ETV Bharat / state

লাল ফিতের ফাঁসে আটকে ফাইল, অথৈ জলে ধাপার পরিবেশবান্ধব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প - DHAPA WASTE MANAGEMENT PROJECT

চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে জমি খালি করা হবে । তারপর পরিবেশবান্ধব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প হবে । ক্ষতিপূরণ বাবদ খরচ হবে 55 কোটি টাকা ।

Dhapa waste management project
ধাপার পরিবেশবান্ধব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণ প্রকল্প অনিশ্চয়তার মুখে (নিজস্ব ছবি)
author img

By ETV Bharat Bangla Team

Published : Jan 8, 2025, 5:29 PM IST

কলকাতা, 8 জানুয়ারি: ধাপায় এখনই উপচে পড়ছে জঞ্জাল । ছড়াচ্ছে দূষণ । দূষণ ঠেকাতে বিকল্প পরিবেশবান্ধব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের পরিকল্পনাও তৈরি । কলকাতা পুরনিগমের ধাপা সংলগ্ন 73 হেক্টর জমির উপরেই হবে সেই কর্মকাণ্ড । তবে কবে সেই কাজ শুরু হবে এখন সেটাই বড় প্রশ্ন ।

পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জমিতে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরনিগম কর্তৃপক্ষ । সেই মতো তালিকাও তৈরি । ক্ষতিপূরণ দিতে খরচ হবে 55 কোটি টাকা । সেই ফাইল রাজ্যের অর্থ দফতরে বছর খানেকের বেশি সময় ধরে অজানা কারণেই আটকে আছে বলে জানা গিয়েছে পুরনিগম সূত্রে ।

অর্থ দফতরের কাছে গোটা বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পাঠানো হলেও সম্প্রতি ফের নতুন করে কাগজপত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে ৷ ফলে জমি হাতে কবে পাবে, তারপর প্রকল্প, সবটাই এখন অথৈ জলে । কলকাতা পুরনিগমের তরফে জানা গিয়েছে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি আইন অনুসারে, এই এলাকার জমিতে 2025 সালের পর প্রকল্প নির্মাণে আইনি জটিলতা আসতে পারে । ফলে সেই জট কাটাতে আরও দীর্ঘ সময় নষ্ট হবে বলেই আশঙ্কা ।

ধাপার ধারণ ক্ষমতার থেকে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত 90 মেট্রিক টন বেশি আবর্জনা এসে জমা হচ্ছে । শুধু তাই নয়, কলকাতা পুরনিগম ছাড়াও বিধাননগর, নিউটাউন, এমনকি পানিহাটির জঞ্জাল প্রতিদিন এখানে পড়ছে । ফলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা অতি কঠিন বিষয় হয়ে উঠছে জঞ্জাল সাফাই বিভাগের কাছে । ফলে চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজে হাত না দিলে গোটা পরিকল্পনা শুধু নয়, পরিষেবাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে ।

বর্তমানে যেখানে জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে, পরিবেশ আদালত সেখানে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের নির্দেশ দিয়েছে । পাশাপাশি সেখানে যাতে কেউ আর জঞ্জাল না ফেলে তার জন্য বিকল্প জায়গা করতেও বলা হয়েছে । পুরনিগম সূত্রে খবর, সেই মতো একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিছুটা জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণ করা গিয়েছে । তবে জঞ্জাল এখনও আছে বিরাট পরিমাণে । এখন 60 একর জমিতে এক তৃতীয়াংশ জমি বায়ো মাইনিং হয়েছে । একটি সংস্থা 15-20 লক্ষ মেট্রিকটন জঞ্জাল পৃথকীকরণ করেছে । তবে এখনও ধাপার আবর্জনার পাহাড় কমাতে বহু পদক্ষেপ বাকি । আর এই পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি দফতরের লাল ফিতের ফাঁস ।

এই প্রসঙ্গেই কলকাতা পুরনিগমের এক আধিকারিকের বক্তব্য, "কমবেশি 850 জনের তালিকা তৈরি হয়েছে । ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ৷ তার জন্য খরচ হবে কমবেশি 55 কোটি টাকা । আমরা অর্থ দফতরের কাছে ফাইল পাঠিয়েছি । তারা বেশকিছু বিষয় জানতে চেয়েছিল সেই উত্তর দিয়েছি । তবে এখনও সেই টাকা আসেনি । ক্ষতিপূরণ দিয়ে তারপর ওই জমি খালি করা হবে । তারপর প্রকল্প । আমাদের কাছে ফের অর্থ দফতরের তরফে কাগজপত্র চেয়েছে ৷ আবার আমরা কাগজপত্র পাঠাব ।"

এই প্রকল্প না হলে শহরের উপকন্ঠে ধাপার মতো জায়গায় জঞ্জালের পাহাড় থেকে ভয়াবহ দূষণ ছড়াবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না । ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুততার সঙ্গে করাই জরুরি বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা । এই প্রসঙ্গে পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, "বর্তমানে দূষণে জেরবার পরিস্থিতিতে বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কেউ যদি মনে করেন বায়ু দূষণের সঙ্গে জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের যোগ নেই তাহলে ভুল । অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগ আছে । জঞ্জাল দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে বা প্রক্রিয়াকরণ না হলে সেখানে মিথেন উৎপন্ন হয় । যা বাতাসে মিশে মানব শরীরে নানা সমস্যা তৈরি করে।"

তাঁর কথায়, "শুধু মিথেন নয়, এমন নানা ক্ষতিকারক রাসায়নিক তৈরি হয় যা বাতাসে মিশে মানব শরীরে গেলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে । তাই নীতি নির্ধারকদের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ।"

কলকাতা, 8 জানুয়ারি: ধাপায় এখনই উপচে পড়ছে জঞ্জাল । ছড়াচ্ছে দূষণ । দূষণ ঠেকাতে বিকল্প পরিবেশবান্ধব বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের পরিকল্পনাও তৈরি । কলকাতা পুরনিগমের ধাপা সংলগ্ন 73 হেক্টর জমির উপরেই হবে সেই কর্মকাণ্ড । তবে কবে সেই কাজ শুরু হবে এখন সেটাই বড় প্রশ্ন ।

পুরনিগম সূত্রে জানা গিয়েছে, এই জমিতে চাষিদের ক্ষতিপূরণ দিয়ে উঠিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুরনিগম কর্তৃপক্ষ । সেই মতো তালিকাও তৈরি । ক্ষতিপূরণ দিতে খরচ হবে 55 কোটি টাকা । সেই ফাইল রাজ্যের অর্থ দফতরে বছর খানেকের বেশি সময় ধরে অজানা কারণেই আটকে আছে বলে জানা গিয়েছে পুরনিগম সূত্রে ।

অর্থ দফতরের কাছে গোটা বিষয়ে পুঙ্খানুপুঙ্খ তথ্য পাঠানো হলেও সম্প্রতি ফের নতুন করে কাগজপত্র চেয়ে পাঠানো হয়েছে ৷ ফলে জমি হাতে কবে পাবে, তারপর প্রকল্প, সবটাই এখন অথৈ জলে । কলকাতা পুরনিগমের তরফে জানা গিয়েছে, পূর্ব কলকাতা জলাভূমি আইন অনুসারে, এই এলাকার জমিতে 2025 সালের পর প্রকল্প নির্মাণে আইনি জটিলতা আসতে পারে । ফলে সেই জট কাটাতে আরও দীর্ঘ সময় নষ্ট হবে বলেই আশঙ্কা ।

ধাপার ধারণ ক্ষমতার থেকে ইতিমধ্যে অতিরিক্ত 90 মেট্রিক টন বেশি আবর্জনা এসে জমা হচ্ছে । শুধু তাই নয়, কলকাতা পুরনিগম ছাড়াও বিধাননগর, নিউটাউন, এমনকি পানিহাটির জঞ্জাল প্রতিদিন এখানে পড়ছে । ফলে দূষণ নিয়ন্ত্রণ করা অতি কঠিন বিষয় হয়ে উঠছে জঞ্জাল সাফাই বিভাগের কাছে । ফলে চলতি বছরের মধ্যে প্রকল্পের কাজে হাত না দিলে গোটা পরিকল্পনা শুধু নয়, পরিষেবাও বিপর্যস্ত হয়ে পড়বে ।

বর্তমানে যেখানে জঞ্জাল ফেলা হচ্ছে, পরিবেশ আদালত সেখানে বর্জ্য প্রক্রিয়াকরণের নির্দেশ দিয়েছে । পাশাপাশি সেখানে যাতে কেউ আর জঞ্জাল না ফেলে তার জন্য বিকল্প জায়গা করতেও বলা হয়েছে । পুরনিগম সূত্রে খবর, সেই মতো একাধিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে কিছুটা জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণ করা গিয়েছে । তবে জঞ্জাল এখনও আছে বিরাট পরিমাণে । এখন 60 একর জমিতে এক তৃতীয়াংশ জমি বায়ো মাইনিং হয়েছে । একটি সংস্থা 15-20 লক্ষ মেট্রিকটন জঞ্জাল পৃথকীকরণ করেছে । তবে এখনও ধাপার আবর্জনার পাহাড় কমাতে বহু পদক্ষেপ বাকি । আর এই পরিস্থিতিতে বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ করায় অন্তরায় হয়ে দাঁড়িয়েছে সরকারি দফতরের লাল ফিতের ফাঁস ।

এই প্রসঙ্গেই কলকাতা পুরনিগমের এক আধিকারিকের বক্তব্য, "কমবেশি 850 জনের তালিকা তৈরি হয়েছে । ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে ৷ তার জন্য খরচ হবে কমবেশি 55 কোটি টাকা । আমরা অর্থ দফতরের কাছে ফাইল পাঠিয়েছি । তারা বেশকিছু বিষয় জানতে চেয়েছিল সেই উত্তর দিয়েছি । তবে এখনও সেই টাকা আসেনি । ক্ষতিপূরণ দিয়ে তারপর ওই জমি খালি করা হবে । তারপর প্রকল্প । আমাদের কাছে ফের অর্থ দফতরের তরফে কাগজপত্র চেয়েছে ৷ আবার আমরা কাগজপত্র পাঠাব ।"

এই প্রকল্প না হলে শহরের উপকন্ঠে ধাপার মতো জায়গায় জঞ্জালের পাহাড় থেকে ভয়াবহ দূষণ ছড়াবে, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না । ফলে প্রকল্প বাস্তবায়ন দ্রুততার সঙ্গে করাই জরুরি বলে মনে করেন পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা । এই প্রসঙ্গে পরিবেশ বিজ্ঞানী স্বাতী নন্দী চক্রবর্তী বলেন, "বর্তমানে দূষণে জেরবার পরিস্থিতিতে বর্জ্যের প্রক্রিয়াকরণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কেউ যদি মনে করেন বায়ু দূষণের সঙ্গে জঞ্জাল প্রক্রিয়াকরণের যোগ নেই তাহলে ভুল । অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ যোগ আছে । জঞ্জাল দীর্ঘদিন পড়ে থাকলে বা প্রক্রিয়াকরণ না হলে সেখানে মিথেন উৎপন্ন হয় । যা বাতাসে মিশে মানব শরীরে নানা সমস্যা তৈরি করে।"

তাঁর কথায়, "শুধু মিথেন নয়, এমন নানা ক্ষতিকারক রাসায়নিক তৈরি হয় যা বাতাসে মিশে মানব শরীরে গেলে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি করে । তাই নীতি নির্ধারকদের উচিত বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে দ্রুততার সঙ্গে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা ।"

ETV Bharat Logo

Copyright © 2025 Ushodaya Enterprises Pvt. Ltd., All Rights Reserved.