পাঁশকুড়া, 9 ডিসেম্বর: পাঁশকুড়ায় তৃণমূল নেতা খুনের ঘটনায় দু'মাস পরও অধরা খুনের সাথে জড়িত দুই তৃণমূল কর্মী । অভিযুক্ত দুই স্থানীয় তৃণমূল কর্মী শীতল মান্না ও গোলাম মেহেন্দির (কালু) । এবার অভিযুক্তদের খোঁজে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করে মাইসোরা এলাকায় পোস্টার টাঙাল পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ ।
পাঁশকুড়া ব্লকের কার্যকরী সভাপতি তথা পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি ছিলেন কুরবান শাহ । দুর্গাপুজোর নবমীর রাতে নিজের দলীয় কার্যালয়ে খুন হন তিনি ৷ পয়েন্ট ব্ল্যাঙ্ক রেঞ্জ থেকে তাঁকে গুলি করে দুষ্কৃতীরা । ঘটনাস্থানে মৃত্যু হয় কুরবানের । খুনে জড়িত সন্দেহে 3 নভেম্বর মেচেদা স্টেশন সংলগ্ন এলাকা থেকে স্থানীয় BJP নেতা আনিসুর রহমানকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ । আনিসুর ছাড়াও আরও সাত জনকে ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার করেছে পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পুলিশ । ধৃতদের মধ্যে রয়েছে বেশ কয়েকজন স্থানীয় তৃণমূল কর্মীও । কিন্তু এখনও পর্যন্ত শীতল ও কালুকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ । তাই তাদের ধরতেই এবার ছবি সহ নাম ঠিকানা দিয়ে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করল পুলিশ ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, তৃণমূল নেতা কুরবানের সাথে দীর্ঘদিন ধরেই বিবাদ চলছিল শীতল ও কালুর । বিবাদের জেরে কুরবানের লোকজন একাধিকবার দু'জনকেই মারধরও করেছিল । যদিও পরবর্তীকালে সেই সমস্যা মিটে যায় । শীতলের স্ত্রী কাকলি মান্নাকে মাইসোরা গ্রাম পঞ্চায়েত থেকে দলীয় প্রার্থী করা হয় । কিন্তু অতীতের আক্রোশ থেকেই কুরবানকে খুনের ষড়যন্ত্র করে অভিযুক্তরা । খুন করতে সুপারি কিলার ভাড়া করে তারা । খড়গপুর থেকে থেকে তসলিম আরিফ ওরফে রাজাকে শুটার হিসেবে ভাড়া করা হয় । রাজাকে সবার চোখের আড়ালে রাখতে রাজশহর বাজার এলাকার দোকানে দু'দিন ধরে লুকিয়ে রেখেছিল শীতল । সেখানেই কুরবানকে খুনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করে অভিযুক্তরা । ঘটনার পুনর্নির্মাণের সময় পুলিশকে এমনই জানিয়েছেন কুরবান খুনের মূল অভিযুক্ত তথা শুটার রাজা । খুনি যে নিজের এলাকারই এবং নিজের দলের তা জানার পর শিউরে উঠছেন কুরবানের পরিবারের সদস্যরা । তাঁদের দাবি, দ্রুত পলাতক দুই অভিযুক্তকে গ্রেপ্তার করুক পুলিশ । অভিযুক্তদের ধরতে পারলেই তৃণমূল নেতা খুনে আর কারা জড়িত রয়েছে তাদের নাম প্রকাশে আসবে বলে মনে করছে কুরবানের পরিবার ।
কুরবানের দাদা তৃণমূল নেতা আবজল আলি শাহ বলেন, "পাঁশকুড়া থানার পুলিশ দীর্ঘদিন ধরে চেষ্টা করলেও এলাকারই ওই দুই অভিযুক্তকে এখনও ধরতে পারেনি । যে কারণে আমরাও খুব দুশ্চিন্তার মধ্যে রয়েছি । আমরা যখন বাইরে যাতায়াত করি তখনও আমরা আতঙ্কে থাকি । পুলিশ যত দ্রুত সম্ভব ওদের গ্রেপ্তার করুক । ওদের কাছ থেকে আমাদের এলাকায় আর কারা এই খুনের সাথে জড়িত রয়েছে তা জানা যাবে । সেই সঙ্গে কেনই বা ভাইকে খুন করা হল তাও প্রকাশ্যে আসবে ।"
অন্যদিকে, গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের কারণেই খুন হয়েছিল তৃণমূল নেতা প্রথম থেকেই দাবি করে এসেছিল BJP। তৃণমূল নেতাদের নামে পুলিশের তরফে পোস্টার টাঙানোকে কেন্দ্র করে কটাক্ষ করতে ছাড়েননি BJP-র তমলুক সাংগঠনিক জেলার সভাপতি নবারুণ নায়েক । তিনি বলেন, "প্রথম দিন থেকেই আমি বলেছিলাম দলীয় কোন্দলের ফলেই খুন হয়েছেন কুরবান । কিছু সৎ জেলার পুলিশ আধিকারিকরা একথা সে সময় স্বীকার করে নিয়েছিলেন । শেষ পর্যন্ত তৃণমূল কর্মীদেরই নাম উঠে এল । আজ তাদের নামে পুলিশকে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করতে হচ্ছে । আমাদের দাবি আনিসুর রহমানকে অহেতুক জেলে আটকে রাখা আর চলবে না । অবিলম্বে তাকে জেল থেকে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করুক পুলিশ আধিকারিকরা ।"