকজনকে আটক করা হয়েছে।"
প্রসঙ্গত, পঞ্চায়েত ভোটকে কেন্দ্র করে বাকচায় তৃণমূলের গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব বর্তমানে BJP ও তৃণমূলের রাজনৈতিক সংঘর্ষের রূপ নিয়েছে। এলাকার বহু তৃণমূল নেতা ভয়ে এলাকা ছেড়ে বাইরে রয়েছে। সোমবার সকালে এলাকায় সাবমার্সিবল পাম্প বসানোকে কেন্দ্র করে উত্তেজনা ছড়ায়। BJP কর্মীরা নির্বাচনী বিধিভঙ্গের অভিযোগ করে পাম্প বসানোর কাজ বন্ধ করে দেয়। এই ঘটনার পর তৃণমূলের তরফে মারধরের অভিযোগ দায়ের করা হয়। সোমবার রাতে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করতে মহকুমা পুলিশ আধিকারিকের নেতৃত্বে চারটি থানার পুলিশ বাহিনী বাকচায় ঢোকে। অভিযোগ, রাত দু'টো পর্যন্ত তৃণমূলের দুষ্কৃতীদের নিয়ে পুলিশ BJP নেতা কর্মীদের বাড়িতে ভাঙচুর চালায়।
BJP নেতা পঞ্চানন মণ্ডল বলেন, "গত ডিসেম্বর মাস থেকে এলাকায় পুলিশ ও তৃণমূলের যৌথ সন্ত্রাস চলছে। বাকচায় BJP-র শক্ত ঘাঁটি হওয়ায় ভোটের আগে তৃণমূল পুলিশকে সঙ্গে নিয়ে এলাকার দখল নিতে চাইছে।"
তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সুব্রত মালাকার বলেন, "বাকচায় BJP-র অত্যাচারে 100-র বেশি তৃণমূল কর্মী ঘরছাড়া। দেওয়াল লিখন করা যাচ্ছে না। নিয়ম মেনে সাবমার্সিবল পাম্প বসানোর সময় আমাদের পঞ্চায়েত প্রধানের উপর হামলা চালানো হয়। সেই ঘটনায় জড়িতদের পুলিশ ধরতে যেতেই তাঁদের উপরও হামলা করা হয়েছে। পুলিশ কোনওমতে প্রাণে বেঁচেছে। BJP এলাকায় অস্ত্র ভাণ্ডার বানিয়েছে। অবিলম্বে অভিযুক্তদের গ্রেপ্তার করে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের দাবি আমরা সর্বস্তরে জানিয়েছি।"