কোলাঘাট , 6 ফেব্রুয়ারি : কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক আধিকারিককে মারধরের অভিযোগ । এ ঘটনায় মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানা ও শান্তিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান শেখ সেলিমেকে সাসপেন্ড ও শোকজ় করল তৃণমূল কংগ্রেস ।
এ প্রসঙ্গে জেলা তৃণমূলের সভাপতি তথা কাঁথির সাংসদ শিশির অধিকারী বলেন, "কোলাঘাট থার্মাল পাওয়ার প্রোজেক্ট হল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্বপ্নের প্রোজেক্ট । রাজ্যে আজ বিদ্যুৎ উৎবৃত্ত কোলাঘাটের কারণে । সেখানে এ ঘটনা কোনওভাবেই মেনে নেওয়া যাবে না । দিবাকর জানা ও শেখ সেলিমের বিরুদ্ধে অভিযোগ এসেছে । ভিডিয়ো আমরা পেয়েছি । থার্মাল পাওয়ারের কর্মীদের এমনভাবে আহত করেছে যে কলকাতায় চিকিৎসা করাতে হচ্ছে । আমরা সমস্তরকম সহযোগিতা করছি । অভিযোগটি পাওয়ার পরে দলের রাজ্য সভাপতির নির্দেশে দু'জনকে সাসপেন্ড করা হয়েছে । সঙ্গে শোকজ়ও করা হয়েছে । সাতদিনের মধ্যে উওর দিতে বলা হয়েছে তাদের ।"
প্রসঙ্গত ,তমলুকের শহীদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি দিবাকর জানার সঙ্গে অস্থায়ী কর্মীদের একটি বৈঠক ছিল । সেই কারণে আজ দুপুর নাগাদ তিনি প্লান্টের ভিতরে ঢোকেন । দলীয় কর্মীরাও তাঁর সঙ্গে ছিল । অভিযোগ, সেই সময় প্লান্টের নিরাপত্তারক্ষীরা দায়িত্ব অনুযায়ী নেতাদের গাড়িগুলি পরীক্ষা করতে যান । আর তারই প্রতিবাদ জানান তৃণমূল নেতা দিবাকর জানা ও তাঁর অনুগামীরা । শুরু হয় দু'পক্ষের মধ্যে বচসা । অভিযোগ, নিরাপত্তারক্ষীরা তাঁদের কর্তব্যে অনড় থাকায় তৃণমূল নেতার অনুগামীরা নিরাপত্তারক্ষীকে মারধর করতে শুরু করে । প্লান্টের অফিস চত্বরে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে দু'পক্ষকেই থামানোর জন্য ছুটে আসেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের হিউম্যান রিসোর্স বিভাগের ম্যানেজার সিদ্ধার্থ ঘোষ । তখনই দিবাকর জানা ও তাঁর অনুগামীরা তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ওই আধিকারিককে মারধর করেন বলে অভিযোগ । এরপরই অভিযুক্তরা ঘটনাস্থান থেকে পালিয়ে যান । পরে সিদ্ধার্থবাবুকে উদ্ধার করে প্রথমে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসার জন্য ভরতি করা হয় । অবস্থার অবনতি হওয়ায় বর্তমানে কলকাতার এক বেসরকারি হাসপাতালে তাঁকে স্থানান্তরিত করা হয়েছে । অপরদিকে এই ঘটনায় তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের অস্থায়ী কর্মী তথা তৃণমূলের শেখ সেলিম নামের এক সদস্য আহত হয়েছেন । তিনি বর্তমানে তমলুকের পাইকপাড়া উপস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন ।
যদিও তৃণমূল নেতা দিবাকর জানা অভিযোগ অস্বীকার করেন । বলেন, "তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকদের নিয়ে আগামী 9 তারিখ নাগরিকত্ব সংশোধনী আইনের বিরুদ্ধে একটি মিছিল সংঘটিত করার কথা রয়েছে । আমরা তারই একটি প্রস্তুতি সভা করার জন্য প্লান্টের ভিতরে গেছিলাম । ঢোকার সময় একবার গাড়ি পরীক্ষা করা হয় । বেরোনোর সময় নিরাপত্তারক্ষীরা পুনরায় গাড়ি পরীক্ষা করতে এলে দলীয় কর্মীরা আপত্তি জানায় । তখনই নিরাপত্তারক্ষীরা আমাদের দলীয় কর্মীদের রুল দিয়ে মারধর করে । কর্মীরা উত্তেজিত হয়ে উঠলে এই ঘটনা ঘটে । আমরা দীর্ঘদিন ধরেই তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে যাওয়া আসা করছিলাম । আগে এইভাবে আমাদের গাড়ি পরীক্ষা করা হয়নি ।"
BJP-র তমলুক সাংগঠনিক জেলা সভাপতি নবারুণ নায়েক এ বিষয়ে বলেন , "দীর্ঘদিন ধরেই কাঁথির( অধিকারী পরিবার) নেতারা তমলুকের এই নেতাকে মাথায় তুলে রেখেছিলেন । শুনেছি কিছুদিন ধরেই কাঁথিতে নৈবদ্য (টাকা) কম যাওয়ার কারণে তাঁকে মাথা থেকে নামিয়েছেন । নতুন G.M কড়া হওয়ায় কারণে প্রজেক্ট থেকে তেমনভাবে তোলাবাজি করতে না পারার কারণেই আধিকারিককে মারধর করেছে দিবাকর জানা । আমরা চাই জেলার নতুন পুলিশ সুপার কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করুক ওই তৃণমূল নেতার বিরুদ্ধে ।"